বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকে আলোচনা করতে চাই তাহাজ্জুদ নামাজে কোন সূরা পড়তে হয় বা তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা, তাহাজ্জুদ নামাজ কি প্রতিদিন পড়তে হয় এবং তাহাজ্জুদ নামাজ কি অন্ধকারে পড়তে হয় সে সম্পর্কে।
Table of Contents
Toggleতাহাজ্জুদ নামাজে কোন সূরা পড়তে হয়
ফরয নামায ব্যতীত অন্যান্য (ওয়াজিব, সুন্নাত, নফল) নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা আল-ফাতিহা পড়ার পর যে কোন সূরা বা সূরার অংশবিশেষ পড়া ওয়াজিব (বাধ্যতামূলক)। নফল নামাজের জন্য কোন সূরা নির্দিষ্ট নেই। কুরআন মজীদের যে স্থান থেকে পড়া নামাযী নিজের জন্য সহজ মনে করেন সেখান থেকে পড়বেন।
আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান রাঃ বলেন,
তিনি একদা আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রমজানের রাতের সালাত কেমন ছিল। উত্তরে তিনি বলেন, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রামাযান মাসে এবং রামাযানের বাইরে ১১ রাকাতের বেশি সালাত আদায় করতেন না। তিনি প্রথমে (২+২) চার রাকাত পড়তেন। তুমি (আবু সালামা) তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করাে না। অতঃপর তিনি (২+২) চার রাকাত পড়তেন। তুমি তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করাে না। অতঃপর তিনি তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন।
হুযাইফা রাঃ বলেন, একদা রাসূল সাঃ এক রাকাতে সূরা বাকারা, আল ইমরান ও নিসা ধীরে ধীরে পাঠ করেন।
মুসলিম ৭৭২, নাসাঈ ১০০৮, ১১৩২
তাহাজ্জুদ নামাজ কি প্রতিদিন পড়তে হয়
তাহাজ্জুদ নামাজ কখনাে ত্যাগ না করে প্রতিদিন বা নিয়মিত আদায় করা উত্তম। নির্দিষ্ট সংখ্যক রাকাত নিয়মিত পড়া মুস্তাহাব; যদি শরীর চাঙ্গা ও মন প্রফুল্ল থাকে, তাহলে দীর্ঘ কিরাত করবে; অন্যথায় হালকা কিরাতে সালাত আদায় করবে, আর কখনো ছুটে গেলে কাযা করবে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
তোমরা সে পরিমাণ আমল কর, যার সাধ্য তােমাদের রয়েছে; কারণ আল্লাহ ক্লান্ত হন না, যতক্ষণ না তোমরা ক্লান্ত হও। তিনি বলতেন: আল্লাহর নিকট সেই আমলই অধিক পছন্দনীয়; বান্দা যার ওপর নিয়মতান্ত্রিকতা বজায় রাখে, যদিও তার পরিমাণ কম হয়।
সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৭০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৮২
আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন:
হে আব্দুল্লাহ তুমি অমুকের মতো হয়াে না, সে রাতে কিয়াম করত, কিন্তু সে তা ত্যাগ করেছে।
সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৫২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১১৯
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেছেন:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন সালাত আদায় করতেন, তা তিনি নিয়মিত আদায় করা পছন্দ করতেন; যদি তার ওপর ঘুম প্রবল হত অথবা দাঁড়াতে কষ্ট হত, তাহলে তিনি দিনে বারো রাকাত সালাত আদায় করতেন।
সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৬
উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
যে ব্যক্তি তার অজিফা থেকে ঘুমিয়ে পড়ল অথবা তার কতক অবশিষ্ট রইল, সে যদি তা ফজর ও যোহর সালাতের মধ্যবর্তী সময়ে পড়ে নেয়, তাহলে তার জন্য লেখা হবে যেন সে তা রাতেই পড়েছে।
সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৭
তাহাজ্জুদ নামাজ কি অন্ধকারে পড়তে হয়
রাতের সালাত আদায় করার উদ্দেশ্য হলো বেশি বেশি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা; তাই সালাতে একাগ্রতা ও নম্রতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি; বেশি আলোতে তাহাজ্জুদ পড়লে যদি একাগ্রতায় বিঘ্নতা ঘটে তবে হালকা আলোতে তাহাজ্জুদ পড়া উত্তম হবে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বিষয়গুলো সঠিকভাবে বুঝার ও আমল করার তাওফীক দান করুক; আল্লাহুম্মা আমীন।