জানাজার নামাজের ফরজ কয়টি ও জানাজার নামাজের সুন্নাত কয়টি?

জানাজার-নামাজের-ফরজ-কয়টি-ও-জানাজার-নামাজের-সুন্নাত-কয়টি

জানাজার নামাজের ফরজ কয়টি ও জানাজার নামাজের সুন্নাত কয়টি?

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে জানাজার নামাজের ফরজ কয়টি ও জানাজার নামাজের সুন্নাত কয়টি।

জানাজার নামাজের ফরজ কয়টি

জানাজার নামাজের ফরজ ছয়টি। যথা

(১) দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা 

(২) চার তাকবীর দেওয়া 

(৩) সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করা 

(৪) দরুদ পাঠ করা 

(৫) মাইয়েতের জন্য খালেস অন্তরে দুআ করা 

(৬) সালাম ফিরানো।

জানাজার নামাজের সুন্নাত কয়টি

জানাজার নামাজের সুন্নত পাঁচটি। যথা

(১) জামাত সহকারে সালাত আদায় করা 

(২) কমপক্ষে তিনটি কাতার হওয়া 

(৩) ইমাম বা একাকী মুসল্লির জন্য পুরুষের মাথা ও মেয়েদের কোমর বরাবর দাঁড়ানো 

(৪) ফাতিহা ব্যতীত অন্য একটি সূরা এবং হাদীসে বর্ণিত দোয়া সমূহ পাঠ করা 

(৫) সালাত শেষে জানাজা উঠানাে পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকা।

ইবনুন নাজ্জার আল-ফুতুহ, শারহুল মুনতাহা (বৈরূত : দার খিযর ১৪১৯/১৯৯৮) ৩/৫৫-৬৭; নাসাঈ হা/১৯৮৭, ৮৯। 

বাকী সবই মুস্তাহাব। যদি ভুলক্রমে তিন তাকবীর হয়ে যায়, তবে পুনরায় ইমাম চতুর্থ তাকবীর দিবেন। যদি মুক্তাদীর কোন তাকবীর ছুটে যায়, তবে শেষে তাকবীর দিয়ে সালাম ফিরাবে। আর যদি না দেয় তাতেও দোষ নেই।

ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৭৭।

জানাযার পূর্বে করণীয়

জানাযার পূর্বে মৃতের জন্য প্রথম করণীয় হল তার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করা। এজন্য তার সকল সম্পদ বিক্রি করে হলেও তা করতে হবে। যদি তার কিছুই না থাকে, তাহলে তার নিকটাত্মীয়, সমাজ বা সরকার সে দায়িত্ব বহন করবে।

মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৯১৩, ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়-১১, ‘দেউলিয়া হওয়া এবং ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে অবকাশ দান’ অনুচ্ছেদ-৯।

জানাজার নামাজ বিষয়ে সতর্কতা

মহাপাপী কোন মুসলিম যেমন কোন ব্যভিচারী, মদ্যপায়ী, চোর-দস্যু-সন্ত্রাসী, আত্মঘাতি, জারজ সন্তান, কবর ও মূর্তি পূজারী, মুশরিক ও বিদআতী (যতক্ষণ না সে প্রকাশ্যে কুফরী ঘোষণা করে), আমানতের খেয়ানতকারী প্রভৃতি লােকদের জানাযা কোন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ও পরহেজগার আলেমগণ পড়বেন না। তবে সাধারণ লোকেরা পড়বেন।

বুলুগুল মারাম হা/৫৪২-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।

ঋণগ্রস্ত, আত্মহত্যাকারী ও বায়তুল মাল বা অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ কারীর জানাজা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজে পড়েননি, বরং অন্যকে পড়তে বলেন।

বুখারী, মিশকাত হা/২৯০৯; মুসলিম হা/২৩০৯, বুলুগুল মারাম হা/৫৪২; মুয়াত্তা, মিশকাত হা/৪০১১ ‘জিহাদ’ অধ্যায়, ‘গণীমত বণ্টন ও তাতে আত্মসাতের পরিণাম অনুচ্ছেদ-৭। 

এটি ছিল তার পক্ষ থেকে অন্যকে আদব শেখানোর জন্য। 

ইবনু মাজাহ হা/১৫২৬, ‘জানায়েয’ অধ্যায়-৬, আহলে কিবলার উপর সালাত’ অনুচ্ছেদ-৩১।

(১) খায়বার কিংবা হুনাইন-এর যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জনৈক সাথী বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে। লোকেরা তার উচ্চ প্রশংসা করলে রাসূল (ছাঃ) বললেন, ঐ ব্যক্তি জাহান্নামের অধিবাসী। তখন একজন গােপনে তার পিছু নিল। দেখা গেল যে, ঐ ব্যক্তি যুদ্ধের এক পর্যায়ে আহত হল। অতঃপর যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে নিজের অস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করল। তখন। লোকটি ছুটে এসে বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সবাইকে ডেকে বললেন, সত্যিকারের মুমিন ব্যতীত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। মনে রেখো অনেক লোক জান্নাতি আমল করে। কিন্তু মৃত্যুকালে জাহান্নামী হয়ে যায়। আবার অনেকে জাহান্নামের আমল করে, কিন্তু মৃত্যুকালে জান্নাতী হয়ে যায়। অতঃপর তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ এই দ্বীনকে সাহায্য করেন অনেক পাপী লোকের মাধ্যমে।

বুখারী, ফাতহুল বারী হা/৪২০২-০৩; আবু নাঈম ইছফাহানী, দালায়েলুন নবুওয়াত হা/২৫৯। 

আল্লাহ বলেন, তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি অতিশয় দয়াবান।

নিসা ৪/২৯

(২) খায়বার যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথীদের মধ্যে একজন নিহত হলে তিনি বলেন, তোমরা তোমাদের সাথীর জানাজা পড়। এতে তাদের মন খারাপ হলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের বললেন, তোমাদের সাথীটি আল্লাহর রাস্তায় খেয়ানত করেছে। পরে অনুসন্ধানে তার থলিতে ইহুদিদের কণ্ঠহারের একটি ছিদ্র যুক্ত ছোট পাথরের লকেট পাওয়া গেল (যা গণীমতের মাল ছিল)। যার মূল্য দুই দিরহামেরও কম।

মুয়াত্তা, আবু দাউদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৪০১১; ইবনু মাজাহ হা/২৮৪৮, সনদ ছহীহ।

(৩) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে হাদিয়া হিসাবে পাঠানো গোলাম মিদ‘আম খায়বার যুদ্ধে নিহত হলে লোকেরা তার জান্নাতের সুসংবাদ বলতে থাকলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) রাগতস্বরে বলেন, কখনোই না। আল্লাহর কসম! গণিমতের মাল থেকে যে চাদরটি সে চুরি করেছে, তা তাকে আগুনে পোড়াবে।

মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩৯৯৭, ‘জিহাদ’ অধ্যায়-১৯, অনুচ্ছেদ-৭।

(৪) অন্য হাদীসে এসেছে, ‘মুমিনের নক্স তার ঋণের সাথে লটকানো থাকে এবং সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না তার ঋণ পরিশোধ করা হয়।

তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, দারেমী, আহমাদ, মিশকাত হা/২৯১৫, ২৯২৯।

(৫) যারা শরীক ফাঁকি দেয় কিংবা শক্তির জোরে বা ছল-চাতুরী করে অন্যের জমি ও সম্পদ আত্মসাৎ করে, তাদের জানাযা কোন পরহেজগার আলেমের পড়া উচিত নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো জমি দখল করে, কিয়ামতের দিন সাত তবক জমিন তার গলায় বেড়ী রূপে পরিয়ে দেওয়া হবে।

মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৯৩৮, ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়-১১, অনুচ্ছেদ-১১।

অন্য বর্ণনায় এসেছে, তাকে কিয়ামতের দিন ঐ মাটির বোঝা মাথায় বহন করে চলতে বাধ্য করা হবে।

আহমাদ, মিশকাত হা/২৯৫৯, ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়-১১, অনুচ্ছেদ-১১; ছহীহাহ হা/২৪২। 

উপরোক্ত ব্যক্তিগণ কবীরা গোনাহগার। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত তরককারী ব্যক্তিকে হাদিসে ‘কাফের’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

মুসলিম, মিশকাত হা/৫৬৯; তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মিশকাত হা/৫৭৪।

তাহলে কিভাবে তার জানাযা পড়া যেতে পারে? আল্লাহ আমাদের হেদায়েত করুন- আমীন।

জানাজার নামাজের ফরজ কয়টি, জানাজার নামাজের সুন্নাত কয়টি, জানাজার নামাজের ফরজ গুলো কি কি, জানাযা নামাজের ফরজ কয়টি ও কি কি, জানাযার নামাজের ফরজ ও ওয়াজিব, জানাযার নামাজের ফরজ কয়টি

জানাযার নামাজের ফরজ ও সুন্নাত – Jagonews24

জানাযার ফরজ কয়টি ও কী কী? – Quora

জানাযার ফরজ কয়টি ও কী কী? – Bangla Hadith