৬৩/৪৫. অধ্যায়ঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর সাহাবীদের মদীনায় হিজরত।
‘আবদুল্লাহ ইব্নু যায়দ ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন, যদি হিজরতের ফাযীলাত না হত তবে আমি আনসারদেরই একজন হতাম। আবূ মূসা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন, আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আমি মক্কা হতে হিজরত করছি এমন জায়গায় যেখানে খেজুর বাগান আছে। আমি ভাবলাম, তা হবে ইয়ামামাহ কিংবা হাজার। [১] পরে দেখলাম যে, তা মদীনা-ইয়াস্রিব।
[১] উক্ত স্থান সম্পর্কে সর্বোত্তম মত হচ্ছে এটি ইয়ামান এর একটি শহর এর নাম (ফাতহুল বারী)।
৩৮৯৭
حَدَّثَنَا الْحُمَيْدِيُّ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا وَائِلٍ يَقُوْلُ عُدْنَا خَبَّابًا فَقَالَ هَاجَرْنَا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم نُرِيْدُ وَجْهَ اللهِ فَوَقَعَ أَجْرُنَا عَلَى اللهِ فَمِنَّا مَنْ مَضَى لَمْ يَأْخُذْ مِنْ أَجْرِهِ شَيْئًا مِنْهُمْ مُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ قُتِلَ يَوْمَ أُحُدٍ وَتَرَكَ نَمِرَةً فَكُنَّا إِذَا غَطَّيْنَا بِهَا رَأْسَهُ بَدَتْ رِجْلَاهُ وَإِذَا غَطَّيْنَا رِجْلَيْهِ بَدَا رَأْسُهُ فَأَمَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ نُغَطِّيَ رَأْسَهُ وَنَجْعَلَ عَلَى رِجْلَيْهِ شَيْئًا مِنْ إِذْخِرٍ وَمِنَّا مَنْ أَيْنَعَتْ لَهُ ثَمَرَتُهُ فَهُوَ يَهْدِبُهَا
উবূ ওয়াইল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
উবূ ওয়াইল (রাঃ) বলেন, আমরা পীড়িত খাব্বাব (রাঃ) – কে দেখতে গেলাম। তিনি আমাদেরকে বললেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর সঙ্গে হিজরত করেছিলাম – আল্লাহ্র সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে। আল্লাহ্র নিকট আমাদের সওয়াব রয়েছে। তবে আমাদের মথ্যে কেউ কেউ কোন প্রতিদানের কিছু না নিয়েই চলে গেছেন। এদের মধ্যে ছিলেন মুস’আব ইব্নু ‘উমার (রাঃ)। তিনি ওহুদের দিন শহীদ হন। তিনি একখানা চাদর রেখে যান। আমরা যখন এটি দিয়ে তাঁর মাথা ঢেকে দিতাম, তখন তাঁর পা বেরিয়ে পড়ত, আর যখন আমরা পা ঢেকে দিতাম, তখন তাঁর মাথা বেরিয়ে পড়ত। তখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নির্দেশ করলেন যে, আমরা যেন তাঁর মাথা ঢেকে দিই এবং তাঁর পায়ের উপর কিছু ইয্খির রেখে দিই। আর আমাদের মধ্যে এমন কেউ কেউ আছেন, যাদের ফল পরিপক্ক হয়েছে আর তারা তা পেড়ে খাচ্ছেন।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬১০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬১৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৮৯৮
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ حَدَّثَنَا حَمَّادٌ هُوَ ابْنُ زَيْدٍ عَنْ يَحْيَى عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِبْرَاهِيْمَ عَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ وَقَّاصٍ قَالَ سَمِعْتُ عُمَرَ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ الأَعْمَالُ بِالنِّيَّةِ فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيْبُهَا أَوْ
امْرَأَةٍ يَتَزَوَّجُهَا فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ وَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى اللهِ وَرَسُوْلِهِ فَهِجْرَتُهُ إِلَى اللهِ وَرَسُوْلِهِ صلى الله عليه وسلم
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
উমার (রাঃ) বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – কে বলতে শুনেছি যে, আমলের ফলাফল নির্ভর করে নিয়্যাতের [১] উপর। সুতরাং যার হিজরত [২] হয় দুনিয়া লাভের জন্য কিংবা কোন স্ত্রীলোককে বিবাহ করার উদ্দেশে, তাহলে তার হিজরত হবে যে উদ্দেশে সে হিজরত করেছে। আর যার হিজরত হবে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্য, তবে তার হিজরত হবে আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলেরই জন্য। (১)
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬১১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬১৬)
[১] ‘নিয়্যাত’ শব্দের অর্থ অন্তরের দৃঢ় সংকল্প। শর’ঈয়াতের পরিভাষায় এর বিশেষ অর্থ নিম্নরূপঃ (১) কোন কাজকে কোন কাজ থেকে পৃথক করা বা নির্দিষ্ট করে নেয়া। যথা ফারয সলাতের নিয়্যাত করা মানে সুন্নাত তথা নাফল থেকে পৃথক বা নির্দিষ্ট করা। (২) কোন কাজ সম্পাদনের সংকল্প করা। যথা হাজ্জের নিয়্যাত করা মানে হাজ্জ সম্পাদনের সংকল্প করা। (৩) নিয়্যাত মানে কোন কাজের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য। উক্ত হাদীসে ‘নিয়্যাত’ শব্দটি এ শেষোক্ত অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ যে কোন কাজের ফরাফল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের উপরই নির্ভর করে।
এখানে প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, নিয়্যাত যেহেতু অন্তরের সংকল্পেরই নাম, সেহেতু কোন কাজের নিয়্যাতের সময় অন্তরে সংকল্প না করে শুধু মুখে উচ্চারণ করলে চলবে না। যেমন সলাত আদায়ের পূর্বে অনেক মুসল্লীকে সলাতের আরবীতে তথাকথিত গদবাধা নিয়্যাত করতে দেখা যায় – যার প্রমাণ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কোন হাদীসে পাওয়া যায় না। সুতরাং সলাতের নিয়্যতে নির্দিষ্টভাবে মনের দৃঢ় সংকল্পই যথেষ্ট; মুখে উচ্চারণ রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাহ্র পরিপন্থী যা নবাবিষ্কৃত হিসেবে গণ্য।
[২] ‘হিজরত’ শব্দের অর্থ ত্যাগ করা, ছিন্ন করা। শর’ঈয়াতের পরিভাষায় এর দু’ধরনের অর্থ রয়েছ। (১) আল্লাহ্র সন্তোষ লাভের জন্য এক স্থান ত্যাগ করে অন্য স্থানে যাওয়া, ঈমান ও ধর্ম রক্ষার জন্য নিরাপদ স্থানে গমন করা। যথা রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীদের মক্কা হতে মদীনায় গমনকে হিজরত বলা হয়। (২) শর’ঈয়াতের নিষিদ্ধ কাজগুলোকে পরিহার করা। তাই রসূল হাদীসে বলেনঃ প্রকৃত মুহাজির ঐ ব্যক্তি যে আল্লাহ্র নিষিদ্ধ বিষয়সমূহকে ত্যাগ করেছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৮৯৯
حَدَّثَنِيْ إِسْحَاقُ بْنُ يَزِيْدَ الدِّمَشْقِيُّ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ حَمْزَةَ قَالَ حَدَّثَنِيْ أَبُوْ عَمْرٍو الأَوْزَاعِيُّ عَنْ عَبْدَةَ بْنِ أَبِيْ لُبَابَةَ عَنْ مُجَاهِدِ بْنِ جَبْرٍ الْمَكِّيِّ أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا كَانَ يَقُوْلُ لَا هِجْرَةَ بَعْدَ الْفَتْحِ
আবদুল্লাহ ইব্নু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইব্নু ‘উমার (রাঃ) বলতেন, (মক্কা) বিজয়ের পর হিজরতের কোন প্রয়োজন নেই।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯০০
قَالَ يَحْيَى بْنُ حَمْزَةَ وَحَدَّثَنِي الأَوْزَاعِيُّ عَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِيْ رَبَاحٍ قَالَ زُرْتُ عَائِشَةَ مَعَ عُبَيْدِ بْنِ عُمَيْرٍ اللَّيْثِيِّ فَسَأَلْنَاهَا عَنْ الْهِجْرَةِ فَقَالَتْ لَا هِجْرَةَ الْيَوْمَ كَانَ الْمُؤْمِنُوْنَ يَفِرُّ أَحَدُهُمْ بِدِيْنِهِ إِلَى اللهِ تَعَالَى وَإِلَى رَسُوْلِهِ صلى الله عليه وسلم مَخَافَةَ أَنْ يُفْتَنَ عَلَيْهِ فَأَمَّا الْيَوْمَ فَقَدْ أَظْهَرَ اللهُ الْإِسْلَامَ وَالْيَوْمَ يَعْبُدُ رَبَّهُ حَيْثُ شَاءَ وَلَكِنْ جِهَادٌ وَنِيَّةٌ
আওয়াযী ‘আতা (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আওয়াযী ‘আতা (রহঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি ইবায়দ ইব্নু উমায়র লাইসী (রাঃ) – এর সঙ্গে ‘আয়িশা (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম। তারপর তাঁকে হিজরত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, এখন আর হিজরতের কোন প্রয়োজন নেই। অতীতে মু’মিনদের কেউ তার দ্বীনের জন্য তার প্রতি ফিত্নার ভয়ে আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের দিকে হিজরত করতেন আর আজ আল্লাহ্ ইসলামকে বিজয়ী করেছেন। এখন কোন মু’মিন তার রবের ইবাদত যেখানে ইচ্ছা করতে পারে। তবে এখন আছে জিহাদ ও নিয়্যাত।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬১২/৩৬১৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬১৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯০১
حَدَّثَنِيْ زَكَرِيَّاءُ بْنُ يَحْيَى حَدَّثَنَا ابْنُ نُمَيْرٍ قَالَ هِشَامٌ فَأَخْبَرَنِيْ أَبِيْ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّ سَعْدًا قَالَ اللَّهُمَّ إِنَّكَ تَعْلَمُ أَنَّهُ لَيْسَ أَحَدٌ أَحَبَّ إِلَيَّ أَنْ أُجَاهِدَهُمْ فِيكَ مِنْ قَوْمٍ كَذَّبُوْا رَسُوْلَكَ صلى الله عليه وسلم وَأَخْرَجُوْهُ اللَّهُمَّ فَإِنِّيْ أَظُنُّ أَنَّكَ قَدْ وَضَعْتَ الْحَرْبَ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ وَقَالَ أَبَانُ بْنُ يَزِيْدَ حَدَّثَنَا هِشَامٌ عَنْ أَبِيْهِ أَخْبَرَتْنِيْ عَائِشَةُ مِنْ قَوْمٍ كَذَّبُوْا نَبِيَّكَ وَأَخْرَجُوْهُ مِنْ قُرَيْشٍ
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সা’দ (রাঃ) দু‘আ করলেন, হে আল্লাহ্! আপনি তো জানেন, আমার নিকট আপনার রাহে এ কাওমের বিরুদ্ধে, যারা আপনার রসূলকে অবিশ্বাস করেছে ও তাঁকে বিতাড়িত করেছে। জিহাদ করা এত প্রিয় যতটুকু অন্য কারো বিরুদ্ধে নয়। হে আল্লাহ্! আমার ধারণা আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যকার লড়াই শেষ করে দিয়েছেন। আবন ইব্নু ইয়াযীদ (রহঃ)… ‘আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, সে কাওম যারা তোমার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – কে অবিশ্বাস করেছে এবং তাঁকে বের করে দিয়েছে, তারা কুরাইশ গোত্রই।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬১৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬১৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯০২
حَدَّثَنَا مَطَرُ بْنُ الْفَضْلِ حَدَّثَنَا رَوْحُ بْنُ عُبَادَةَ حَدَّثَنَا هِشَامٌ حَدَّثَنَا عِكْرِمَةُ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ بُعِثَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لِأَرْبَعِيْنَ سَنَةً فَمَكُثَ بِمَكَّةَ ثَلَاثَ عَشْرَةَ سَنَةً يُوْحَى إِلَيْهِ ثُمَّ أُمِرَ بِالْهِجْرَةِ فَهَاجَرَ عَشْرَ سِنِيْنَ وَمَاتَ وَهُوَ ابْنُ ثَلَاثٍ وَسِتِّيْنَ
ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্- কে নবুওয়াত দেয় হয় চল্লিশ বছর বয়সে, এরপর তিনি তের বছর মক্কায় কাটান। এ সময় তাঁর প্রতি ওহী নাযিল হচ্ছিল। তারপর হিজরতের নির্দেশ পান। এবং হিজরতের পর দশ বছর কাটান। আর তিনি তেষট্টি বছর বয়সে মারা যান।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬১৫, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬১৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯০৩
حَدَّثَنِيْ مَطَرُ بْنُ الْفَضْلِ حَدَّثَنَا رَوْحُ بْنُ عُبَادَةَ حَدَّثَنَا زَكَرِيَّاءُ بْنُ إِسْحَاقَ حَدَّثَنَا عَمْرُوْ بْنُ دِيْنَارٍ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ مَكَثَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِمَكَّةَ ثَلَاثَ عَشْرَةَ وَتُوُفِّيَ وَهُوَ ابْنُ ثَلَاثٍ وَسِتِّيْنَ
ইব্নু ‘আব্বাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কায় তের বছর কাটান। তিনি তিষট্টি বছর বয়সে মারা যান।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬১৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬২০)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯০৪
حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيْلُ بْنُ عَبْدِ اللهِ قَالَ حَدَّثَنِيْ مَالِكٌ عَنْ أَبِي النَّضْرِ مَوْلَى عُمَرَ بْنِ عُبَيْدِ اللهِ عَنْ عُبَيْدٍ يَعْنِيْ ابْنَ حُنَيْنٍ عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم جَلَسَ عَلَى الْمِنْبَرِ فَقَالَ إِنَّ عَبْدًا خَيَّرَهُ اللهُ بَيْنَ أَنْ يُؤْتِيَهُ مِنْ زَهْرَةِ الدُّنْيَا مَا شَاءَ وَبَيْنَ مَا عِنْدَهُ فَاخْتَارَ مَا عِنْدَهُ فَبَكَى أَبُوْ بَكْرٍ وَقَالَ فَدَيْنَاكَ بِآبَائِنَا وَأُمَّهَاتِنَا فَعَجِبْنَا لَهُ وَقَالَ النَّاسُ انْظُرُوْا إِلَى هَذَا الشَّيْخِ يُخْبِرُ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ عَبْدٍ خَيَّرَهُ اللهُ بَيْنَ أَنْ يُؤْتِيَهُ مِنْ زَهْرَةِ الدُّنْيَا وَبَيْنَ مَا عِنْدَهُ وَهُوَ يَقُوْلُ فَدَيْنَاكَ بِآبَائِنَا وَأُمَّهَاتِنَا فَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم هُوَ الْمُخَيَّرَ وَكَانَ أَبُوْ بَكْرٍ هُوَ أَعْلَمَنَا بِهِ وَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ مِنْ أَمَنِّ النَّاسِ عَلَيَّ فِيْ صُحْبَتِهِ وَمَالِهِ أَبَا بَكْرٍ وَلَوْ كُنْتُ مُتَّخِذًا خَلِيْلًا مِنْ أُمَّتِيْ لَاتَّخَذْتُ أَبَا بَكْرٍ إِلَّا خُلَّةَ الْإِسْلَامِ لَا يَبْقَيَنَّ فِي الْمَسْجِدِ خَوْخَةٌ إِلَّا خَوْخَةُ أَبِيْ بَكْرٍ
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
যে, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বরে বসলেন এবং বললেন, আল্লাহ্ তার এক বান্দাকে দুটি বিষয়ের একটি বেছে নেয়ার অধিকার দিয়েছেন। তার একটি হল দুনিয়ার ভোগ-বিলাস আর একটি হল আল্লাহ্র নিকট যা রক্ষিত রয়েছে। তখন সে বান্দা আল্লাহ্র কাছে যা রয়েছে তাই পছন্দ করলেন। একথা শুনে, আবূ বকর (রাঃ) কেঁদে ফেললেন, এবং বললেন, আমাদের পিতা-মাতাকে আপনার জন্য কুরবানী করলাম। তাঁর অবস্থা দেখে আমরা বিস্মিত হলাম। লোকেরা বলতে লাগল, এ বৃদ্ধের অবস্থা দেখ রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক বান্দা সম্বন্ধে খবর দিলেন যে, তাকে আল্লাহ্ ভোগ-সম্পদ দেওয়ার এবং তার কাছে যা রয়েছে, এ দু’য়ের মধ্যে বেছে নিতে বললেন আর এই বৃদ্ধ বলছে, আপনার জন্য আমাদের মাতাপিতা উৎসর্গ করলাম। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- ই হলেন সেই ইখতিয়ার প্রাপ্ত বান্দা। আর আবূ বকর (রাঃ) ই হলেন আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তি। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি তার সঙ্গ ও সম্পদ দিয়ে আমার প্রতি সবচেয়ে ইহসান করেছেন তিনি হলেন আবূ বকর (রাঃ)। যদি আমি আমার উম্মতের কোন ব্যক্তিকে অন্তরঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করতাম তাহলে আবূ বক্রকেই করতাম। তবে তার সঙ্গে আমার ইসলামী ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক রয়েছে। মসজিদের দিকে আবূ বকর (রাঃ) এর দরজা ছাড়া অন্য কারো দরজা খোলা থাকবে না।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬১৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬২১)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯০৫
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ بُكَيْرٍ حَدَّثَنَا اللَّيْثُ عَنْ عُقَيْلٍ قَالَ ابْنُ شِهَابٍ فَأَخْبَرَنِيْ عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ أَنَّ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا زَوْجَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَتْ لَمْ أَعْقِلْ أَبَوَيَّ قَطُّ إِلَّا وَهُمَا يَدِيْنَانِ الدِّيْنَ وَلَمْ يَمُرَّ عَلَيْنَا يَوْمٌ إِلَّا يَأْتِيْنَا فِيْهِ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم طَرَفَيْ النَّهَارِ بُكْرَةً وَعَشِيَّةً فَلَمَّا ابْتُلِيَ الْمُسْلِمُوْنَ خَرَجَ أَبُوْ بَكْرٍ مُهَاجِرًا نَحْوَ أَرْضِ الْحَبَشَةِ حَتَّى إِذَا بَلَغَ بَرْكَ الْغِمَادِ لَقِيَهُ ابْنُ الدَّغِنَةِ وَهُوَ سَيِّدُ الْقَارَةِ فَقَالَ أَيْنَ تُرِيْدُ يَا أَبَا بَكْرٍ فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ أَخْرَجَنِيْ قَوْمِيْ فَأُرِيْدُ أَنْ أَسِيْحَ فِي الأَرْضِ وَأَعْبُدَ رَبِّيْ قَالَ ابْنُ الدَّغِنَةِ فَإِنَّ مِثْلَكَ يَا أَبَا بَكْرٍ لَا يَخْرُجُ وَلَا يُخْرَجُ إِنَّكَ تَكْسِبُ الْمَعْدُومَ وَتَصِلُ الرَّحِمَ وَتَحْمِلُ الْكَلَّ وَتَقْرِي الضَّيْفَ وَتُعِيْنُ عَلَى نَوَائِبِ الْحَقِّ فَأَنَا لَكَ جَارٌ ارْجِعْ وَاعْبُدْ رَبَّكَ بِبَلَدِكَ فَرَجَعَ وَارْتَحَلَ مَعَهُ ابْنُ الدَّغِنَةِ فَطَافَ ابْنُ الدَّغِنَةِ عَشِيَّةً فِيْ أَشْرَافِ قُرَيْشٍ فَقَالَ لَهُمْ إِنَّ أَبَا بَكْرٍ لَا يَخْرُجُ مِثْلُهُ وَلَا يُخْرَجُ أَتُخْرِجُوْنَ رَجُلًا يَكْسِبُ الْمَعْدُومَ وَيَصِلُ الرَّحِمَ وَيَحْمِلُ الْكَلَّ وَيَقْرِي الضَّيْفَ وَيُعِيْنُ عَلَى نَوَائِبِ الْحَقِّ فَلَمْ تُكَذِّبْ قُرَيْشٌ بِجِوَارِ ابْنِ الدَّغِنَةِ وَقَالُوْا لِابْنِ الدَّغِنَةِ مُرْ أَبَا بَكْرٍ فَلْيَعْبُدْ رَبَّهُ فِيْ دَارِهِ فَلْيُصَلِّ فِيْهَا وَلْيَقْرَأْ مَا شَاءَ وَلَا يُؤْذِيْنَا بِذَلِكَ وَلَا يَسْتَعْلِنْ بِهِ فَإِنَّا نَخْشَى أَنْ يَفْتِنَ نِسَاءَنَا وَأَبْنَاءَنَا فَقَالَ ذَلِكَ ابْنُ الدَّغِنَةِ لِأَبِيْ بَكْرٍ فَلَبِثَ أَبُوْ بَكْرٍ بِذَلِكَ يَعْبُدُ رَبَّهُ فِيْ دَارِهِ وَلَا يَسْتَعْلِنُ بِصَلَاتِهِ وَلَا يَقْرَأُ فِيْ غَيْرِ دَارِهِ ثُمَّ بَدَا لِأَبِيْ بَكْرٍ فَابْتَنَى مَسْجِدًا بِفِنَاءِ دَارِهِ وَكَانَ يُصَلِّيْ فِيْهِ وَيَقْرَأُ الْقُرْآنَ فَيَنْقَذِفُ عَلَيْهِ نِسَاءُ الْمُشْرِكِيْنَ وَأَبْنَاؤُهُمْ وَهُمْ يَعْجَبُوْنَ مِنْهُ وَيَنْظُرُوْنَ إِلَيْهِ وَكَانَ أَبُوْ بَكْرٍ رَجُلًا بَكَّاءً لَا يَمْلِكُ عَيْنَيْهِ إِذَا قَرَأَ الْقُرْآنَ وَأَفْزَعَ ذَلِكَ أَشْرَافَ قُرَيْشٍ مِنْ الْمُشْرِكِيْنَ فَأَرْسَلُوْا إِلَى ابْنِ الدَّغِنَةِ فَقَدِمَ عَلَيْهِمْ فَقَالُوْا إِنَّا كُنَّا أَجَرْنَا أَبَا بَكْرٍ بِجِوَارِكَ عَلَى أَنْ يَعْبُدَ رَبَّهُ فِيْ دَارِهِ فَقَدْ جَاوَزَ ذَلِكَ فَابْتَنَى مَسْجِدًا بِفِنَاءِ دَارِهِ فَأَعْلَنَ بِالصَّلَاةِ وَالْقِرَاءَةِ فِيْهِ وَإِنَّا قَدْ خَشِيْنَا أَنْ يَفْتِنَ نِسَاءَنَا وَأَبْنَاءَنَا فَانْهَهُ فَإِنْ أَحَبَّ أَنْ يَقْتَصِرَ عَلَى أَنْ يَعْبُدَ رَبَّهُ فِيْ دَارِهِ فَعَلَ وَإِنْ أَبَى إِلَّا أَنْ يُعْلِنَ بِذَلِكَ فَسَلْهُ أَنْ يَرُدَّ إِلَيْكَ ذِمَّتَكَ فَإِنَّا قَدْ كَرِهْنَا أَنْ نُخْفِرَكَ وَلَسْنَا مُقِرِّيْنَ لِأَبِيْ بَكْرٍ الِاسْتِعْلَانَ قَالَتْ عَائِشَةُ فَأَتَى ابْنُ الدَّغِنَةِ إِلَى أَبِيْ بَكْرٍ فَقَالَ قَدْ عَلِمْتَ الَّذِيْ عَاقَدْتُ لَكَ عَلَيْهِ فَإِمَّا أَنْ تَقْتَصِرَ عَلَى ذَلِكَ وَإِمَّا أَنْ تَرْجِعَ إِلَيَّ ذِمَّتِيْ فَإِنِّيْ لَا أُحِبُّ أَنْ تَسْمَعَ الْعَرَبُ أَنِّيْ أُخْفِرْتُ فِيْ رَجُلٍ عَقَدْتُ لَهُ فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ فَإِنِّيْ أَرُدُّ إِلَيْكَ جِوَارَكَ وَأَرْضَى بِجِوَارِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ وَالنَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَوْمَئِذٍ بِمَكَّةَ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لِلْمُسْلِمِيْنَ إِنِّيْ أُرِيْتُ دَارَ هِجْرَتِكُمْ ذَاتَ نَخْلٍ بَيْنَ لَابَتَيْنِ وَهُمَا الْحَرَّتَانِ فَهَاجَرَ مَنْ هَاجَرَ قِبَلَ الْمَدِيْنَةِ وَرَجَعَ عَامَّةُ مَنْ كَانَ هَاجَرَ بِأَرْضِ الْحَبَشَةِ إِلَى الْمَدِيْنَةِ وَتَجَهَّزَ أَبُوْ بَكْرٍ قِبَلَ الْمَدِيْنَةِ فَقَالَ لَهُ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى رِسْلِكَ فَإِنِّيْ أَرْجُوْ أَنْ يُؤْذَنَ لِيْ فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ وَهَلْ تَرْجُوْ ذَلِكَ بِأَبِيْ أَنْتَ قَالَ نَعَمْ فَحَبَسَ أَبُوْ بَكْرٍ نَفْسَهُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم لِيَصْحَبَهُ وَعَلَفَ رَاحِلَتَيْنِ كَانَتَا عِنْدَهُ وَرَقَ السَّمُرِ وَهُوَ الْخَبَطُ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ قَالَ ابْنُ شِهَابٍ قَالَ عُرْوَةُ قَالَتْ عَائِشَةُ فَبَيْنَمَا نَحْنُ يَوْمًا جُلُوْسٌ فِيْ بَيْتِ أَبِيْ بَكْرٍ فِيْ نَحْرِ الظَّهِيْرَةِ قَالَ قَائِلٌ لِأَبِيْ بَكْرٍ هَذَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مُتَقَنِّعًا فِيْ سَاعَةٍ لَمْ يَكُنْ يَأْتِيْنَا فِيْهَا فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ فِدَاءٌ لَهُ أَبِيْ وَأُمِّيْ وَاللهِ مَا جَاءَ بِهِ فِيْ هَذِهِ السَّاعَةِ إِلَّا أَمْرٌ قَالَتْ فَجَاءَ رَسُوْلُ اللهِ فَاسْتَأْذَنَ فَأُذِنَ لَهُ فَدَخَلَ فَقَالَ النَّبِيُّ لِأَبِيْ بَكْرٍ أَخْرِجْ مَنْ عِنْدَكَ فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ إِنَّمَا هُمْ أَهْلُكَ بِأَبِيْ أَنْتَ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ فَإِنِّيْ قَدْ أُذِنَ لِيْ فِي الْخُرُوْجِ فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ الصَّحَابَةُ بِأَبِيْ أَنْتَ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم نَعَمْ قَالَ أَبُوْ بَكْرٍ فَخُذْ بِأَبِيْ أَنْتَ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِحْدَى رَاحِلَتَيَّ هَاتَيْنِ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِالثَّمَنِ قَالَتْ عَائِشَةُ فَجَهَّزْنَاهُمَا أَحَثَّ الْجِهَازِ وَصَنَعْنَا لَهُمَا سُفْرَةً فِيْ جِرَابٍ فَقَطَعَتْ أَسْمَاءُ بِنْتُ أَبِيْ بَكْرٍ قِطْعَةً مِنْ نِطَاقِهَا فَرَبَطَتْ بِهِ عَلَى فَمِ الْجِرَابِ فَبِذَلِكَ سُمِّيَتْ ذَاتَ النِّطَاقَيْنِ قَالَتْ ثُمَّ لَحِقَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَأَبُوْ بَكْرٍ بِغَارٍ فِيْ جَبَلِ ثَوْرٍ فَكَمَنَا فِيْهِ ثَلَاثَ لَيَالٍ يَبِيْتُ عِنْدَهُمَا عَبْدُ اللهِ بْنُ أَبِيْ بَكْرٍ وَهُوَ غُلَامٌ شَابٌّ ثَقِفٌ لَقِنٌ فَيُدْلِجُ مِنْ عِنْدِهِمَا بِسَحَرٍ فَيُصْبِحُ مَعَ قُرَيْشٍ بِمَكَّةَ كَبَائِتٍ فَلَا يَسْمَعُ أَمْرًا يُكْتَادَانِ بِهِ إِلَّا وَعَاهُ حَتَّى يَأْتِيَهُمَا بِخَبَرِ ذَلِكَ حِيْنَ يَخْتَلِطُ الظَّلَامُ وَيَرْعَى عَلَيْهِمَا عَامِرُ بْنُ فُهَيْرَةَ مَوْلَى أَبِيْ بَكْرٍ مِنْحَةً مِنْ غَنَمٍ فَيُرِيْحُهَا عَلَيْهِمَا حِيْنَ تَذْهَبُ سَاعَةٌ مِنْ الْعِشَاءِ فَيَبِيْتَانِ فِيْ رِسْلٍ وَهُوَ لَبَنُ مِنْحَتِهِمَا وَرَضِيْفِهِمَا حَتَّى يَنْعِقَ بِهَا عَامِرُ بْنُ فُهَيْرَةَ بِغَلَسٍ يَفْعَلُ ذَلِكَ فِيْ كُلِّ لَيْلَةٍ مِنْ تِلْكَ اللَّيَالِي الثَّلَاثِ وَاسْتَأْجَرَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَأَبُوْ بَكْرٍ رَجُلًا مِنْ بَنِي الدِّيلِ وَهُوَ مِنْ بَنِيْ عَبْدِ بْنِ عَدِيٍّ هَادِيَا خِرِّيتًا وَالْخِرِّيتُ الْمَاهِرُ بِالْهِدَايَةِ قَدْ غَمَسَ حِلْفًا فِي الِ الْعَاصِ بْنِ وَائِلٍ السَّهْمِيِّ وَهُوَ عَلَى دِيْنِ كُفَّارِ قُرَيْشٍ فَأَمِنَاهُ فَدَفَعَا إِلَيْهِ رَاحِلَتَيْهِمَا وَوَاعَدَاهُ غَارَ ثَوْرٍ بَعْدَ ثَلَاثِ لَيَالٍ بِرَاحِلَتَيْهِمَا صُبْحَ ثَلَاثٍ وَانْطَلَقَ مَعَهُمَا عَامِرُ بْنُ فُهَيْرَةَ وَالدَّلِيْلُ فَأَخَذَ بِهِمْ طَرِيْقَ السَّوَاحِلِ قَالَ ابْنُ شِهَابٍ وَأَخْبَرَنِيْ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَالِكٍ الْمُدْلِجِيُّ وَهُوَ ابْنُ أَخِيْ سُرَاقَةَ بْنِ مَالِكِ بْنِ جُعْشُمٍ أَنَّ أَبَاهُ أَخْبَرَهُ أَنَّهُ سَمِعَ سُرَاقَةَ بْنَ جُعْشُمٍ يَقُوْلُ جَاءَنَا رُسُلُ كُفَّارِ قُرَيْشٍ يَجْعَلُوْنَ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَأَبِيْ بَكْرٍ دِيَةَ كُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا مَنْ قَتَلَهُ أَوْ أَسَرَهُ فَبَيْنَمَا أَنَا جَالِسٌ فِيْ مَجْلِسٍ مِنْ مَجَالِسِ قَوْمِيْ بَنِيْ مُدْلِجٍ أَقْبَلَ رَجُلٌ مِنْهُمْ حَتَّى قَامَ عَلَيْنَا وَنَحْنُ جُلُوْسٌ فَقَالَ يَا سُرَاقَةُ إِنِّيْ قَدْ رَأَيْتُ آنِفًا أَسْوِدَةً بِالسَّاحِلِ أُرَاهَا مُحَمَّدًا وَأَصْحَابَهُ قَالَ سُرَاقَةُ فَعَرَفْتُ أَنَّهُمْ هُمْ فَقُلْتُ لَهُ إِنَّهُمْ لَيْسُوْا بِهِمْ وَلَكِنَّكَ رَأَيْتَ فُلَانًا وَفُلَانًا انْطَلَقُوْا بِأَعْيُنِنَا ثُمَّ لَبِثْتُ فِي الْمَجْلِسِ سَاعَةً ثُمَّ قُمْتُ فَدَخَلْتُ فَأَمَرْتُ جَارِيَتِيْ أَنْ تَخْرُجَ بِفَرَسِيْ وَهِيَ مِنْ وَرَاءِ أَكَمَةٍ فَتَحْبِسَهَا عَلَيَّ وَأَخَذْتُ رُمْحِيْ فَخَرَجْتُ بِهِ مِنْ ظَهْرِ الْبَيْتِ فَحَطَطْتُ بِزُجِّهِ الأَرْضَ وَخَفَضْتُ عَالِيَهُ حَتَّى أَتَيْتُ فَرَسِيْ فَرَكِبْتُهَا فَرَفَعْتُهَا تُقَرِّبُ بِيْ حَتَّى دَنَوْتُ مِنْهُمْ فَعَثَرَتْ بِيْ فَرَسِيْ فَخَرَرْتُ عَنْهَا فَقُمْتُ فَأَهْوَيْتُ يَدِيْ إِلَى كِنَانَتِيْ فَاسْتَخْرَجْتُ مِنْهَا الأَزْلَامَ فَاسْتَقْسَمْتُ بِهَا أَضُرُّهُمْ أَمْ لَا فَخَرَجَ الَّذِيْ أَكْرَهُ فَرَكِبْتُ فَرَسِيْ وَعَصَيْتُ الأَزْلَامَ تُقَرِّبُ بِيْ حَتَّى إِذَا سَمِعْتُ قِرَاءَةَ رَسُوْلِ اللهِ وَهُوَ لَا يَلْتَفِتُ وَأَبُوْ بَكْرٍ يُكْثِرُ الِالْتِفَاتَ سَاخَتْ يَدَا فَرَسِيْ فِي الأَرْضِ حَتَّى بَلَغَتَا الرُّكْبَتَيْنِ فَخَرَرْتُ عَنْهَا ثُمَّ زَجَرْتُهَا فَنَهَضَتْ فَلَمْ تَكَدْ تُخْرِجُ يَدَيْهَا فَلَمَّا اسْتَوَتْ قَائِمَةً إِذَا لِأَثَرِ يَدَيْهَا عُثَانٌ سَاطِعٌ فِي السَّمَاءِ مِثْلُ الدُّخَانِ فَاسْتَقْسَمْتُ بِالأَزْلَامِ فَخَرَجَ الَّذِيْ أَكْرَهُ فَنَادَيْتُهُمْ بِالأَمَانِ فَوَقَفُوْا فَرَكِبْتُ فَرَسِيْ حَتَّى جِئْتُهُمْ وَوَقَعَ فِيْ نَفْسِيْ حِيْنَ لَقِيْتُ مَا لَقِيْتُ مِنْ الْحَبْسِ عَنْهُمْ أَنْ سَيَظْهَرُ أَمْرُ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقُلْتُ لَهُ إِنَّ قَوْمَكَ قَدْ جَعَلُوْا فِيكَ الدِّيَةَ وَأَخْبَرْتُهُمْ أَخْبَارَ مَا يُرِيْدُ النَّاسُ بِهِمْ وَعَرَضْتُ عَلَيْهِمْ الزَّادَ وَالْمَتَاعَ فَلَمْ يَرْزَآنِيْ وَلَمْ يَسْأَلَانِيْ إِلَّا أَنْ قَالَ أَخْفِ عَنَّا فَسَأَلْتُهُ أَنْ يَكْتُبَ لِيْ كِتَابَ أَمْنٍ فَأَمَرَ عَامِرَ بْنَ فُهَيْرَةَ فَكَتَبَ فِيْ رُقْعَةٍ مِنْ أَدِيْمٍ ثُمَّ مَضَى رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ابْنُ شِهَابٍ فَأَخْبَرَنِيْ عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَقِيَ الزُّبَيْرَ فِيْ رَكْبٍ مِنْ الْمُسْلِمِيْنَ كَانُوْا تِجَارًا قَافِلِيْنَ مِنْ الشَّأْمِ فَكَسَا الزُّبَيْرُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَأَبَا بَكْرٍ ثِيَابَ بَيَاضٍ وَسَمِعَ الْمُسْلِمُوْنَ بِالْمَدِيْنَةِ مَخْرَجَ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ مَكَّةَ فَكَانُوْا يَغْدُوْنَ كُلَّ غَدَاةٍ إِلَى الْحَرَّةِ فَيَنْتَظِرُوْنَهُ حَتَّى يَرُدَّهُمْ حَرُّ الظَّهِيْرَةِ فَانْقَلَبُوْا يَوْمًا بَعْدَ مَا أَطَالُوْا انْتِظَارَهُمْ فَلَمَّا أَوَوْا إِلَى بُيُوْتِهِمْ أَوْفَى رَجُلٌ مِنْ يَهُوْدَ عَلَى أُطُمٍ مِنْ آطَامِهِمْ لِأَمْرٍ يَنْظُرُ إِلَيْهِ فَبَصُرَ بِرَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابِهِ مُبَيَّضِيْنَ يَزُوْلُ بِهِمْ السَّرَابُ فَلَمْ يَمْلِكْ الْيَهُوْدِيُّ أَنْ قَالَ بِأَعْلَى صَوْتِهِ يَا مَعَاشِرَ الْعَرَبِ هَذَا جَدُّكُمْ الَّذِيْ تَنْتَظِرُوْنَ فَثَارَ الْمُسْلِمُوْنَ إِلَى السِّلَاحِ فَتَلَقَّوْا رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِظَهْرِ الْحَرَّةِ فَعَدَلَ بِهِمْ ذَاتَ الْيَمِيْنِ حَتَّى نَزَلَ بِهِمْ فِيْ بَنِيْ عَمْرِو بْنِ عَوْفٍ وَذَلِكَ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعٍ الأَوَّلِ فَقَامَ أَبُوْ بَكْرٍ لِلنَّاسِ وَجَلَسَ رَسُوْلُ اللهِ صَامِتًا فَطَفِقَ مَنْ جَاءَ مِنْ الأَنْصَارِ مِمَّنْ لَمْ يَرَ رَسُوْلَ اللهِ يُحَيِّيْ أَبَا بَكْرٍ حَتَّى أَصَابَتْ الشَّمْسُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَأَقْبَلَ أَبُوْ بَكْرٍ حَتَّى ظَلَّلَ عَلَيْهِ بِرِدَائِهِ فَعَرَفَ النَّاسُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم عِنْدَ ذَلِكَ فَلَبِثَ رَسُوْلُ اللهِ فِيْ بَنِيْ عَمْرِو بْنِ عَوْفٍ بِضْعَ عَشْرَةَ لَيْلَةً وَأُسِّسَ الْمَسْجِدُ الَّذِيْ أُسِّسَ عَلَى التَّقْوَى وَصَلَّى فِيْهِ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ رَكِبَ رَاحِلَتَهُ فَسَارَ يَمْشِيْ مَعَهُ النَّاسُ حَتَّى بَرَكَتْ عِنْدَ مَسْجِدِ الرَّسُوْلِ صلى الله عليه وسلم بِالْمَدِيْنَةِ وَهُوَ يُصَلِّيْ فِيْهِ يَوْمَئِذٍ رِجَالٌ مِنْ الْمُسْلِمِيْنَ وَكَانَ مِرْبَدًا لِلتَّمْرِ لِسُهَيْلٍ وَسَهْلٍ غُلَامَيْنِ يَتِيْمَيْنِ فِيْ حَجْرِ أَسْعَدَ بْنِ زُرَارَةَ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم حِيْنَ بَرَكَتْ بِهِ رَاحِلَتُهُ هَذَا إِنْ شَاءَ اللهُ الْمَنْزِلُ ثُمَّ دَعَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْغُلَامَيْنِ فَسَاوَمَهُمَا بِالْمِرْبَدِ لِيَتَّخِذَهُ مَسْجِدًا فَقَالَا لَا بَلْ نَهَبُهُ لَكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَأَبَى رَسُوْلُ اللهِ أَنْ يَقْبَلَهُ مِنْهُمَا هِبَةً حَتَّى ابْتَاعَهُ مِنْهُمَا ثُمَّ بَنَاهُ مَسْجِدًا وَطَفِقَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَنْقُلُ مَعَهُمْ اللَّبِنَ فِيْ بُنْيَانِهِ وَيَقُوْلُ وَهُوَ يَنْقُلُ اللَّبِنَ
هَذَا الْحِمَالُ لَا حِمَالَ خَيْبَرْ * هَذَا أَبَرُّ رَبَّنَا وَأَطْهَـرْ
وَيَقُوْلُ
اللَّهُمَّ إِنَّ الأَجْرَ أَجْرُ الْآخِرَهْ * اِرْحَمْ الأَنْصَارَ وَالْمُهَاجِرَهْ
فَتَمَثَّلَ بِشِعْرِ رَجُلٍ مِنْ الْمُسْلِمِيْنَ لَمْ يُسَمَّ لِيْ قَالَ ابْنُ شِهَابٍ وَلَمْ يَبْلُغْنَا فِي الأَحَادِيْثِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ تَمَثَّلَ بِبَيْتِ شِعْرٍ تَامٍّ غَيْرَ هَذَا الْبَيْتِ
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আমার মাতা পিতাকে কখনো ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন পালন করতে দেখিনি এবং এমন কোন দিন কাটেনি যেদিন সকালে কিংবা সন্ধ্যায় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বাড়িতে আসেননি। যখন মুসলমানগণ অতিষ্ঠ হয়ে পড়লেন, তখন আবূ বাকর (রাঃ) হিজরাত করে আবিসিনিয়ায় যাওয়ার উদ্দেশে বের হলেন। শেষে বারকুল গিমাদ পৌঁছলে ইবনু দাগিনার সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। সে ছিল তার গোত্রের নেতা। সে বলল, হে আবূ বাকর! কোথায় যাচ্ছেন? উত্তর আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, আমার স্ব-জাতি আমাকে বের করে দিয়েছে। তাই আমি মনে করছি, পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াব এবং আমার প্রতিপালকের ইবাদত করব। ইবনু দাগিনা বলল, হে আবূ বাকর (রাঃ)! আপনার মত ব্যক্তি বের হতে পারে না এবং বের করাও হতে পারে না। আপনি তো নিঃস্বদের জন্য উপার্জন করে দেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন, অক্ষমদের বোঝা নিজে বহন করেন, মেহমানের মেহমানদারী করে থাকেন এবং সত্য পথের পথিকদের বিপদ আপদে সাহায্য করেন। সুতরাং আমি আপনাকে আশ্রয় দিচ্ছি, আপনাকে যাবতীয় সহযোগিতার ওয়াদা করছি। আপনি ফিরে যান এবং নিজ শহরে আপনার রবের ইবাদত করুন। আবূ বাকর (রাঃ) ফিরে এলেন। তাঁর সঙ্গে ইবনু দাগিনাও এল। ইবনু দাগিনা বিকেল বেলা কুরাইশের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে গেল এবং তাদেরকে বলল, আবূ বাকরের মত লোক দেশ হতে বের হতে পারে না এবং তাকে বের করে দেয়া যায় না। আপনারা কি এমন ব্যক্তিকে বের করবেন, যে নিঃস্বদের জন্য উপার্জন করেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন, অক্ষমের বোঝা নিজে বহন করেন, মেহমানের মেহমানদারী করেন এবং ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার কারণে বিপদ এলে সাহায্য করেন। ইবনু দাগিনার আশ্রয়দান কুরাইশগণ মেনে নিল এবং তারা ইবনু দাগিনাকে বলল, তুমি আবূ বকরকে বলে দাও, তিনি যেন তাঁর রবের ইবাদত তাঁর ঘরে করেন। সালাত সেখানেই আদায় করেন, ইচ্ছা মাফিক কুরআন তিলাওয়াত করবেন। কিন্তু এর দ্বারা আমাদের যেন কষ্ট না দেন। আর এসব ব্যাপারে যেন প্রকাশ্যে না করেন। কেননা, আমরা আমাদের মেয়েদের ও ছেলেদের ফিত্নায় পড়ে যাওয়ার ভয় করি। ইবনু দাগিনা এসব কথা আবূ বাকর (রাঃ)-কে বলে দিলেন। সে মতে কিছুকাল আবূ বাকর (রাঃ) নিজের ঘরে তাঁর রবের ইবাদত করতে লাগলেন। সালাত প্রকাশ্যে আদায় করতেন না এবং ঘরেই কুরআন তিলওয়াত করতেন। এরপর আবূ বাকরের মনে খেয়াল জাগল। তাই তিনি তাঁর ঘরের পার্শ্বেই একটি মসজিদ তৈরি করে নিলেন। এতে তিনি সালাত আদায় করতে ও কুরআন পড়তে লাগলেন। এতে তাঁর কাছে মুশরিকা মহিলা ও যুবকরা ভীড় জমাতে লাগল। তারা আবূ বাকর (রাঃ)-এর একাজে বিস্ময়বোধ করত এবং তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকত। আবূ বাকর (রাঃ) ছিলেন একজন ক্রন্দনকারী ব্যক্তি, তিনি যখন কুরআন পড়তেন তখন তাঁর অশ্রু সামলিয়ে রাখতে পারতেন না। এ ব্যাপারটি মুশরিকদের নেতৃস্থানীয় কুরাইশদের ভীত করে তুলল এবং তারা ইবনু দাগিনাকে ডেকে পাঠান। সে এল। তারা তাকে বলল, তোমার আশ্রয় প্রদানের কারণে আমরাও আবূ বাকরকে আশ্রয় দিয়েছিলাম এই শর্তে যে, তিনি তাঁর রবের ইবাদত তাঁর ঘরে করবেন কিন্তু সে শর্ত তিনি ভঙ্গ করেছেন এবং নিজ গৃহের পাশে এটি মসজিদ তৈরি করে প্রকাশ্যে সালাত ও তিলওয়াত শুরু করেছেন। আমাদের ভয় হচ্ছে, আমাদের মহিলা ও সন্তানরা ফিতনায় পড়ে যাবে। কাজেই তুমি তাঁকে নিষেধ করে দাও। তিনি তাঁর রবের ইবাদত তাঁর গৃহের ভিতর সীমাবদ্ধ রাখতে চাইলে, তিনি তা করতে পারেন। আর যদি তিনি তা অমান্য করে প্রকাশ্যে তা করতে চান তবে তাঁকে তোমার আশ্রয় প্রদান ও দায় দায়িত্ব ফিরিয়ে দিতে বল। আমরা তোমার আশ্রয় দানের ব্যাপারে বিশ্বাসঘাতকতা করা অত্যন্ত অপছন্দ করি, আবার আবূ বাকরকেও এভাবে প্রকাশ্যে ‘ইবাদাত করার জন্য ছেড়ে দিতে পারি না। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, ইবনু দাগিনা এসে আবূ বাকর (রাঃ)-কে বলল, আপনি অবশ্যই জানেন যে, কী শর্তে আমি আপনার জন্য ওয়াদাবদ্ধ হয়েছিলাম। আপনি হয়ত তাতে সীমিত থাকবেন অন্যথায় আমার জিম্মাদারী আমাকে ফিরত দিবেন। আমি এ কথা মোটেই পছন্দ করি না যে আমার সাথে চুক্তিবদ্ধ এবং আমার আশ্রয়প্রাপ্ত ব্যক্তির প্রতি আমার বিশ্বাসঘাতকতার অপবাদ আরববাসীর নিকট প্রকাশিত হোক। আবূ বাকর (রাঃ) তাকে বললেন, আমি তোমার আশ্রয় তোমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি। আমি আমার আল্লাহর আশ্রয়ের উপর সন্তুষ্ট আছি। এ সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা্য় ছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের বললেন, আমাকে তোমাদের হিজরাতের স্থান (স্বপ্নে) দেখান হয়েছে। সে স্থানে খেজুর বাগান রয়েছে এবং তা দুইটি পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত। এরপর যাঁরা হিজরাত করতে চাইলেন, তাঁরা মদিনার দিকে হিজরাত করলেন। আর যাঁরা হিজরাত করে আবিসিনিয়ায় চলে গিয়েছিলেন, তাঁদেরও অধিকাংশ সেখান হতে ফিরে মদিনায় চলে আসলেন। আবূ বাকর (রাঃ)ও মদিনায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, তুমি অপেক্ষা কর। আশা করছি আমাকেও অনুমতি দেয়া হবে। আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, আমার পিতা আপনার জন্য কুরবান১! আপনিও কি হিজরাতের আশা করছেন? তিনি বললেন, হাঁ। তখন আবূ বাকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গ পাওয়ার জন্য নিজেকে হিজরাত হতে বিরত রাখলেন এবং তাঁর নিকট যে দু’টি উট ছিল এ দুটি চার মাস পর্যন্ত বাবলা গাছের পাতা খাওয়াতে থাকেন।
ইবনু শিহাব ‘উরওয়াহ (রাঃ) সূত্রে ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, ইতিমধ্যে একদিন আমরা ঠিক দুপুর বেলায় আবূ বাকর (রাঃ) এর ঘরে উপবিষ্ট ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে আবূ বাকরকে খবর দিল যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মস্তক আবৃত অবস্থায় আসছেন। তা এমন সময় ছিল যে সময় তিনি পূর্বে কখনো আমাদের এখানে আসেনি। আবূ বাকর (রাঃ) তাঁর আসার কথা শুনে বললেন, আমার মাতাপিতা তাঁর প্রতি কুরবান। আল্লাহর কসম, তিনি এ সময় নিশ্চয় কোন গুরুত্বপূর্ণ কারণেই আসছেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৌঁছে অনুমতি চাইলেন। তাঁকে অনুমতি দেয়া হল। প্রবেশ করে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকরকে বললেন, এখানে অন্য যারা আছে তাদের বের করে দাও। আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতামাতা আপনার প্রতি কুরবান! এখানে তো আপনারই পরিবার। তখন তিনি বললেন, আমাকেও হিজরাতের অনুমতি দেয়া হয়েছে। আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান! আমি আপনার সফর সঙ্গী হতে ইচ্ছুক। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঠিক আছে। আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতামাতা কুরবান! আমার এ দু’টি উট হতে আপনি যে কোন একটি নিন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে মূল্যের বিনিময়ে। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমরা তাঁদের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা অতি শীঘ্র সম্পন্ন করলাম এবং একটি থলের মধ্যে, তাঁদের খাদ্যসামগ্রী গুছিয়ে দিলাম। আমার বোন আসমা বিনতে আবূ বাকর (রাঃ) তার কোমর বন্ধের কিছু অংশ কেটে সে থলের মুখ বেঁধে দিলেন। এ কারণেই তাঁকে ‘জাতুন নেতাক’ (কোমর বন্ধ ওয়ালী) বলা হত। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বাকর (রাঃ) সাওর পর্বতের একটি গুহায় আশ্রয় নিলেন। তাঁরা সেখানে তিনটি রাত অবস্থান করলেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ বাকর (রাঃ) তাঁদের পাশেই রাত্রি যাপন করতেন। তিনি ছিলেন একজন তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন তরুণ। তিনি শেষ রাত্রে ওখান হতে বেরিয়ে মক্কা্য় রাত্রি যাপনকারী কুরাইশদের সঙ্গে মিলিত হতেন এবং তাঁদের দু’জনের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র করা হত তা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন, ও স্মরণ রাখতেন। যখন অাঁধার ঘনিয়ে আসত তখন তিনি সংবাদ নিয়ে তাঁদের উভয়ের কাছে যেতেন। আবূ বাকর (রাঃ)-এর গোলাম আমির ইবনু যুহাইরাহ তাঁদের কাছেই দুধালো বকরীর পাল চরিয়ে বেড়াত। রাতের কিছু সময় চলে গেলে পর সে বকরীর পাল নিয়ে তাঁদের নিকটে যেত এবং তাঁরা দু’জন দুধ পান করে আরামে রাত্রিযাপন করতেন। তাঁরা বকরীর দুধ দোহন করে সাথে সাথেই পান করতেন। তারপর শেষ রাতে আমির ইবনু ফুহাইরাহ বকরীগুলি হাঁকিয়ে নিয়ে যেত। এ তিন রাতের প্রতি রাতে সে এমনই করল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বাকর (রাঃ) বনী আবদ ইবনু আদি গোত্রের এক ব্যক্তিকে মজুরির বিনিময়ে ‘খির্রীত’ (পথ প্রদর্শক) নিযুক্ত করেছিলেন। দক্ষ পথপ্রদর্শককে ‘খির্রীত’ বলা হয়। আদী গোত্রের সাথে তার বন্ধুত্ব ছিল। সে ছিল কাফির কুরাইশের ধর্মাবলম্বী। তাঁরা উভয়ে তাকে বিশ্বস্ত মনে করে তাঁদের উট দু’টি তার হাতে দিয়ে দিলেন এবং তৃতীয় রাত্রের পরে সকালে উট দু’টি সাওর গুহার নিকট নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করলেন। আর সে যথা সময়ে তা পৌঁছিয়ে দিল। আর আমির ইবনু ফুহাইরাহ ও পথপ্রদর্শক তাঁদের উভয়ের সঙ্গে চলল। প্রদর্শক তাঁদের নিয়ে উপকূলের পথ ধরে চলতে লাগল। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬১৮ প্রথমাংশ, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬২২ প্রথমাংশ)
আবদুর রহমান ইবনু মালিক মুদলেজী আমাকে বলেছেন, তিনি সুরাকাহ ইবনু মালিকের ভ্রাতুষ্পুত্র। তার পিতা তাকে বলেছেন, তিনি সুরাকাহ ইবনু জু‘শুমকে বলতে শুনেছেন যে, আমাদের নিকট কুরাইশী কাফিরদের দূত আসল এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বাকর (রাঃ) এ দু’জনের যে কোন একজনকে যে হত্যা করবে অথবা বন্দী করতে পারবে তাকে পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দিল। আমি আমার কওম বনী মুদলীজের এক মজলিসে উপবিষ্ট ছিলাম। তখন তাদের নিকট হতে এক ব্যক্তি এসে আমাদের নিকটে দাঁড়াল। আমরা বসাই ছিলাম। সে বলল, হে সুরাকাহ! আমি এই মাত্র উপকূলের পথে কয়েকজন মানুষকে যেতে দেখলাম। আমার ধারণা, এরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সহযাত্রীরা হবেন। সুরাকাহ বলেন, আমি বুঝতে পারলাম যে এঁরা তাঁরাই হবেন। কিন্তু তাকে বললাম, এরা তাঁরা নয়, বরং তুমি অমুক অমুককে দেখছ। এরা এই মাত্র আমাদের সম্মুখ দিয়ে চলে গেল। তারপর আমি কিছুক্ষণ মজলিসে অবস্থান করে চলে এলাম এবং আমার দাসীকে আদেশ করলাম, তুমি আমার ঘোড়াটি বের করে নিয়ে যাও এবং অমুক টিলার আড়ালে ঘোড়াটি ধরে দাঁড়িয়ে থাক। আমি আমার বর্শা হাতে নিলাম এবং বাড়ির পিছন দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। বর্শাটির এক প্রান্ত হাতে ধরে অপর প্রান্ত মাটি হেচড়ানো অবস্থায় আমি টেনে নিয়ে চলছিলাম ঐ অবস্থায় বর্শার মাটি হেচড়ানো অংশ দ্বারা মাটির উপর রেখাপাত করতে করতে আমার ঘোড়ার নিকট গিয়ে পৌঁছলাম এবং ঘোড়ায় আরোহণ করে তাকে খুব দ্রুত ছুটালাম। সে আমাকে নিয়ে ছুটে চলল। আমি প্রায় তাদের নিকট পৌঁছে গেলাম, এমন সময় আমার ঘোড়াটি হোঁচট খেয়ে আমাকে নিয়ে পড়ে গেল। আমিও তার পিঠ হতে ছিটকে পড়লাম। তারপর আমি উঠে দাঁড়ালাম এবং তুণের দিকেহাত বাড়ালাম এবং তা হতে তীরগুলি বের করলাম ও তীর নিক্ষেপের মাধ্যমে ভাগ্য পরীক্ষা করে নিলাম যে আমি তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবো কি-না। তখন তীরগুলি দুর্ভাগ্যবশতঃ এমনভাবে বেরিয়ে এল যে, ভাগ্য নির্ধারণের বেলায় এমন হওয়া পছন্দ করি না। আমি আবার ভাগ্য পরীক্ষার ফলাফল অমান্য করে অশ্বারোহণ করে সম্মুখ পানে এগুতে লাগলাম। আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এত নিকটবর্তী হয়ে গেলাম যে তাঁর তিলাওয়াতের আওয়ায শুনতে পাচ্ছিলাম। তিনি ফিরে তাকাচ্ছিলেন না কিন্তু আবূ বাকর (রাঃ) বারবার তাকিয়ে দেখছিলেন। এমন সময় হঠাৎ আমার ঘোড়ার সামনের পা দু’টি হাঁটু পর্যন্ত মাটিতে গেড়ে গেল এবং আমি তার উপর হতে পড়ে গেলাম। তখন ঘোড়াটিকে ধমক দিলাম, সে দাঁড়াতে ইচ্ছা করল, কিন্তু পা দু’টি বের করতে পারছিল না। শেষে যখন ঘোড়াটি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে উঠল, তখন হঠাৎ তার সামনের পা দু’টি বের করতে পারছিল না। অবশেষে যখন ঘোড়াটি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে উঠল, তখন হঠাৎ তার সামনের পা দুটি যেখানে গেড়ে ছিল সেখান হতে ধুঁয়ার মত ধূলি আকাশের দিকে উঠতে লাগল। তখন আমি তীর দিয়ে ভাগ্য পরীক্ষা করলাম। এবারও যা আমার অপছন্দনীয় তা-ই প্রকাশ পেল। তখন উচ্চস্বরে তাঁদের নিরাপত্তা চাইলাম। এতে তাঁরা থেমে গেলেন এবং আমি আমার ঘোড়ায় আরোহণ করে এলাম। আমি যখন এমন অবস্থায় বার বার বাধাপ্রাপ্ত ও বিপদে পড়ছিলাম তখনই আমার অন্তরে এ বিশ্বাস দৃঢ় হয়েছিল যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ মিশনটি অচিরেই প্রভাব বিস্তার করবে। তখন আমি তাঁকে বললাম আপনার কওম আপনাকে ধরে দিতে পারলে একশ উট পুরস্কার ঘোষণা করেছে। মক্কায় কাফিরগণ তাঁর সম্পর্কে যে ইচ্ছা করেছে তা তাঁকে জানালাম এবং আমি তাদের জন্য কিছু খাবার ও অন্যান্য সামগ্রী পেশ করলাম। তাঁরা তা হতে কিছুই নিলেন না। আর আমার কাছে এ কথা ছাড়া কিছুই চাইলেন নাঃ ‘‘আমাদের খবরটি গোপন রেখ’’। এরপর আমি আমাকে একটি নিরাপত্তা লিপি লিখে দেয়ার জন্য তাঁকে অনুরোধ করলাম। তখন তিনি ‘আমির ইবনু ফুহাইরাহকে আদেশ দিলেন। তিনি এক টুকরো চামড়ায় তা লিখে দিলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রওয়ানা দিলেন।
ইবনু শিহাব (রহ.) বলেন, ‘উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) আমাকে বলেছেন, পথিমধ্যে যুবায়রের সাথে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাক্ষাত হয়। তিনি মুসলমানদের একটি বণিক কাফেলার সাথে সিরিয়া হতে ফিরছিলেন। তখন যুবায়র (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বাকর (রাঃ)-কে সাদা রঙ্গের পোশাক দান করলেন। এদিকে মদিনায় মুসলিমগণ শুনলেন যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা হতে মদিনার পথে রওয়ানা হয়েছেন। তাই তাঁরা প্রতিদিন সকালে মদিনার হার্রা পর্যন্ত গিয়ে অপেক্ষা করতেন থাকেন, দুপুরে রোদ প্রখর হলে তারা ঘরে ফিরে আসতেন। একদিন তারা পূর্বাপেক্ষা বেশি সময় প্রতীক্ষা করার পর নিজ নিজ গৃহে ফিরে গেলেন। এমন সময় এক ইয়াহূদী একটি টিলায় আরোহণ করে এদিক ওদিক কি যেন দেখছিল। তখন সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাথীসঙ্গীদেরকে সাদা পোশাক পরা অবস্থায় মরীচিকাময় মরুভূমির উপর দিয়ে আগমন করতে দেখতে পেল। ইয়াহূদী তখন নিজেকে সংবরণ করতে না পেরে উচ্চৈঃস্বরে চীৎকার করে বলে উঠল, হে আরব সম্প্রদায়! এইতো সে ভাগ্যবান ব্যক্তি- যার জন্য তোমরা অপেক্ষা করছ। মুসলিমগণ তাড়াতাড়ি হাতিয়ার তুলে নিয়ে মদিনার হাররার উপকন্ঠে নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সঙ্গে মিলিত হলেন। তিনি সকলকে নিয়ে ডানদিকে মোড় নিয়ে বনু ‘আমর ইবনু ‘আউফ গোত্রে অবতরণ করলেন। এদিনটি ছিল রবি‘উল আউয়াল মাসের সোমবার। আবূ বাকর (রাঃ) দাঁড়িয়ে লোকদের সঙ্গে কথা বলতে লাগলেন। আর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব রইলেন। আনসারদের মধ্য হতে যাঁরা এ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেননি তাঁরা আবূ বাকর (রাঃ)-কে সালাম করতে লাগলেন, তারপর যখন রৌদ্রের উত্তাপ নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর পড়তে লাগল এবং আবূ বাকর (রাঃ) অগ্রসর হয়ে তাঁর চাদর দিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপর ছায়া করে দিলেন তখন লোকেরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে চিনতে পারল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনু ‘আমার ইবনু ‘আউফ গোত্রে দশদিনের চেয়ে কিছু বেশি সময় কাটালেন এবং সে মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন, যা তাক্ওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত! রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতে সালাত আদায় করেন। তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উঁনীতে আরোহণ করে রওয়ানা হলেন। লোকেরাও তাঁর সঙ্গে চলতে লাগলেন। মদিনায় মসজিদে নাবাবীর স্থানে পৌঁছে উটনীটি বসে পড়ল। সে সময় ঐ স্থানে কতিপয় মুসলিম সালাত আদায় করতেন। এ জায়গাটি ছিল আসআদ ইবনু যুরারাহ এর আশ্রয়ে পালিত সাহল ও সুহায়েল নামক দু’জন ইয়াতীম বালকের খেজুর শুকাবার স্থান। রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নিয়ে উটনীটি যখন এ স্থানে বসে পড়ল, তখন তিনি বললেন, ইনশাআল্লাহ্, এ স্থানটিই হবে আবাসস্থল। তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই বালক দু’টিকে ডেকে পাঠালেন এবং মাসজিদ তৈরির জন্য তাদের কাছে জায়গাটি মূল্যের বিনিময়ে বিক্রয়ের আলোচনা করলেন। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! বরং এটি আমরা আপনার জন্য বিনামূল্যে দিচ্ছি। কিন্তু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছ হতে বিনামূল্যে গ্রহণে অসম্মতি জানালেন এবং অবশেষে স্থানটি তাদের হতে খরীদ করে নিলেন। তারপর সেই স্থানে তিনি মাসজিদ তৈরি করলেন। রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাসজিদ নির্মাণকালে সহাবা কেরামের সঙ্গে ইট বহন করছিলেন এবং ইট বহনের সময় তিনি আবৃত্তি করছিলেনঃ
এ বোঝা খায়বারের বোঝা বহন নয়।
ইয়া রব, এর ভোঝা অত্যন্ত পুণ্যময় ও অতি পবিত্র।
তিনি আরো বলছিলেন,
হে আল্লাহ্! পরকালের প্রতিদানই প্রকৃত প্রতিদান।
সুতরাং আনসার ও মুহাজিরদের প্রতি অনুগ্রহ করুন।
এক মুসলিম কবির কবিতা আবৃত্তি করেন, যার নাম আমাকে বলা হয়নি। ইবনু শিহাব (রহ.) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এছাড়া অপর কোন পূর্ণ কবিতা পাঠ করছেন বলে, কোন কথা আমার কাছে পৌঁছেনি।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬১৮ শেষাংশ, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬২২ শেষাংশ)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯০৬
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ بُكَيْرٍ حَدَّثَنَا اللَّيْثُ عَنْ عُقَيْلٍ قَالَ ابْنُ شِهَابٍ فَأَخْبَرَنِيْ عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ أَنَّ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا زَوْجَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَتْ لَمْ أَعْقِلْ أَبَوَيَّ قَطُّ إِلَّا وَهُمَا يَدِيْنَانِ الدِّيْنَ وَلَمْ يَمُرَّ عَلَيْنَا يَوْمٌ إِلَّا يَأْتِيْنَا فِيْهِ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم طَرَفَيْ النَّهَارِ بُكْرَةً وَعَشِيَّةً فَلَمَّا ابْتُلِيَ الْمُسْلِمُوْنَ خَرَجَ أَبُوْ بَكْرٍ مُهَاجِرًا نَحْوَ أَرْضِ الْحَبَشَةِ حَتَّى إِذَا بَلَغَ بَرْكَ الْغِمَادِ لَقِيَهُ ابْنُ الدَّغِنَةِ وَهُوَ سَيِّدُ الْقَارَةِ فَقَالَ أَيْنَ تُرِيْدُ يَا أَبَا بَكْرٍ فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ أَخْرَجَنِيْ قَوْمِيْ فَأُرِيْدُ أَنْ أَسِيْحَ فِي الأَرْضِ وَأَعْبُدَ رَبِّيْ قَالَ ابْنُ الدَّغِنَةِ فَإِنَّ مِثْلَكَ يَا أَبَا بَكْرٍ لَا يَخْرُجُ وَلَا يُخْرَجُ إِنَّكَ تَكْسِبُ الْمَعْدُومَ وَتَصِلُ الرَّحِمَ وَتَحْمِلُ الْكَلَّ وَتَقْرِي الضَّيْفَ وَتُعِيْنُ عَلَى نَوَائِبِ الْحَقِّ فَأَنَا لَكَ جَارٌ ارْجِعْ وَاعْبُدْ رَبَّكَ بِبَلَدِكَ فَرَجَعَ وَارْتَحَلَ مَعَهُ ابْنُ الدَّغِنَةِ فَطَافَ ابْنُ الدَّغِنَةِ عَشِيَّةً فِيْ أَشْرَافِ قُرَيْشٍ فَقَالَ لَهُمْ إِنَّ أَبَا بَكْرٍ لَا يَخْرُجُ مِثْلُهُ وَلَا يُخْرَجُ أَتُخْرِجُوْنَ رَجُلًا يَكْسِبُ الْمَعْدُومَ وَيَصِلُ الرَّحِمَ وَيَحْمِلُ الْكَلَّ وَيَقْرِي الضَّيْفَ وَيُعِيْنُ عَلَى نَوَائِبِ الْحَقِّ فَلَمْ تُكَذِّبْ قُرَيْشٌ بِجِوَارِ ابْنِ الدَّغِنَةِ وَقَالُوْا لِابْنِ الدَّغِنَةِ مُرْ أَبَا بَكْرٍ فَلْيَعْبُدْ رَبَّهُ فِيْ دَارِهِ فَلْيُصَلِّ فِيْهَا وَلْيَقْرَأْ مَا شَاءَ وَلَا يُؤْذِيْنَا بِذَلِكَ وَلَا يَسْتَعْلِنْ بِهِ فَإِنَّا نَخْشَى أَنْ يَفْتِنَ نِسَاءَنَا وَأَبْنَاءَنَا فَقَالَ ذَلِكَ ابْنُ الدَّغِنَةِ لِأَبِيْ بَكْرٍ فَلَبِثَ أَبُوْ بَكْرٍ بِذَلِكَ يَعْبُدُ رَبَّهُ فِيْ دَارِهِ وَلَا يَسْتَعْلِنُ بِصَلَاتِهِ وَلَا يَقْرَأُ فِيْ غَيْرِ دَارِهِ ثُمَّ بَدَا لِأَبِيْ بَكْرٍ فَابْتَنَى مَسْجِدًا بِفِنَاءِ دَارِهِ وَكَانَ يُصَلِّيْ فِيْهِ وَيَقْرَأُ الْقُرْآنَ فَيَنْقَذِفُ عَلَيْهِ نِسَاءُ الْمُشْرِكِيْنَ وَأَبْنَاؤُهُمْ وَهُمْ يَعْجَبُوْنَ مِنْهُ وَيَنْظُرُوْنَ إِلَيْهِ وَكَانَ أَبُوْ بَكْرٍ رَجُلًا بَكَّاءً لَا يَمْلِكُ عَيْنَيْهِ إِذَا قَرَأَ الْقُرْآنَ وَأَفْزَعَ ذَلِكَ أَشْرَافَ قُرَيْشٍ مِنْ الْمُشْرِكِيْنَ فَأَرْسَلُوْا إِلَى ابْنِ الدَّغِنَةِ فَقَدِمَ عَلَيْهِمْ فَقَالُوْا إِنَّا كُنَّا أَجَرْنَا أَبَا بَكْرٍ بِجِوَارِكَ عَلَى أَنْ يَعْبُدَ رَبَّهُ فِيْ دَارِهِ فَقَدْ جَاوَزَ ذَلِكَ فَابْتَنَى مَسْجِدًا بِفِنَاءِ دَارِهِ فَأَعْلَنَ بِالصَّلَاةِ وَالْقِرَاءَةِ فِيْهِ وَإِنَّا قَدْ خَشِيْنَا أَنْ يَفْتِنَ نِسَاءَنَا وَأَبْنَاءَنَا فَانْهَهُ فَإِنْ أَحَبَّ أَنْ يَقْتَصِرَ عَلَى أَنْ يَعْبُدَ رَبَّهُ فِيْ دَارِهِ فَعَلَ وَإِنْ أَبَى إِلَّا أَنْ يُعْلِنَ بِذَلِكَ فَسَلْهُ أَنْ يَرُدَّ إِلَيْكَ ذِمَّتَكَ فَإِنَّا قَدْ كَرِهْنَا أَنْ نُخْفِرَكَ وَلَسْنَا مُقِرِّيْنَ لِأَبِيْ بَكْرٍ الِاسْتِعْلَانَ قَالَتْ عَائِشَةُ فَأَتَى ابْنُ الدَّغِنَةِ إِلَى أَبِيْ بَكْرٍ فَقَالَ قَدْ عَلِمْتَ الَّذِيْ عَاقَدْتُ لَكَ عَلَيْهِ فَإِمَّا أَنْ تَقْتَصِرَ عَلَى ذَلِكَ وَإِمَّا أَنْ تَرْجِعَ إِلَيَّ ذِمَّتِيْ فَإِنِّيْ لَا أُحِبُّ أَنْ تَسْمَعَ الْعَرَبُ أَنِّيْ أُخْفِرْتُ فِيْ رَجُلٍ عَقَدْتُ لَهُ فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ فَإِنِّيْ أَرُدُّ إِلَيْكَ جِوَارَكَ وَأَرْضَى بِجِوَارِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ وَالنَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَوْمَئِذٍ بِمَكَّةَ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لِلْمُسْلِمِيْنَ إِنِّيْ أُرِيْتُ دَارَ هِجْرَتِكُمْ ذَاتَ نَخْلٍ بَيْنَ لَابَتَيْنِ وَهُمَا الْحَرَّتَانِ فَهَاجَرَ مَنْ هَاجَرَ قِبَلَ الْمَدِيْنَةِ وَرَجَعَ عَامَّةُ مَنْ كَانَ هَاجَرَ بِأَرْضِ الْحَبَشَةِ إِلَى الْمَدِيْنَةِ وَتَجَهَّزَ أَبُوْ بَكْرٍ قِبَلَ الْمَدِيْنَةِ فَقَالَ لَهُ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى رِسْلِكَ فَإِنِّيْ أَرْجُوْ أَنْ يُؤْذَنَ لِيْ فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ وَهَلْ تَرْجُوْ ذَلِكَ بِأَبِيْ أَنْتَ قَالَ نَعَمْ فَحَبَسَ أَبُوْ بَكْرٍ نَفْسَهُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم لِيَصْحَبَهُ وَعَلَفَ رَاحِلَتَيْنِ كَانَتَا عِنْدَهُ وَرَقَ السَّمُرِ وَهُوَ الْخَبَطُ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ قَالَ ابْنُ شِهَابٍ قَالَ عُرْوَةُ قَالَتْ عَائِشَةُ فَبَيْنَمَا نَحْنُ يَوْمًا جُلُوْسٌ فِيْ بَيْتِ أَبِيْ بَكْرٍ فِيْ نَحْرِ الظَّهِيْرَةِ قَالَ قَائِلٌ لِأَبِيْ بَكْرٍ هَذَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مُتَقَنِّعًا فِيْ سَاعَةٍ لَمْ يَكُنْ يَأْتِيْنَا فِيْهَا فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ فِدَاءٌ لَهُ أَبِيْ وَأُمِّيْ وَاللهِ مَا جَاءَ بِهِ فِيْ هَذِهِ السَّاعَةِ إِلَّا أَمْرٌ قَالَتْ فَجَاءَ رَسُوْلُ اللهِ فَاسْتَأْذَنَ فَأُذِنَ لَهُ فَدَخَلَ فَقَالَ النَّبِيُّ لِأَبِيْ بَكْرٍ أَخْرِجْ مَنْ عِنْدَكَ فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ إِنَّمَا هُمْ أَهْلُكَ بِأَبِيْ أَنْتَ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ فَإِنِّيْ قَدْ أُذِنَ لِيْ فِي الْخُرُوْجِ فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ الصَّحَابَةُ بِأَبِيْ أَنْتَ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم نَعَمْ قَالَ أَبُوْ بَكْرٍ فَخُذْ بِأَبِيْ أَنْتَ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِحْدَى رَاحِلَتَيَّ هَاتَيْنِ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِالثَّمَنِ قَالَتْ عَائِشَةُ فَجَهَّزْنَاهُمَا أَحَثَّ الْجِهَازِ وَصَنَعْنَا لَهُمَا سُفْرَةً فِيْ جِرَابٍ فَقَطَعَتْ أَسْمَاءُ بِنْتُ أَبِيْ بَكْرٍ قِطْعَةً مِنْ نِطَاقِهَا فَرَبَطَتْ بِهِ عَلَى فَمِ الْجِرَابِ فَبِذَلِكَ سُمِّيَتْ ذَاتَ النِّطَاقَيْنِ قَالَتْ ثُمَّ لَحِقَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَأَبُوْ بَكْرٍ بِغَارٍ فِيْ جَبَلِ ثَوْرٍ فَكَمَنَا فِيْهِ ثَلَاثَ لَيَالٍ يَبِيْتُ عِنْدَهُمَا عَبْدُ اللهِ بْنُ أَبِيْ بَكْرٍ وَهُوَ غُلَامٌ شَابٌّ ثَقِفٌ لَقِنٌ فَيُدْلِجُ مِنْ عِنْدِهِمَا بِسَحَرٍ فَيُصْبِحُ مَعَ قُرَيْشٍ بِمَكَّةَ كَبَائِتٍ فَلَا يَسْمَعُ أَمْرًا يُكْتَادَانِ بِهِ إِلَّا وَعَاهُ حَتَّى يَأْتِيَهُمَا بِخَبَرِ ذَلِكَ حِيْنَ يَخْتَلِطُ الظَّلَامُ وَيَرْعَى عَلَيْهِمَا عَامِرُ بْنُ فُهَيْرَةَ مَوْلَى أَبِيْ بَكْرٍ مِنْحَةً مِنْ غَنَمٍ فَيُرِيْحُهَا عَلَيْهِمَا حِيْنَ تَذْهَبُ سَاعَةٌ مِنْ الْعِشَاءِ فَيَبِيْتَانِ فِيْ رِسْلٍ وَهُوَ لَبَنُ مِنْحَتِهِمَا وَرَضِيْفِهِمَا حَتَّى يَنْعِقَ بِهَا عَامِرُ بْنُ فُهَيْرَةَ بِغَلَسٍ يَفْعَلُ ذَلِكَ فِيْ كُلِّ لَيْلَةٍ مِنْ تِلْكَ اللَّيَالِي الثَّلَاثِ وَاسْتَأْجَرَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَأَبُوْ بَكْرٍ رَجُلًا مِنْ بَنِي الدِّيلِ وَهُوَ مِنْ بَنِيْ عَبْدِ بْنِ عَدِيٍّ هَادِيَا خِرِّيتًا وَالْخِرِّيتُ الْمَاهِرُ بِالْهِدَايَةِ قَدْ غَمَسَ حِلْفًا فِي الِ الْعَاصِ بْنِ وَائِلٍ السَّهْمِيِّ وَهُوَ عَلَى دِيْنِ كُفَّارِ قُرَيْشٍ فَأَمِنَاهُ فَدَفَعَا إِلَيْهِ رَاحِلَتَيْهِمَا وَوَاعَدَاهُ غَارَ ثَوْرٍ بَعْدَ ثَلَاثِ لَيَالٍ بِرَاحِلَتَيْهِمَا صُبْحَ ثَلَاثٍ وَانْطَلَقَ مَعَهُمَا عَامِرُ بْنُ فُهَيْرَةَ وَالدَّلِيْلُ فَأَخَذَ بِهِمْ طَرِيْقَ السَّوَاحِلِ قَالَ ابْنُ شِهَابٍ وَأَخْبَرَنِيْ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَالِكٍ الْمُدْلِجِيُّ وَهُوَ ابْنُ أَخِيْ سُرَاقَةَ بْنِ مَالِكِ بْنِ جُعْشُمٍ أَنَّ أَبَاهُ أَخْبَرَهُ أَنَّهُ سَمِعَ سُرَاقَةَ بْنَ جُعْشُمٍ يَقُوْلُ جَاءَنَا رُسُلُ كُفَّارِ قُرَيْشٍ يَجْعَلُوْنَ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَأَبِيْ بَكْرٍ دِيَةَ كُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا مَنْ قَتَلَهُ أَوْ أَسَرَهُ فَبَيْنَمَا أَنَا جَالِسٌ فِيْ مَجْلِسٍ مِنْ مَجَالِسِ قَوْمِيْ بَنِيْ مُدْلِجٍ أَقْبَلَ رَجُلٌ مِنْهُمْ حَتَّى قَامَ عَلَيْنَا وَنَحْنُ جُلُوْسٌ فَقَالَ يَا سُرَاقَةُ إِنِّيْ قَدْ رَأَيْتُ آنِفًا أَسْوِدَةً بِالسَّاحِلِ أُرَاهَا مُحَمَّدًا وَأَصْحَابَهُ قَالَ سُرَاقَةُ فَعَرَفْتُ أَنَّهُمْ هُمْ فَقُلْتُ لَهُ إِنَّهُمْ لَيْسُوْا بِهِمْ وَلَكِنَّكَ رَأَيْتَ فُلَانًا وَفُلَانًا انْطَلَقُوْا بِأَعْيُنِنَا ثُمَّ لَبِثْتُ فِي الْمَجْلِسِ سَاعَةً ثُمَّ قُمْتُ فَدَخَلْتُ فَأَمَرْتُ جَارِيَتِيْ أَنْ تَخْرُجَ بِفَرَسِيْ وَهِيَ مِنْ وَرَاءِ أَكَمَةٍ فَتَحْبِسَهَا عَلَيَّ وَأَخَذْتُ رُمْحِيْ فَخَرَجْتُ بِهِ مِنْ ظَهْرِ الْبَيْتِ فَحَطَطْتُ بِزُجِّهِ الأَرْضَ وَخَفَضْتُ عَالِيَهُ حَتَّى أَتَيْتُ فَرَسِيْ فَرَكِبْتُهَا فَرَفَعْتُهَا تُقَرِّبُ بِيْ حَتَّى دَنَوْتُ مِنْهُمْ فَعَثَرَتْ بِيْ فَرَسِيْ فَخَرَرْتُ عَنْهَا فَقُمْتُ فَأَهْوَيْتُ يَدِيْ إِلَى كِنَانَتِيْ فَاسْتَخْرَجْتُ مِنْهَا الأَزْلَامَ فَاسْتَقْسَمْتُ بِهَا أَضُرُّهُمْ أَمْ لَا فَخَرَجَ الَّذِيْ أَكْرَهُ فَرَكِبْتُ فَرَسِيْ وَعَصَيْتُ الأَزْلَامَ تُقَرِّبُ بِيْ حَتَّى إِذَا سَمِعْتُ قِرَاءَةَ رَسُوْلِ اللهِ وَهُوَ لَا يَلْتَفِتُ وَأَبُوْ بَكْرٍ يُكْثِرُ الِالْتِفَاتَ سَاخَتْ يَدَا فَرَسِيْ فِي الأَرْضِ حَتَّى بَلَغَتَا الرُّكْبَتَيْنِ فَخَرَرْتُ عَنْهَا ثُمَّ زَجَرْتُهَا فَنَهَضَتْ فَلَمْ تَكَدْ تُخْرِجُ يَدَيْهَا فَلَمَّا اسْتَوَتْ قَائِمَةً إِذَا لِأَثَرِ يَدَيْهَا عُثَانٌ سَاطِعٌ فِي السَّمَاءِ مِثْلُ الدُّخَانِ فَاسْتَقْسَمْتُ بِالأَزْلَامِ فَخَرَجَ الَّذِيْ أَكْرَهُ فَنَادَيْتُهُمْ بِالأَمَانِ فَوَقَفُوْا فَرَكِبْتُ فَرَسِيْ حَتَّى جِئْتُهُمْ وَوَقَعَ فِيْ نَفْسِيْ حِيْنَ لَقِيْتُ مَا لَقِيْتُ مِنْ الْحَبْسِ عَنْهُمْ أَنْ سَيَظْهَرُ أَمْرُ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقُلْتُ لَهُ إِنَّ قَوْمَكَ قَدْ جَعَلُوْا فِيكَ الدِّيَةَ وَأَخْبَرْتُهُمْ أَخْبَارَ مَا يُرِيْدُ النَّاسُ بِهِمْ وَعَرَضْتُ عَلَيْهِمْ الزَّادَ وَالْمَتَاعَ فَلَمْ يَرْزَآنِيْ وَلَمْ يَسْأَلَانِيْ إِلَّا أَنْ قَالَ أَخْفِ عَنَّا فَسَأَلْتُهُ أَنْ يَكْتُبَ لِيْ كِتَابَ أَمْنٍ فَأَمَرَ عَامِرَ بْنَ فُهَيْرَةَ فَكَتَبَ فِيْ رُقْعَةٍ مِنْ أَدِيْمٍ ثُمَّ مَضَى رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ابْنُ شِهَابٍ فَأَخْبَرَنِيْ عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَقِيَ الزُّبَيْرَ فِيْ رَكْبٍ مِنْ الْمُسْلِمِيْنَ كَانُوْا تِجَارًا قَافِلِيْنَ مِنْ الشَّأْمِ فَكَسَا الزُّبَيْرُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَأَبَا بَكْرٍ ثِيَابَ بَيَاضٍ وَسَمِعَ الْمُسْلِمُوْنَ بِالْمَدِيْنَةِ مَخْرَجَ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ مَكَّةَ فَكَانُوْا يَغْدُوْنَ كُلَّ غَدَاةٍ إِلَى الْحَرَّةِ فَيَنْتَظِرُوْنَهُ حَتَّى يَرُدَّهُمْ حَرُّ الظَّهِيْرَةِ فَانْقَلَبُوْا يَوْمًا بَعْدَ مَا أَطَالُوْا انْتِظَارَهُمْ فَلَمَّا أَوَوْا إِلَى بُيُوْتِهِمْ أَوْفَى رَجُلٌ مِنْ يَهُوْدَ عَلَى أُطُمٍ مِنْ آطَامِهِمْ لِأَمْرٍ يَنْظُرُ إِلَيْهِ فَبَصُرَ بِرَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابِهِ مُبَيَّضِيْنَ يَزُوْلُ بِهِمْ السَّرَابُ فَلَمْ يَمْلِكْ الْيَهُوْدِيُّ أَنْ قَالَ بِأَعْلَى صَوْتِهِ يَا مَعَاشِرَ الْعَرَبِ هَذَا جَدُّكُمْ الَّذِيْ تَنْتَظِرُوْنَ فَثَارَ الْمُسْلِمُوْنَ إِلَى السِّلَاحِ فَتَلَقَّوْا رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِظَهْرِ الْحَرَّةِ فَعَدَلَ بِهِمْ ذَاتَ الْيَمِيْنِ حَتَّى نَزَلَ بِهِمْ فِيْ بَنِيْ عَمْرِو بْنِ عَوْفٍ وَذَلِكَ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعٍ الأَوَّلِ فَقَامَ أَبُوْ بَكْرٍ لِلنَّاسِ وَجَلَسَ رَسُوْلُ اللهِ صَامِتًا فَطَفِقَ مَنْ جَاءَ مِنْ الأَنْصَارِ مِمَّنْ لَمْ يَرَ رَسُوْلَ اللهِ يُحَيِّيْ أَبَا بَكْرٍ حَتَّى أَصَابَتْ الشَّمْسُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَأَقْبَلَ أَبُوْ بَكْرٍ حَتَّى ظَلَّلَ عَلَيْهِ بِرِدَائِهِ فَعَرَفَ النَّاسُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم عِنْدَ ذَلِكَ فَلَبِثَ رَسُوْلُ اللهِ فِيْ بَنِيْ عَمْرِو بْنِ عَوْفٍ بِضْعَ عَشْرَةَ لَيْلَةً وَأُسِّسَ الْمَسْجِدُ الَّذِيْ أُسِّسَ عَلَى التَّقْوَى وَصَلَّى فِيْهِ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ رَكِبَ رَاحِلَتَهُ فَسَارَ يَمْشِيْ مَعَهُ النَّاسُ حَتَّى بَرَكَتْ عِنْدَ مَسْجِدِ الرَّسُوْلِ صلى الله عليه وسلم بِالْمَدِيْنَةِ وَهُوَ يُصَلِّيْ فِيْهِ يَوْمَئِذٍ رِجَالٌ مِنْ الْمُسْلِمِيْنَ وَكَانَ مِرْبَدًا لِلتَّمْرِ لِسُهَيْلٍ وَسَهْلٍ غُلَامَيْنِ يَتِيْمَيْنِ فِيْ حَجْرِ أَسْعَدَ بْنِ زُرَارَةَ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم حِيْنَ بَرَكَتْ بِهِ رَاحِلَتُهُ هَذَا إِنْ شَاءَ اللهُ الْمَنْزِلُ ثُمَّ دَعَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْغُلَامَيْنِ فَسَاوَمَهُمَا بِالْمِرْبَدِ لِيَتَّخِذَهُ مَسْجِدًا فَقَالَا لَا بَلْ نَهَبُهُ لَكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَأَبَى رَسُوْلُ اللهِ أَنْ يَقْبَلَهُ مِنْهُمَا هِبَةً حَتَّى ابْتَاعَهُ مِنْهُمَا ثُمَّ بَنَاهُ مَسْجِدًا وَطَفِقَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَنْقُلُ مَعَهُمْ اللَّبِنَ فِيْ بُنْيَانِهِ وَيَقُوْلُ وَهُوَ يَنْقُلُ اللَّبِنَ
هَذَا الْحِمَالُ لَا حِمَالَ خَيْبَرْ * هَذَا أَبَرُّ رَبَّنَا وَأَطْهَـرْ
وَيَقُوْلُ
اللَّهُمَّ إِنَّ الأَجْرَ أَجْرُ الْآخِرَهْ * اِرْحَمْ الأَنْصَارَ وَالْمُهَاجِرَهْ
فَتَمَثَّلَ بِشِعْرِ رَجُلٍ مِنْ الْمُسْلِمِيْنَ لَمْ يُسَمَّ لِيْ قَالَ ابْنُ شِهَابٍ وَلَمْ يَبْلُغْنَا فِي الأَحَادِيْثِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ تَمَثَّلَ بِبَيْتِ شِعْرٍ تَامٍّ غَيْرَ هَذَا الْبَيْتِ
هَذَا الْحِمَالُ لَا حِمَالَ خَيْبَرْ * هَذَا أَبَرُّ رَبَّنَا وَأَطْهَـرْ
وَيَقُوْلُ
اللَّهُمَّ إِنَّ الأَجْرَ أَجْرُ الْآخِرَهْ * اِرْحَمْ الأَنْصَارَ وَالْمُهَاجِرَهْ
فَتَمَثَّلَ بِشِعْرِ رَجُلٍ مِنْ الْمُسْلِمِيْنَ لَمْ يُسَمَّ لِيْ قَالَ ابْنُ شِهَابٍ وَلَمْ يَبْلُغْنَا فِي الأَحَادِيْثِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ تَمَثَّلَ بِبَيْتِ شِعْرٍ تَامٍّ غَيْرَ هَذَا الْبَيْتِ
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর স্ত্রী ‘আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার মাতা পিতাকে কখনো ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন পালন করতে দেখিনি এবং এমন কোন দিন কাটেনি যেদিন সকালে কিংবা সন্ধ্যায় রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের বাড়িতে আসেননি। যখন মুসলামানগণ অতিষ্ঠ হয়ে পড়লেন, তখন আবূ বকর (রাঃ) হিজরত করে আবিসিনিয়ায় যাওয়ার উদ্দেশে বের হলেন। শেষ বারকুল গিমাদ পৌঁছলে ইব্নু দাগিনার সাথ তাঁর সাক্ষাৎ হয়। সে ছিল তার গোত্রের নেতা। সে বলল, হে আবূ বক্র! কোথায় যাচ্ছেন? উত্তর আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমার স্ব-জাতি আমাকে বের করে দিয়েছে তাই আমি মনে করছি, পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াব এবং আমার প্রতিপালকের ইবাদত করব। ইব্নু দাগিনা বলল, হে আবূ বকর (রাঃ)! আপনার মত ব্যক্তি বের হতে পারে না এবং বের করাও হতে পারে না। আপনি তো নিঃস্বদের জন্য উপার্জন করে দেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন, অক্ষমদের বোঝা নিজে বহন করেন, মেহমানের মেহমানদারী করে থাকেন এবং সত্য পথের পথিকদের বিপদ আপদে সাহায্য করেন। সুতরাং আমি আপনাকে আশ্রয় দিচ্ছি, আপনাকে যাবতীয় সহযোগিতার ওয়াদা করছি। আপনি ফিরে যান এবং নিজ শহরে আপনার রবের ইবাদত করুন। আবূ বকর (রাঃ) ফিরে এলেন। তাঁর সঙ্গে ইব্নু দাগিনাও এল। ইব্নু দাগিনা বিকেল বেলা কুরাইশের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে গেল এবং তাদেরকে বলল, আবূ বাক্রের মত লোক দেশ হতে বের হতে পারে না এবং তাকে বের করে দেয়া যায় না। আপনারার কি এমন ব্যাক্তিকে বের করবেন, যে নিঃস্বদের জন্য উপার্জন করেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন, অক্ষমের বোঝা নিজে বহন করেন, মেহমানের মেহমানদারী করেন এবং ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার কারণে বিপদ এলে সাহায্য করেন। ইব্নু দাগিনার আশ্রয়দান কুরাইশগণ মেনে নিল এবং তারা ইব্নু দাগিনাকে বলল, তুমি আবূ বকরকে বলে দাও, তিনি যেন তাঁর রবের ইবাদত তাঁর ঘরে করেন। সলাত সেখানেই আদায় করেন, ইচ্ছা মাফিক কুরআন তিলাওয়াত করবেন। কিন্তু এর দ্বারা আমাদের যেন কষ্ট না দেন। আর এসব ব্যাপারে যেন প্রকাশ্যে না করেন। কেননা, আমরা আমাদের মেয়েদের ও ছেলেদের ফিত্নায় পড়ে যাওয়ার ভয় করি। ইব্নু দাগিনা এসব কথা আবূ বকর (রাঃ) কে বলে দিলেন। সে মতে কিছুকাল আবূ বকর (রাঃ) নিজের ঘরে তাঁর রবের ইবাদত করতে লাগলেন। সলাত প্রকাশ্যে আদায় করতেন না এবং ঘরেই কুরআন তিলওয়াত করতেন। এরপর আবূ বাকরের মনে খেয়াল জাগল। তাই তিনি তাঁর ঘরের পার্শ্বেই একটি মসজিদ তৈরি করে নিলেন। এতে তিনি সলাত আদায় করতে ও কুরআন পড়তে লাগলেন। এতে তাঁর কাছে মুশরিকা মহিলা ও যুবকরা ভীড় জমাতে লাগল। তারা আবূ বকর (রাঃ) – এর একাজে বিস্ময়বোধ করত এবং তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকত। আবূ বকর (রাঃ) ছিলেন একজন ক্রন্দনকারী ব্যক্তি, তিনি যখন কুরআন পড়তেন তখন তাঁর অশ্রু সামলিয়ে রাখতে পারতেন না। এ ব্যাপারটি মুশরিকদের নেতৃস্থানীয় কুরাইশদের ভীত করে তুলল এবং তারা ইব্নু দাগিনাকে ডেকে পাঠান। সে এল। তারা তাকে বলল, তোমার আশ্রয় প্রদানের কারণে আমরাও আবূ বক্রকে আশ্রয় দিয়েছিলাম এই শর্তে যে, তিনি তাঁর রবের ইবাদত তাঁর ঘরে করবেন কিন্তু সে শর্ত তিনি ভঙ্গ করেছেন এবং নিজ গৃহের পাশে একটি মসজিদ তৈরি করে প্রকাশ্যে সলাত ও তিলওয়াত শুরু করেছেন। আমাদের ভয় হচ্ছে, আমাদের মহিলা ও সন্তানরা ফিতনায় পড়ে যাবে। কাজেই তুমি তাঁকে নিষেধ করে দাও। তিনি তাঁর রবের ইবাদত তাঁর গৃহের ভিতর সীমাবদ্ধ রাখতে চাইলে তিনি তা করতে পারেন। আর যদি তিনি তা অমান্য করে প্রকাশ্যে তা করতে চান তবে তাঁকে তোমার আশ্রয় প্রদান ও দায় দায়িত্ব ফিরিয়ে দিতে বল। আমরা তোমার আশ্রয় দানের ব্যাপারে বিশ্বাসঘাতকতা করা অত্যন্ত অপছন্দ করি, আবার আবূ বক্রকেও এভাবে প্রকাশ্যে ‘ইবাদাত করার জন্য ছেড়ে দিতে পারি না। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, ইব্নু দাগিনা এসে আবূ বকর (রাঃ) – কে বলল, আপনি অবশ্যই জানেন যে, কী শর্তে আমি আপনার জন্য ওয়াদাবদ্ধ হয়েছিলাম। আপনি হয়ত তাতে সীমিত থাকবেন অন্যথায় আমার জিম্মাদারী আমাকে ফিরত দিবেন। আমি এ কথা মোটেই পছন্দ করি না যে আমার সাথে চুক্তিবদ্ধ এবং আমার আশ্রয়প্রাপ্ত ব্যক্তির প্রতি আমার বিশ্বসঘাতকতার অপবাদ আরববাসীর নিকট প্রকাশিত হোক। আবু বক্র (রাঃ) তাকে বললেন, আমি তোমার আশ্রয় তোমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি। আমি আল্লাহ্র আশ্রয়ের উপর সন্তুষ্ট আছি। এ সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কায় ছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুসলিমদের বললেন, আমাকে তোমাদের হিজরতের স্থান (স্বপ্নে) দেখান হয়েছে। সে স্থানে খেজুর বাগান রয়েছে এবং তা দুইটি পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত। এরপর যাঁরা হিজরত করতে চাইলেন, তাঁরা মদীনার দিকে হিজরত করলেন। আর যাঁরা হিজরত করে আবিসিনিয়ায় চলে গিয়েছিলেন, তাঁদেরও অধিকাংশ সেখান হতে ফিরে মাদীনহয় চলে আসলেন। আবূ বকর (রাঃ) ও মদীনায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিলেন। তখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেন, তুমি অপেক্ষা কর। আশা করছি আমাকেও অনুমতি দেয়া হবে। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমার পিতা আপনার জন্য কুরবান [১]! আপনিও কি হিজরতের আশা করছেন? তিনি বললেন, হাঁ। তখন আবূ বকর (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর সঙ্গ পাওয়ার জন্য নিজেকে হিজরত হতে বিরত রাখলেন এবং তাঁর নিকট যে দু’টি উট ছিল এ দুটি চার মাস পর্যন্ত বাবলা গাছের পাতা খাওয়াতে থাকেন।
ইব্নু শিহাব ‘উরওয়াহ (রাঃ) সূত্রে ‘আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, ইতিমধ্যে একদিন আমরা ঠিক দুপুর বেলায় আবূ বকর (রাঃ) এর ঘরে উপবিষ্ট ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে আবূ বক্রকে খবর দিল যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মস্তক আবৃত অবস্থায় আসছেন। তা এমন সময় ছিল যে সময় তিনি পূর্বে কথনো আমাদের এখানে আসেননি। আবূ বকর (রাঃ) তাঁর আসার কথা শুনে বললেন, আমার মাতাপিতা তাঁর প্রতি কুরবান। আল্লাহ্র কসম, তিনি এ সময় নিশ্চয় কোন গুরুত্বপূর্ণ কারণেই আসছেন। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পৌঁছে অনুমতি চাইলেন। তাঁকে অনুমতি দেয়া হল। প্রবেশ করে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বক্রকে বললেন, এখানে অন্য যারা আছে তাদের বের করে দাও। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আমার পিতামাতা আপনার প্রতি কুরবান! এখানে তো আপনারই পরিবার। তখন তিনি বললেন, আমাকেও হিজরতের অনুমতি দেয়া হয়েছ। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান! আমি আপনার সফর সঙ্গী হতে ইচ্ছুক। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ঠিক আছে। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আমার পিতামাতা কুরবান! আমার এ দু’টি উট হতে আপনি যে কোন একটি নিন। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তবে মূল্যের বিনিময়ে। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমরা তাঁদের জন্য যাবতয়ি ব্যবস্থা অতি শীঘ্র সম্পন্ন করলাম এবং একটি থলের মধ্যে, তাঁদের খাদ্রসামগ্রী গুছিয়ে দিলাম। আমার বোন আসমা বিনতে আবূ বকর (রাঃ) তার কোমর বন্ধের কিছু অংশ কেটে সে থলের মুখ বেঁধে দিলেন। এ কারণেই তাঁকে ‘জাতুন নেতাক’ (কোমর বন্ধ ওয়ালী) বলা হত। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আবূ বকর (রাঃ) সাওর পর্বতের একটি গুহায় আশ্রয় নিলেন। তাঁরা সেখানে তিনটি রাত অবস্থান করলেন। ‘আবদুল্লাহ ইব্নু আবূ বকর (রাঃ) তাঁদের পাশেই রাত্রি যাপন করতেন। তিনি ছিলেন একজন তীক্ষ্ম বুদ্ধিসম্পন্ন তরুণ। তিনি শেষ রাত্রে ওখান হতে বেরিয়ে মক্কায় রাত্রি যাপনকারী কুরাইশদের সঙ্গে মিলিত হতেন এবং তাঁদের দু’জনের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র করা হত তা মনোযোগ দিয়ে শুনতের, ও স্মরণ রাখতেন। যখন আঁধার ঘনিয়ে আসত তখন তিনি সংবাদ নিয়ে তাঁদের উভয়ের কাছে যেতেন। আবূ বকর (রাঃ) – এর গোলাম আমির ইব্নু যুহাইরাহ তাঁদের কাছেই দুধালো বকরীর পাল চরিয়ে বেড়াত। রাতের কিছু সময় চলে গেলে পরে সে বকরীর পাল নিয়ে তাদেঁর নিকটে যেত এবং তাঁরা দু’জন দুধ পান করে আরামে রাত্রিযাপন করতেন। তাঁরা বকরীর দুধ দোহন করে সাথে সাথেই পান করতেন। তারপর শেষ রাতে আমির ইব্নু ফুহাইরাহ বকরীগুলি হাঁকিয়ে নিয়ে যেত। এ তিন রাতের প্রতি রাতে সে এমনই করল। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আবূ বকর (রাঃ) বানী আবদ ইব্নু আদি গোত্রের এক ব্যক্তিকে মজুরির বিনিময়ে ‘খির্রীত’ (পথ প্রদর্শক) নিযুক্ত করেছিলেন। দক্ষ পথপ্রদর্শককে ‘খির্রীত’ বলা হয়। আদী গোত্রের সাথে তার বন্ধুত্ব ছিল। সে ছিল কাফির কুরাইশের ধর্মাবলম্বী। তাঁরা উভয়ে তাকে বিশ্বস্ত মনে করে তাঁদের উট দু’টি তার হাতে দিয়ে দিলেন এবং তৃতীয় রাত্রের পরে সকালে উট দু’টি সাওর গুহার নিকট নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করলেন। আর সে যথা সময়ে তা পৌঁছিয়ে দিল। আর আমির ইব্নু ফুহাইরাহ ও পথপ্রদর্শক তাঁদের উভয়ের সঙ্গে চলল। প্রদর্শক তাদেঁর নিয়ে উপকূলের পথ ধরে চলতে লাগল।
আবদুর রহমান ইব্নু মালিক মুদলেজী আমাকে বলেছেন, তিনি সুরাকাহ ইব্নু মালিকের ভ্রাতুষ্পুত্র। তার পিতা তাকে বলেছেন, তিনি সুরাকাহ ইব্নু জু’শুমকে বলতে শুনেছেন যে, আমাদের নিকট কুরাইশী কাফেরদের দূত আসল এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আবূ বকর (রাঃ) এর দু’জনের যে কোন একজনকে যে হত্যা করবে অথবা বন্দী করতে পারবে তাকে পুরষ্কার দেয়ার ঘোষণা দিল। আমি আমার কওম বনী মুদলীজের এক মজলিসে উপবিষ্ট ছিলাম। তখন তাদের নিকট হতে এক ব্যক্তি এসে আমাদের নিকটে দাঁড়াল। আমরা বসাই ছিলাম। সে বলল, হে সুরাকাহ! আমি এই মাত্র উপকূলের পথে কয়েকজন মানুষকে যেতে দেখলাম। আমার ধারণা, এরা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সহযাত্রীরা হবেন। সুরাকাহ বলেন, আমি বুঝতে পারলাম যে এঁরা তাঁরাই হবেন। কিন্তু তাকে বললাম, এরা তাঁরা নয়, বরং তুমি অমুক অমুককে দেখছ। এরা এই মাত্র আমাদের সম্মুখ দিয়ে চলে গেল। তারপর আমি কিছুক্ষণ মজলিসে অবস্থান করে চলে এলাম এবং আমার দাসীকে আদেশ করলাম, তুমি আমার ঘোড়াটি বের করে নিয়ে যাও এবং অমুক টিলার আড়ালে ঘোড়াটি ধরে দাঁড়িয়ে থাক। আমি আমার বর্শা হাতে নিলাম এবং বাড়ির পিছন দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। বর্শাটির এক প্রান্ত হাতে ধরে অপর প্রান্ত মাটি হেচড়ানো অবস্থায় আমি টেনে নিয়ে চলছিলাম ঐ অবস্থায় বর্শার মাটি হেচড়ানো অংশ দ্বারা মাটির উপর রেখাপাত করতে করতে আমার ঘোড়ার নিকট পৌঁছলাম এবং ঘোড়ায় আরোহণ করে তাকে খুব দ্রুত ছুটালাম। সে আমাকে নিয়ে ছুটে চলল। আমি প্রায় তাদের নিকট পৌঁছে গেলাম, এমন সময় আমার ঘোড়াটি হোঁচট খেয়ে আমাকে নিয়ে পড়ে গেল। আমিও তার পিঠ হতে ছিটকে পড়লাম। তারপর আমি উঠে দাঁড়ালাম এবং তূণের দিকে হাত বাড়ালাম এবং তা হতে তীরগুলি বের করলাম ও তীর নিক্ষেপের মাধ্যমে ভাগ্য পরীক্ষা করে নিলাম যে আমি তাদের কোন ক্ষতি করতে পারনো কি-না। তখন তীরগুলি দুর্ভাগ্যবশতঃ এমনভাবে বেরিয়ে এল যে, ভাগ্য নির্ধারণের বেলায় এমন হওয়া পছন্দ করি না। আমি আবার ভাগ্য পরীক্ষার ফলাফল অমান্য করে অশ্বারোহণ করে সম্মুখ পারে এগুতে লাগলাম। আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর এত নিকটবর্তী হয়ে গেলাম যে তাঁর তিলাওয়াতের আওয়ায শুনতে পাচ্ছিলাম। তিনি ফিরে তাকাচ্ছিলেন না কিন্তু আবূ বকর (রাঃ) বারবার তাকিয়ে দেখছিলেন। এমন সময় হঠাৎ আমার ঘোড়ার সামনের পা দু’টি হাঁটু পর্যন্ত মাটিতে গেড়ে গেলে এবং আমি তার উপর হতে পড়ে গেলাম। তখন ঘোড়াটিকে ধমক দিলাম, সে দাঁড়াতে ইচ্ছা করল, কিন্তু পা দু’টি বের করতে পারছিল না। শেষে যখন ঘোড়াটি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে উঠল, তখন হঠাৎ তার সামনের পা দু’টি বের করতে পারছিল না। অবশেষে যখন ঘোড়াটি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে উঠল, তখন হঠাৎ তার সামনের পা দু’টি যেখানে গেড়ে ছিল সেখান হতে ধুঁয়ার মত ধূলি আকাশের দিকে উঠতে লাগল। তখন আমি তীর দিয়ে ভাগ্য পরীক্ষা করলাম। এবারও যা আমার অপছন্দনীয় তা-ই প্রকাশ পেল। তখন উচ্চস্বরে তাঁদের নিরাপত্তা চাইলাম। এতে তাঁরা থেমে গেলেন এবং আমি আমার ঘোড়ায় আরোহণ করে এলাম। আমি যখন এমন অবস্থায় বার বার বাধাপ্রাপ্ত ও বিপদে পড়ছিলাম তখনই আমার অন্তরে এ বিশ্বাস দৃঢ় হয়েছিল যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এ মিশনটি অচিরেই প্রভাব বিস্তার করবে। তখন আমি তাঁকে বললাম আপনার কওম আপনাকে ধরে দিতে পারলে একশ উট পুরষ্কার ঘোষণা করেছে। মক্কায় কাফিরগণ তাঁর সম্পর্কে যে ইচ্ছা করেছে তা তাঁকে জানালাম এবং আমি তাদের জন্য কিছু খাবার ও অন্যান্য সামগ্রী পেশ করলাম। তাঁরা তা হতে কিছুই নিলেন না। আর আমার কাছে এ কথা ছাড়া কিছুই চাইলেন নাঃ “আমাদের খবরটি গোপন রেখ”। এরপর আমি আমাকে একটি নিরাপত্তা লিপি লিখে দেয়ার জন্য তাঁকে অনুরোধ করলাম। তখন তিনি ‘আমির ইব্নু ফুহাইরাহকে আদেশ দিলেন। তিনি এক টুকরো চামড়ায় তা লিখে দিলেন। তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রওয়ানা দিলেন।
ইব্নু শিহাব (রহঃ) বলেন, ‘উরওয়াহ ইব্নু যুবায়র (রাঃ) আমাকে বলেছেন, পথিমধ্যে যুবায়রের সাথে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাক্ষাত হয়। তিনি মুসলমানদের একটি বণিক কাফেলার সাথে সিরিয়া হতে ফিরছিলেন। তখন যুবায়র (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আবূ বকর (রাঃ)- কে সাদা রঙ্গের পোশাক দান করলেন। এদিকে মদীনায় মুসলিমগণ শুলেন যে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা হতে মদীনার পথে রওয়ানা হয়েছেন। তাই তাঁরা প্রতিদিন সকালে মদীনার হার্রা পর্যন্ত গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন, দুপুরে রোদ প্রখর হলে তারা ঘরে ফিরে আসতেন। একদিন তারা পূর্বাপেক্ষা বেশি সময় প্রতীক্ষা করার পর নিজ নিজ গৃহে ফিরে গেলেন। এমন সময় এক ইয়াহূদী একটি টিলায় আরোহণ করে এদিক ওদিক কি যেন দেখছিল। তখন সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাথীসঙ্গীদেরকে সাদা পোশাক পর অবস্থায় মরীচিকাময় মরুভূমিরউপর দিয়ে আগমন করতে দেখতে পেল। ইয়াহূদী তখন নিজেকে সংবরণ করতে না পেরে উচ্চ:স্বরে চীৎকার করে বলে উঠল, হে আরব সম্প্রদায়! এইতো সে ভাগ্যবান ব্যক্তি – যার জন্য তোমরা অপেক্ষা করছে। মুসলিমগণ তাড়াতাড়ি হাতিয়ার তুলে নিয়ে মদীনার হার্রার উপকণ্ঠে নিয়ে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর সঙ্গে মিলিত হলেন। তিনি সকলকে নিয়ে ডানদিকে মোড় নিয়ে বনু ‘আমর ইব্নু ‘আউফ গোত্রে অবতরণ করলেন। এদিনটি ছিল রবি’উল আ্উয়াল মাসের সোমবার। আবূ বকর (রাঃ) দাঁড়িয়ে লোকদের সঙ্গে কথা বলতে লাগলেন। আর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নীরব রইলেন। আনসারদের মধ্য হতে যাঁরা এ পর্যন্ত রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – কে দেখেননি তাঁরা আবূ বকর (রাঃ) – কে সালাম করতে লাগলেন, তারপর যখন রৌদ্রের উত্তাপ নবীজী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর পড়তে লাগল এবং আবূ বকর (রাঃ) অগ্রসর হয়ে তাঁর চাদর দিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপর ছায়া করে দিলেন তখন লোকেরা রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – কে চিনতে পারল।
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বনু ‘আমার ইব্নু ‘আউফ গোত্রে দশদিনের চেয়ে কিছু বেশি সময় কাটালেন এবং সে মসজিদের ভিত্তি স্থাপর করেন, যা তাক্ওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত! রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এতে সলাত আদায় করেন। তারপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উঁটনীতে আরোহন করে রওয়ানা হলেন। লোকেরাও তাঁর সঙ্গে চলতে লাগলেন। মদীনায় মসজিদে নাবাবীর স্থানে পৌঁছে উটনীটি বসে পড়ল। সে সময় ঐ স্থানে কতিপয় মুসলিম সলাত আদায় করতেন। এ জায়গাটি ছিল আসআদ ইব্নু যুরারাহ এর আশ্রয়ে পালিত সাহল ও সুহায়েল নামক দু’জন ইয়াতীম বালকের খেজুর শুকাবার স্থান। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে নিয়ে উটনীটি যখন এ স্থানে বসে পড়ল, তখন তিনি বললে, ইন্ শা আল্লাহ্, এ স্থানটিই হবে আবাসস্থল। তারপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেই বালক দু’টিকে ডেকে পাঠালেন এবং মসজিদ তৈরির জন্য তাদের কাছে জায়গাটি মূল্যের বিনিময়ে বিক্রয়ের আলোচনা করলেন। তারা বলল, হে আল্লাহ্র রসূল! বরং এটি আমরা আপনার জন্য বিনুমূল্যে দিচ্ছি। কিন্তু রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের কাছ হতে বিনামূল্যে গ্রহণে অসম্মতি জানালেন এবং অবশেষে স্থানটি তাদের হতে খরীদ করে নিলেন। তারপর সেই স্থানে তিনি মসজিদ তৈরি করলেন। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে নির্মাণকালে সহাবা কেরামের সঙ্গে ইট বহন করছিলেন এবং ইট বহনের সময় তিনি আবৃত্তি করছিলেনঃ
এ বোঝা খায়বারের বোঝা বহন নয়।
ইয়া রব, এর বোঝা অত্যন্ত পূণ্যময় ও অতি পবিত্র।
তিনি আরো বলছিলেন,
হে আল্লাহ! পরকালের প্রতিদানই প্রকৃত প্রতিদান।
সুতরাং আনসার ও মুহাজিরদের প্রতি অনুগ্রহ করুন।
এক মুসলিম কবির কবিতা আবৃত্তি করেন, যার নাম আমাকে বলা হয়নি। ইব্নু শিহাব (রহঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এছাড়া অপর কোন পূর্ণ কবিতা পাঠ করছেন বলে, কোন কথা আমার কাছে পৌঁছেনি।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬১৮ শেষাংশ, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬২২ শেষাংশ)
[১] এটি একটি আরবী ভাষার বাকরীতি; কেননা কুরবান বা উৎসর্গ একমাত্র আল্লাহরই জন্যই হতে হবে। অতএব এর অর্থঃ আপনার জন্য আমি আমার জন্মদাতা পিতাকেও পরিত্যাগ করতে প্রস্তুত আছি।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯০৭
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ أَبِيْ شَيْبَةَ حَدَّثَنَا أَبُوْ أُسَامَةَ حَدَّثَنَا هِشَامٌ عَنْ أَبِيْهِ وَفَاطِمَةَ عَنْ أَسْمَاءَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا صَنَعْتُ سُفْرَةً لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأَبِيْ بَكْرٍ حِيْنَ أَرَادَا الْمَدِيْنَةَ فَقُلْتُ لِأَبِيْ مَا أَجِدُ شَيْئًا أَرْبِطُهُ إِلَّا نِطَاقِيْ قَالَ فَشُقِّيهِ فَفَعَلْتُ فَسُمِّيتُ ذَاتَ النِّطَاقَيْنِ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ أَسْمَاءُ ذَاتَ النِّطَاقِ
আসমাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং আবু বক্র (রাঃ) যখন মাদিনাহ্য় যাওয়ার ইচ্ছা করলেন, তখন আমি তাঁদের জন্য সফরের খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত করলাম। আর আমার পিতাকে বললাম, থলের মুখ বাঁধার জন্য আমার কোমরবন্দ ছাড়া অন্য কিছু পাচ্ছি না। তিনি বললেন, ওটা তুমি টুকরো করে নাও। আমি তাই করলাম। এ কারণে আমার নাম হয়ে গেল, ‘যাতুন্ নিতাকাইন’ (কোমরবন্দ দু’ভাগে বিভক্তকারিনী)।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬১৯, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬২৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯০৮
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ أَبِيْ إِسْحَاقَ قَالَ سَمِعْتُ الْبَرَاءَ قَالَ لَمَّا أَقْبَلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِلَى الْمَدِيْنَةِ تَبِعَهُ سُرَاقَةُ بْنُ مَالِكِ بْنِ جُعْشُمٍ فَدَعَا عَلَيْهِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَسَاخَتْ بِهِ فَرَسُهُ قَالَ ادْعُ اللهَ لِيْ وَلَا أَضُرُّكَ فَدَعَا لَهُ قَالَ فَعَطِشَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَمَرَّ بِرَاعٍ قَالَ أَبُوْ بَكْرٍ فَأَخَذْتُ قَدَحًا فَحَلَبْتُ فِيْهِ كُثْبَةً مِنْ لَبَنٍ فَأَتَيْتُهُ فَشَرِبَ حَتَّى رَضِيْتُ
বারা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদিনাহ্র দিকে যাচ্ছিলেন তখন সুরাকাহ ইব্নু মালিক ইব্নু জ’শুম তাঁর পিছনে ধাওয়া করল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জন্য বদ্দু’আ করলেন। ফলে তার ঘোড়াটি তাকে নিয়ে মাটিতে দেবে গেল। তখন সে বলল, আপনি, আল্লাহ্র কাছে আমার জন্য দু’আ করুন। আমি আপনার কোন ক্ষতি করব না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জন্য দু’আ করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এক সময় রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তৃষ্ণার্ত হলেন। তখন তিনি এক রাখালের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আবু বক্র সিদ্দীক (রাঃ) বলেন, তখন আমি একটি বাটি নিয়ে এতে কিছু দুধ দোহন করে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে নিয়ে এলাম, তিনি এমনভাবে তা পান করলেন যে, আমি তাতে সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬২০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬২৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯০৯
حَدَّثَنِيْ زَكَرِيَّاءُ بْنُ يَحْيَى عَنْ أَبِيْ أُسَامَةَ عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ أَسْمَاءَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّهَا حَمَلَتْ بِعَبْدِ اللهِ بْنِ الزُّبَيْرِ قَالَتْ فَخَرَجْتُ وَأَنَا مُتِمٌّ فَأَتَيْتُ الْمَدِيْنَةَ فَنَزَلْتُ بِقُبَاءٍ فَوَلَدْتُهُ بِقُبَاءٍ ثُمَّ أَتَيْتُ بِهِ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَوَضَعْتُهُ فِيْ حَجْرِهِ ثُمَّ دَعَا بِتَمْرَةٍ فَمَضَغَهَا ثُمَّ تَفَلَ فِيْ فِيْهِ فَكَانَ أَوَّلَ شَيْءٍ دَخَلَ جَوْفَهُ رِيْقُ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ حَنَّكَهُ بِتَمْرَةٍ ثُمَّ دَعَا لَهُ وَبَرَّكَ عَلَيْهِ وَكَانَ أَوَّلَ مَوْلُوْدٍ وُلِدَ فِي الْإِسْلَامِ تَابَعَهُ خَالِدُ بْنُ مَخْلَدٍ عَنْ عَلِيِّ بْنِ مُسْهِرٍ عَنْ هِشَامٍ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ أَسْمَاءَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّهَا هَاجَرَتْ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَهِيَ حُبْلَى
আসমাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, তখন তাঁর পেটে ছিলেন আবদুল্লাহ্ ইব্নু যুবায়ের, তিনি বলেন, আমি এমন সময় হিজরত করি যখন আমি আসন্ন প্রসবা। আমি মাদিনাহয় এসে কুবা’তে অবতরণ করি। এ কুবাতেই আমি পুত্র সন্তানটি প্রসব করি। এরপর আমি তাকে নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর কাছে এসে তাঁর কোলে দিলাম। তিনি একটি খেজুর আনলেন এবং তা চিবিয়ে তার মুখে থুথু দিলেন। কাজেই সর্বপ্রথম যে বস্তুটি আব্দুলাহর পেটে গেল তা হল নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর থুথু। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সামান্য চিবান খেজুর নবজাতকের মুখের ভিতরের তালুর অংশে লাগিয়ে দিলেন। এরপর তার জন্য দু’আ করলেন এবং বরকত চাইলেন। তিনি হলেন প্রথম নবজাতক সন্তান যিনি হিজরতের পর মুসলিম পরিবারে জন্মলাভ করেন। খালিদ ইব্নু মাখলদ (রহঃ) উক্ত রেওয়াত বর্ণনায় যাকারিয়া ইব্নু ইয়াহ্ইয়া (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন। এতে রয়েছে যে, আসমা (রাঃ) গর্ভবতী অবস্থায় হিজরত করে রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকটে আসেন।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬২১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬২৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯১০
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ عَنْ أَبِيْ أُسَامَةَ عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ أَوَّلُ مَوْلُوْدٍ وُلِدَ فِي الْإِسْلَامِ عَبْدُ اللهِ بْنُ الزُّبَيْرِ أَتَوْا بِهِ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَأَخَذَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم تَمْرَةً فَلَاكَهَا ثُمَّ أَدْخَلَهَا فِيْ فِيْهِ فَأَوَّلُ مَا دَخَلَ بَطْنَهُ رِيْقُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, (হিজরতের পর) মুসলিম পরিবারে সর্বপ্রথম আব্দুল্লাহ ইব্নু যুবায়েরই জন্মগ্রহন করেন। তাঁরা তাকে নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর কাছে এলেন। তিনি একটি খেজুর চিবিয়ে তার মুখে দিলেন। কাজেই প্রথম যে জিনিসটি তার পেটে গেল তা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর থুথু।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬২২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬২৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯১১
حَدَّثَنِي مُحَمَّدٌ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الصَّمَدِ، حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ صُهَيْبٍ، حَدَّثَنَا أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ أَقْبَلَ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى الْمَدِينَةِ وَهْوَ مُرْدِفٌ أَبَا بَكْرٍ، وَأَبُو بَكْرٍ شَيْخٌ يُعْرَفُ، وَنَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم شَابٌّ لاَ يُعْرَفُ، قَالَ فَيَلْقَى الرَّجُلُ أَبَا بَكْرٍ فَيَقُولُ يَا أَبَا بَكْرٍ، مَنْ هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْكَ فَيَقُولُ هَذَا الرَّجُلُ يَهْدِينِي السَّبِيلَ. قَالَ فَيَحْسِبُ الْحَاسِبُ أَنَّهُ إِنَّمَا يَعْنِي الطَّرِيقَ، وَإِنَّمَا يَعْنِي سَبِيلَ الْخَيْرِ، فَالْتَفَتَ أَبُو بَكْرٍ، فَإِذَا هُوَ بِفَارِسٍ قَدْ لَحِقَهُمْ، فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، هَذَا فَارِسٌ قَدْ لَحِقَ بِنَا. فَالْتَفَتَ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ” اللَّهُمَّ اصْرَعْهُ ”. فَصَرَعَهُ الْفَرَسُ، ثُمَّ قَامَتْ تُحَمْحِمُ فَقَالَ يَا نَبِيَّ اللَّهِ مُرْنِي بِمَا شِئْتَ. قَالَ ” فَقِفْ مَكَانَكَ، لاَ تَتْرُكَنَّ أَحَدًا يَلْحَقُ بِنَا ”. قَالَ فَكَانَ أَوَّلَ النَّهَارِ جَاهِدًا عَلَى نَبِيِّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم، وَكَانَ آخِرَ النَّهَارِ مَسْلَحَةً لَهُ، فَنَزَلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم جَانِبَ الْحَرَّةِ، ثُمَّ بَعَثَ إِلَى الأَنْصَارِ، فَجَاءُوا إِلَى نَبِيِّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَسَلَّمُوا عَلَيْهِمَا، وَقَالُوا ارْكَبَا آمِنَيْنِ مُطَاعَيْنِ. فَرَكِبَ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَبُو بَكْرٍ، وَحَفُّوا دُونَهُمَا بِالسِّلاَحِ، فَقِيلَ فِي الْمَدِينَةِ جَاءَ نَبِيُّ اللَّهِ، جَاءَ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم. فَأَشْرَفُوا يَنْظُرُونَ وَيَقُولُونَ جَاءَ نَبِيُّ اللَّهِ، جَاءَ نَبِيُّ اللَّهِ. فَأَقْبَلَ يَسِيرُ حَتَّى نَزَلَ جَانِبَ دَارِ أَبِي أَيُّوبَ، فَإِنَّهُ لَيُحَدِّثُ أَهْلَهُ، إِذْ سَمِعَ بِهِ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلاَمٍ وَهْوَ فِي نَخْلٍ لأَهْلِهِ يَخْتَرِفُ لَهُمْ، فَعَجِلَ أَنْ يَضَعَ الَّذِي يَخْتَرِفُ لَهُمْ فِيهَا، فَجَاءَ وَهْىَ مَعَهُ، فَسَمِعَ مِنْ نَبِيِّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ رَجَعَ إِلَى أَهْلِهِ، فَقَالَ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” أَىُّ بُيُوتِ أَهْلِنَا أَقْرَبُ ”. فَقَالَ أَبُو أَيُّوبَ أَنَا يَا نَبِيَّ اللَّهِ، هَذِهِ دَارِي، وَهَذَا بَابِي. قَالَ ” فَانْطَلِقْ فَهَيِّئْ لَنَا مَقِيلاً ”. قَالَ قُومَا عَلَى بَرَكَةِ اللَّهِ. فَلَمَّا جَاءَ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم جَاءَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلاَمٍ فَقَالَ أَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُولُ اللَّهِ، وَأَنَّكَ جِئْتَ بِحَقٍّ، وَقَدْ عَلِمَتْ يَهُودُ أَنِّي سَيِّدُهُمْ وَابْنُ سَيِّدِهِمْ، وَأَعْلَمُهُمْ وَابْنُ أَعْلَمِهِمْ، فَادْعُهُمْ فَاسْأَلْهُمْ عَنِّي قَبْلَ أَنْ يَعْلَمُوا أَنِّي قَدْ أَسْلَمْتُ، فَإِنَّهُمْ إِنْ يَعْلَمُوا أَنِّي قَدْ أَسْلَمْتُ قَالُوا فِيَّ مَا لَيْسَ فِيَّ. فَأَرْسَلَ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَقْبَلُوا فَدَخَلُوا عَلَيْهِ. فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” يَا مَعْشَرَ الْيَهُودِ، وَيْلَكُمُ اتَّقُوا اللَّهَ، فَوَاللَّهِ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ إِنَّكُمْ لَتَعْلَمُونَ أَنِّي رَسُولُ اللَّهِ حَقًّا، وَأَنِّي جِئْتُكُمْ بِحَقٍّ فَأَسْلِمُوا ”. قَالُوا مَا نَعْلَمُهُ. قَالُوا لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَهَا ثَلاَثَ مِرَارٍ. قَالَ ” فَأَىُّ رَجُلٍ فِيكُمْ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلاَمٍ ”. قَالُوا ذَاكَ سَيِّدُنَا وَابْنُ سَيِّدِنَا، وَأَعْلَمُنَا وَابْنُ أَعْلَمِنَا. قَالَ ” أَفَرَأَيْتُمْ إِنْ أَسْلَمَ ”. قَالُوا حَاشَا لِلَّهِ، مَا كَانَ لِيُسْلِمَ. قَالَ ” أَفَرَأَيْتُمْ إِنْ أَسْلَمَ ”. قَالُوا حَاشَا لِلَّهِ، مَا كَانَ لِيُسْلِمَ. قَالَ ” يَا ابْنَ سَلاَمٍ، اخْرُجْ عَلَيْهِمْ ”. فَخَرَجَ فَقَالَ يَا مَعْشَرَ الْيَهُودِ، اتَّقُوا اللَّهَ، فَوَاللَّهِ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ إِنَّكُمْ لَتَعْلَمُونَ أَنَّهُ رَسُولُ اللَّهِ، وَأَنَّهُ جَاءَ بِحَقٍّ. فَقَالُوا كَذَبْتَ. فَأَخْرَجَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم.
আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মদীনায় এলেন তখন উষ্ট্রে পৃষ্ঠে আবূ বকর (রাঃ) তাঁর পশ্চাতে ছিলেন। আবূ বকর (রাঃ) ছিলেন বয়োজ্যেষ্ঠ [১] ও পরিচিত। আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন জাওয়ান এবং অপরিচিত। তখন বর্ননাকারী বলেন, যখন আবূ বকরের সঙ্গে কারো সাক্ষাৎ হত, সে জিজ্ঞেস করত হে আবূ বকর (রাঃ)! তোমার সম্মুখে উপবিষ্ট ঐ ব্যক্তি কে? আবূ বকর (রাঃ) বলতেন, তিনি আমার পথ প্রদর্শক। রাবী বলেন, প্রশ্নকারী সাধারন পথ মনে করত এবং তিনি সত্যপথ উদ্দেশ্য করতেন। তারপর একবার আবূ বকর (রাঃ) পিছনে চেয়ে হঠাৎ দেখতে পেলেন এক ঘোড় সওয়ার তাদের কাছেই এসে পড়েছে। তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল! এই যে একজন ঘোড় সওয়ার আমাদের পিছনে প্রায় কাছে পৌঁছে গেছে। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পিছনের দিকে তাকিয়ে দু’আ করলেন, হে আল্লাহ্! আপনি ওকে পাকড়াও করুন। ততক্ষনাৎ ঘোড়াটি তাকে নীচে ফেলে দিয়ে দাঁড়িয়ে হ্রেষা রব করতে লাগল। তখন ঘোড় সওয়ার বলল, হে আল্লাহর নবী! আপনার যা ইচ্ছা আমাকে আদেশ করুন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি স্বস্থানেই থেমে যাও। কেউ আমাদের দিকে আসতে চাইলে তুমি তাকে বাধা দিবে। বর্ননাকারী বলেন, দিনের প্রথম অংশে ছিল সে নবীর বিরুদ্ধে যুদ্ধকারী আর দিনের শেষাংশে হয়ে গেল তাঁর পক্ষ হতে অস্ত্রধারী। এরপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনার হাররার [২] একপাশে অবতরন করলেন। এরপর আনসারদের খবর দিলেন। তাঁরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর কাছে এলেন এবং উভয়কে সালাম করে বললেন, আপনারা নিরাপদ ও মান্য হিসেবে আরোহণ করুন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আবূ বকর (রাঃ) উটে আরোহন করলেন আর আনসারগন অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাঁদেরকে ঘিরে চলতে লাগলেন। মদীনায় লোকেরা বলতে লাগল, আল্লাহ্র নবী এসেছেন, আল্লাহ্র নবী এসেছেন, লোকজন উঁচু স্থানে উঠে তাঁদের দেখতে লাগল। আর বলতে লাগল, আল্লাহ্র নবী এসেছেন, আল্লাহ্র নবী এসেছেন। তিনি সম্মুখ পানে চলতে লাগলেন। শেষে আবূ আইয়ুব (রাঃ) – এর বাড়ির পার্শ্বে গিয়ে অবতরণ করলেন। আবূ আইয়ুব (রাঃ) ঐ সময় তাঁর পরিবারের লোকদের সাথে কথাবার্তা বলছিলেন। ইতোমধ্যে ‘আবদুল্লাহ ইব্নু সালাম তাঁর আগমনের কথা শুনলেন তখন তিনি তাঁর নিজের বাগানে খেজুর সংগ্রহ করছিলেন। তখন তিনি শীঘ্র ফল সংগ্রহ করা হতে বিরত হলেন এবং সংগৃহীত খেজুরসহ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর নিকট হাজির হলেন এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর কিছু কথাবার্তা শুনে নিজ গৃহে ফিরে গেলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমাদের লোকদের মধ্যে কার বাড়ী এখান হতে সবচেয়ে নিকটে? আবূ আইয়ুব (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এই তো বাড়ী, এই যে তার দরজা। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তবে চল, আমাদের বিশ্রামের ব্যবস্থা কর। তিনি বললেন, আপনারা দু’জনেই চলুন। আল্লাহ্ বরকত দানকারী। যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বাড়ীতে এলেন তখন আবদুল্লাহ ইব্নু সালাম (রাঃ) আসলেন এবং বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহ্র রসূল; আপনি সত্য নিয়ে এসেছেন। হে আল্লাহ্র রসূল! ইয়াহুদী সম্প্রদায় জানে যে আমি তাদের নেতা এবং আমি তাদের নেতার পুত্র। আমি তাদের মধ্যে বেশি জ্ঞানী এবং তাদের বড় জ্ঞানী সন্তান। আমি ইসলাম গ্রহন করেছি এ কথাটি জানাজানি হওয়ার পূর্বে আপনি তাদের ডাকুন এবং আমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করুন, আমার সম্পর্কে তাদের ধারনা জ্ঞাত হন। কেননা তারা যদি জানতে পারে যে আমি ইসলাম গ্রহন করেছি, তবে আমার সম্মন্ধে তারা এমন সব অলীক কথা বলবে যা আমার মধ্যে নেই। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (ইয়াহূদী সম্প্রদায়কে) ডেকে পাঠালেন। তারা এসে তার কাছে হাজির হল। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের বললেন, হে ইয়াহূদী সম্প্রদায়, তোমাদের উপর অভিশাপ! তোমরা সেই আল্লাহ্কে ভয় কর, তিনি ছাড়া মাবুদ নেই। তোমরা নিশ্চয় জান যে আমি সত্য রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সত্য নিয়েই তোমাদের নিকট এসেছি। সুতরাং তোমরা ইসলাম গ্রহন কর। তারা উত্তর দিল, আমরা এসব জানিনা। তারা তিনবার একথা বলল। তারপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইব্নু সালাম (রাঃ) কেমন লোক? তারা উত্তর দিল, তিনি আমাদের নেতা এবং আমাদের নেতার সন্তান। তিনি আমাদের সর্বশ্রেষ্ট আলিম এবং সর্বশ্রেষ্ট আলিমের পুত্র। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তিনি যদি ইসলাম গ্রহন করেন, তবে তোমাদের মতামত কি হবে? তারা বলল আল্লাহ্ হেফাজত করুন। তিনি ইসলাম গ্রহণ করবেন তা কিছুতেই হতে পারে না। তিনি আবার বললেন, আচ্ছা বলতো, যদি তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন তবে তোমরা কী মনে করবে? তারা আবার বলল, আল্লাহ্ হেফাজত করুন, কিছুতেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করতে পারের না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবার বললেন, আচ্ছা বলতো, তিনি যদি মুসলমান হয়েই যান তবে তোমাদের মত কি? তারা বলল, আল্লাহ্ হিফাযত করুন, তিনি মুসলমান হয়ে যাবেন তা কিছুতেই হতে পারে না। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে ইব্নু সালাম! তুমি এদের সামনে বেরিয়ে আস। তিনি বেরিয়ে আসলেন এবং বললেন, হে ইয়াহূদী সম্প্রদায়। আল্লাহ্কে ভয় কর। ঐ আল্লাহ্র কসম, যিনি ছাড়া কোন মা’বুদ নেই। তোমরা নিশ্চয় জান তিনি সত্য রসূল, হক নিয়েই এসেছেন। তখন তারা বলে উঠল, তুমি মিথ্যা বলছ। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে বের করে দিলেন।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬২৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬২৭)
[১] প্রকৃতপক্ষে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর বয়স আবূ বাক্রের চেয়ে অধিক ছিল, কিন্তু আবু বক্র (রাঃ)-এর চুল-দাড়ি অধিক সাদা হয়ে গিয়েছিল বলে বাহ্যত নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর চেয়ে আবূ বক্র (রাঃ)- কে বেশী বয়স্ক মনে হত।
[২] কঙ্করময় স্থানকে বলা হয়।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯১২
حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيْمُ بْنُ مُوْسَى أَخْبَرَنَا هِشَامٌ عَنْ ابْنِ جُرَيْجٍ قَالَ أَخْبَرَنِيْ عُبَيْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ عَنْ نَافِعٍ عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ كَانَ فَرَضَ لِلْمُهَاجِرِيْنَ الأَوَّلِيْنَ أَرْبَعَةَ آلَافٍ فِيْ أَرْبَعَةٍ وَفَرَضَ لِابْنِ عُمَرَ ثَلَاثَةَ آلَافٍ وَخَمْسَ مِائَةٍ فَقِيْلَ لَهُ هُوَ مِنْ الْمُهَاجِرِيْنَ فَلِمَ نَقَصْتَهُ مِنْ أَرْبَعَةِ آلَافٍ فَقَالَ إِنَّمَا هَاجَرَ بِهِ أَبَوَاهُ يَقُوْلُ لَيْسَ هُوَ كَمَنْ هَاجَرَ بِنَفْسِهِ
উমার ইব্নু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
যে, তিনি প্রাথমিক পর্যায়ের মুহাজিরদের জন্য চার কিস্তিতে বাৎসরিক চার হাজার দিরহাম ধার্য করলেন এবং ইব্নু ‘উমারের জন্য নির্বাচন করলেন তিন হাজার পাঁচশ। তাঁকে বলা হল, তিনিও তো মুহাজিরদের। তাঁর জন্য চার হাজার হতে কম কেন করলেন? তিনি বললেন, সে তো তার পিতা-মাতার সাথে হিজরত করেছে। কাজেই সে ঐ লোকের সমান হতে পারে না যে লোক একাকী হিজরত করেছে।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬২৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬২৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯১৩
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ كَثِيْرٍ أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ عَنْ الأَعْمَشِ عَنْ أَبِيْ وَائِلٍ عَنْ خَبَّابٍ قَالَ هَاجَرْنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم و حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ حَدَّثَنَا يَحْيَى عَنْ الأَعْمَشِ قَالَ سَمِعْتُ شَقِيْقَ بْنَ سَلَمَةَ قَالَ حَدَّثَنَا خَبَّابٌ قَالَ هَاجَرْنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم نَبْتَغِيْ وَجْهَ اللهِ وَوَجَبَ أَجْرُنَا عَلَى اللهِ فَمِنَّا مَنْ مَضَى لَمْ يَأْكُلْ مِنْ أَجْرِهِ شَيْئًا مِنْهُمْ مُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ قُتِلَ يَوْمَ أُحُدٍ فَلَمْ نَجِدْ شَيْئًا نُكَفِّنُهُ فِيْهِ إِلَّا نَمِرَةً كُنَّا إِذَا غَطَّيْنَا بِهَا رَأْسَهُ خَرَجَتْ رِجْلَاهُ فَإِذَا غَطَّيْنَا رِجْلَيْهِ خَرَجَ رَأْسُهُ فَأَمَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ نُغَطِّيَ رَأْسَهُ بِهَا وَنَجْعَلَ عَلَى رِجْلَيْهِ مِنْ إِذْخِرٍ وَمِنَّا مَنْ أَيْنَعَتْ لَهُ ثَمَرَتُهُ فَهُوَ يَهْدِبُهَا
খাববাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে হিজরাত করেছি একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য। আমাদের পুরস্কার আল্লাহর নিকটই নির্ধারিত। আমাদের মধ্যে অনেকেই তাঁদের কুরবানীর ফল কিছুই দুনিয়ায় ভোগ না করে আখিরাতে চলে গিয়েছেন; তার মধ্যে মুসআব ইবনু উমায়ের (রাঃ) অন্যতম। তিনি ওহুদ যুদ্ধে শহীদ হন। তাঁকে কাফন দেয়ার জন্য তার একটি চাদর ছাড়া আর অন্য কিছুই আমরা পেলাম না। আমরা এ চাদরটি দিয়ে যখন তাঁর মাথা ঢাকলাম তাঁর পা বের হয়ে গেল আর যখন তাঁর পা ঢাকতে গেলাম তখন মাথা বের হয়ে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নির্দেশ দিলেন, চাদরটি দিয়ে তাঁর মাথা ঢেকে দাও এবং পা দু’টির উপর ইয্খির ঘাস রেখে দাও। আজ আমাদের মধ্যে এমন আছেন যাঁদের ফল পেকে গেছে এবং এখন তারা তা সংগ্রহ করছেন। (১২৭৬)
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬২৫, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬২৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯১৪
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ كَثِيْرٍ أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ عَنْ الأَعْمَشِ عَنْ أَبِيْ وَائِلٍ عَنْ خَبَّابٍ قَالَ هَاجَرْنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم و حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ حَدَّثَنَا يَحْيَى عَنْ الأَعْمَشِ قَالَ سَمِعْتُ شَقِيْقَ بْنَ سَلَمَةَ قَالَ حَدَّثَنَا خَبَّابٌ قَالَ هَاجَرْنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم نَبْتَغِيْ وَجْهَ اللهِ وَوَجَبَ أَجْرُنَا عَلَى اللهِ فَمِنَّا مَنْ مَضَى لَمْ يَأْكُلْ مِنْ أَجْرِهِ شَيْئًا مِنْهُمْ مُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ قُتِلَ يَوْمَ أُحُدٍ فَلَمْ نَجِدْ شَيْئًا نُكَفِّنُهُ فِيْهِ إِلَّا نَمِرَةً كُنَّا إِذَا غَطَّيْنَا بِهَا رَأْسَهُ خَرَجَتْ رِجْلَاهُ فَإِذَا غَطَّيْنَا رِجْلَيْهِ خَرَجَ رَأْسُهُ فَأَمَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ نُغَطِّيَ رَأْسَهُ بِهَا وَنَجْعَلَ عَلَى رِجْلَيْهِ مِنْ إِذْخِرٍ وَمِنَّا مَنْ أَيْنَعَتْ لَهُ ثَمَرَتُهُ فَهُوَ يَهْدِبُهَا
খাববাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর সঙ্গে হিজরত করেছি একমাত্র আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য। আমাদের পুরস্কার আল্লাহ্র নিকটই নির্ধারিত। আমাদের মধ্যে অনেকেই তাঁদের কুরবানীর ফল কিছুই দুনিয়ায় ভোগ না করে আখিরাতে চলে গিয়েছেন; তার মধ্যে মুসআব ইব্নু উমায়ের (রাঃ) অন্যতম। তিনি ওহুদ যুদ্ধে শহীদ হন। তাঁকে কাফন দেওয়ার জন্য তার একটি চাদর ছাড়া আর অন্য কিছুই আমরা পেলাম না। আমরা এ চাদরটি দিয়ে যখন তাঁর মাথা ঢাকলাম তাঁর পা বের হয়ে গেল আর যখন তাঁর পা ঢাকতে গেলাম তখন মাথা বের হয়ে গেল। তখন রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নির্দেশ দিলেন, চাদরটি দিয়ে তাঁর মাথা ঢেকে দাও এবং পা দু’টির উপর ইয্খির ঘাস রেখে দাও। আজ আমাদের মধ্যে এমন আছেন যাঁদের ফল পেকে গেছে এবং এখন তারা তা সংগ্রহ করছেন।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬২৫, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬২৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯১৫
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ بِشْرٍ حَدَّثَنَا رَوْحٌ حَدَّثَنَا عَوْفٌ عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ قُرَّةَ قَالَ حَدَّثَنِيْ أَبُوْ بُرْدَةَ بْنُ أَبِيْ مُوْسَى الأَشْعَرِيِّ قَالَ قَالَ لِيْ عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ هَلْ تَدْرِيْ مَا قَالَ أَبِيْ لِأَبِيكَ قَالَ قُلْتُ لَا قَالَ فَإِنَّ أَبِيْ قَالَ لِأَبِيكَ يَا أَبَا مُوْسَى هَلْ يَسُرُّكَ إِسْلَامُنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَهِجْرَتُنَا مَعَهُ وَجِهَادُنَا مَعَهُ وَعَمَلُنَا كُلُّهُ مَعَهُ بَرَدَ لَنَا وَأَنَّ كُلَّ عَمَلٍ عَمِلْنَاهُ بَعْدَهُ نَجَوْنَا مِنْهُ كَفَافًا رَأْسًا بِرَأْسٍ فَقَالَ أَبِيْ لَا وَاللهِ قَدْ جَاهَدْنَا بَعْدَ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَصَلَّيْنَا وَصُمْنَا وَعَمِلْنَا خَيْرًا كَثِيْرًا وَأَسْلَمَ عَلَى أَيْدِيْنَا بَشَرٌ كَثِيْرٌ وَإِنَّا لَنَرْجُوْ ذَلِكَ فَقَالَ أَبِيْ لَكِنِّيْ أَنَا وَالَّذِيْ نَفْسُ عُمَرَ بِيَدِهِ لَوَدِدْتُ أَنَّ ذَلِكَ بَرَدَ لَنَا وَأَنَّ كُلَّ شَيْءٍ عَمِلْنَاهُ بَعْدُ نَجَوْنَا مِنْهُ كَفَافًا رَأْسًا بِرَأْسٍ فَقُلْتُ إِنَّ أَبَاكَ وَاللهِ خَيْرٌ مِنْ أَبِي
আবূ বুরদাহ ইব্নু আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইব্নু ‘উমার (রাঃ) আমাকে বললেন, তুমি কি জান আমার পিতা তোমার পিতাকে কী বলেছিলেন? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, আমার পিতা তোমার পিতাকে বলেছিলেন, হে আবূ মূসা, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট আছ যে, আমরা রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর হাতে ইসলাম গ্রহন করেছি, তাঁর সঙ্গে হিজরত করেছি, তাঁর সঙ্গে জিহাদ করেছি এবং তাঁর জীবদ্দশায় করা আমাদের প্রতিটি আমল যা করেছি তা আমাদের জন্য সঞ্চিত থাকুক। তাঁর মৃত্যুর পর, আমরা যেসব আমল করেছি, তা আমাদের জন্য সমান সমান হোক। তখন তোমার পিতা আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, না কেননা, আল্লাহ্র কসম, আমরা রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর পর জিহাদ করেছি, সলাত আদায় করেছি, সাওম পালন করেছি এবং বহু নেক আমল করেছি। আমাদের হাতে অনেক মানুষ ইসলাম গ্রহন করেছে। আমরা এসব কাজের সাওয়াব-এর আশা রাখি। তখন আমার পিতা [‘উমার (রাঃ)] বললেন, কিন্তু আমি ঐ সত্তার কসম, যাঁর হাতে ‘উমারের প্রান, এতেই সন্তুষ্ট যে, (আগের ‘আমাল) আমাদের জন্য সঞ্চিত থাকুক আর তাঁর মৃত্যুর পর আমরা যে সব আমল করেছি তা হতে যেন আমরা রেহাই পাই সমান সমানভাবে। তখন আমি বললাম, আল্লাহ্র কসম নিশ্চয়ই তোমার পিতা আমার পিতা হতে উত্তম।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬২৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৩০)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯১৬
حَدَّثَنِيْ مُحَمَّدُ بْنُ صَبَّاحٍ أَوْ بَلَغَنِيْ عَنْهُ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيْلُ عَنْ عَاصِمٍ عَنْ أَبِيْ عُثْمَانَ قَالَ سَمِعْتُ ابْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا إِذَا قِيْلَ لَهُ هَاجَرَ قَبْلَ أَبِيْهِ يَغْضَبُ قَالَ وَقَدِمْتُ أَنَا وَعُمَرُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوَجَدْنَاهُ قَائِلًا فَرَجَعْنَا إِلَى الْمَنْزِلِ فَأَرْسَلَنِيْ عُمَرُ وَقَالَ اذْهَبْ فَانْظُرْ هَلْ اسْتَيْقَظَ فَأَتَيْتُهُ فَدَخَلْتُ عَلَيْهِ فَبَايَعْتُهُ ثُمَّ انْطَلَقْتُ إِلَى عُمَرَ فَأَخْبَرْتُهُ أَنَّهُ قَدْ اسْتَيْقَظَ فَانْطَلَقْنَا إِلَيْهِ نُهَرْوِلُ هَرْوَلَةً حَتَّى دَخَلَ عَلَيْهِ فَبَايَعَهُ ثُمَّ بَايَعْتُهُ
আবূ ‘উসমান (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আবূ ‘উসমান (রহঃ) বলেন, আমি ইব্নু ‘উমার (রাঃ)- কে বলতে শুনেছি যে, তাঁকে একথা বলা হলে, “আপনি আপনার পিতার আগে হিজরত করেছেন” তিনি রাগ করতেন। ইব্নু ‘উমার (রাঃ) বলেন, আমি এবং ‘উমার (রাঃ) রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট হাযির হলাম। তখন তাঁকে কায়লুলাহ অবস্থায় পেলাম। কাজেই আমরা আমাদের আবাসস্থলে ফিরে এলাম। কিছুক্ষন পর ‘উমার (রাঃ) আমাকে পাঠালেন এবং বললেন যাও; গিয়ে দেখ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জেগেছেন কিনা? আমি এসে তাঁর কাছে হাযির হলাম এবং তাঁর কাছে বায়’আত করলাম। তারপর ‘উমার (রাঃ) এর নিকট এসে তাঁকে খবর দিলাম যে, তিনি জেগে আছেন। তখন আমরা তাঁর নিকট গেলাম দ্রুতবেগে। তিনি তাঁর কাছে প্রবেশ করে বায়’আত করলেন। তারপর আমিও নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর হাতে আবার বায়’আত করলাম।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬২৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৩১
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯১৭
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ عُثْمَانَ حَدَّثَنَا شُرَيْحُ بْنُ مَسْلَمَةَ حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيْمُ بْنُ يُوْسُفَ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ أَبِيْ إِسْحَاقَ قَالَ سَمِعْتُ الْبَرَاءَ يُحَدِّثُ قَالَ ابْتَاعَ أَبُوْ بَكْرٍ مِنْ عَازِبٍ رَحْلًا فَحَمَلْتُهُ مَعَهُ قَالَ فَسَأَلَهُ عَازِبٌ عَنْ مَسِيْرِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ أُخِذَ عَلَيْنَا بِالرَّصَدِ فَخَرَجْنَا لَيْلًا فَأَحْثَثْنَا لَيْلَتَنَا وَيَوْمَنَا حَتَّى قَامَ قَائِمُ الظَّهِيْرَةِ ثُمَّ رُفِعَتْ لَنَا صَخْرَةٌ فَأَتَيْنَاهَا وَلَهَا شَيْءٌ مِنْ ظِلٍّ قَالَ فَفَرَشْتُ لِرَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَرْوَةً مَعِيْ ثُمَّ اضْطَجَعَ عَلَيْهَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَانْطَلَقْتُ أَنْفُضُ مَا حَوْلَهُ فَإِذَا أَنَا بِرَاعٍ قَدْ أَقْبَلَ فِيْ غُنَيْمَةٍ يُرِيْدُ مِنْ الصَّخْرَةِ مِثْلَ الَّذِيْ أَرَدْنَا فَسَأَلْتُهُ لِمَنْ أَنْتَ يَا غُلَامُ فَقَالَ أَنَا لِفُلَانٍ فَقُلْتُ لَهُ هَلْ فِيْ غَنَمِكَ مِنْ لَبَنٍ قَالَ نَعَمْ قُلْتُ لَهُ هَلْ أَنْتَ حَالِبٌ قَالَ نَعَمْ فَأَخَذَ شَاةً مِنْ غَنَمِهِ فَقُلْتُ لَهُ انْفُضْ الضَّرْعَ قَالَ فَحَلَبَ كُثْبَةً مِنْ لَبَنٍ وَمَعِيْ إِدَاوَةٌ مِنْ مَاءٍ عَلَيْهَا خِرْقَةٌ قَدْ رَوَّأْتُهَا لِرَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَصَبَبْتُ عَلَى اللَّبَنِ حَتَّى بَرَدَ أَسْفَلُهُ ثُمَّ أَتَيْتُ بِهِ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقُلْتُ اشْرَبْ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَشَرِبَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم حَتَّى رَضِيْتُ ثُمَّ ارْتَحَلْنَا وَالطَّلَبُ فِيْ إِثْرِنَا
আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আবূ ইসহাক (রহঃ) বলেন, আমি বারা (রাঃ)- কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) আমার পিতা আযিব (রাঃ)- এর নিকট হাওদা কিনলেন। আমি আবূ বাক্রের সাথে কেনা হাওদাটি বয়ে নিয়ে চললাম। তখন আমার পিতা আযিব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সঙ্গে তাঁর হিজাতের ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তখন আবু বক্র (রাঃ) বললেন, আমাদের খোঁজ করার জন্য মুশরিকরা লোক নিয়োগ করছিল। অবশেষে আমরা রাত্রিকালে বেরিয়ে পড়লাম এবং একরাত ও একদিন একটানা চলতে থাকলাম। যখন দুপুর হয়ে গেল, তখন একটি বিরাট পাথর নযরে পড়ল। আমরা সেটির কাছে এলাম, পাথরটির কিছু ছায়া পড়ছিল। আমি সেখানে গিয়ে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর জন্য আমার সঙ্গের চামড়াখানি বিছিয়ে দিলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওটার উপর শুয়ে পড়লেন। আমি এদিক-ওদিক খোঁজ নেয়ার জন্য বেরিয়ে পড়লাম। হঠাত এক বকরীর রাখালকে দেখতে পেলাম। সে তার বকরীগুলো নিয়ে আসছে। সেও আমাদের মত পাথরের ছায়ায় আশ্রয় নিতে চায়। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কার গোলাম? সে বলল, আমি অমুকের। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার বকরীর পালে দুধ আছে কি? সে বলল, হাঁ। আমি বললাম, তুমি কি কিছু দোহন করে দিবে? সে বলল, হাঁ। সে তাঁর পাল হতে একটি বকরী ধরে নিয়ে এল। আমি বললাম, বকরীর স্তন দু’টি ঝেড়ে মুছে সাফ করে নাও। সে একপাত্র ভর্তি দুধ দোহন করল। আমার সাথে একটি পানির পাত্র ছিল। আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর জন্য কাপড় দিয়ে তার মুখ বেঁধে রেখেছিলাম। আমি তা হতে দুধের মধ্যে কিছু পানি ঢেলে দিলাম। ফলে পাত্রের তলা পর্যন্ত শীতল হয়ে গেল। আমি তা নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর কাছে এসে বললাম, পান করুন, ইয়া রসূলাল্লাহ্! রসূলাল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমনভাবে পান করলেন যে, আমি সন্তুষ্ট হলাম। এরপর আমরা যাত্রা করলাম এবং অনুসন্ধানকারী আমাদের পিছনে ছিল।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬২৯, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৩২ প্রথমাংশ)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯১৮
قَالَ الْبَرَاءُ فَدَخَلْتُ مَعَ أَبِيْ بَكْرٍ عَلَى أَهْلِهِ فَإِذَا عَائِشَةُ ابْنَتُهُ مُضْطَجِعَةٌ قَدْ أَصَابَتْهَا حُمَّى فَرَأَيْتُ أَبَاهَا فَقَبَّلَ خَدَّهَا وَقَالَ كَيْفَ أَنْتِ يَا بُنَيَّةُ
বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
বারা (রাঃ) বলেন, আমি আবূ বক্রের সঙ্গে তাঁর ঘরে ঢুকলাম। [১] তখন দেখলাম তাঁর মেয়ে ‘আয়িশা (রাঃ) বিছানায় শুয়ে আছেন। তাঁর জ্বর হয়েছে। তাঁর পিতা আবূ বকর (রাঃ) – কে দেখলাম তিনি মেয়ের গালে চুমু [২] খেলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, মা তুমি কেমন আছ?
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬২৯, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৩২ শেষাংশ)
[১] আবূ বক্র (রাঃ)- এর সাথে তার ঘরে বারা (রাঃ)- এর উক্ত প্রবেশটি ছিল পর্দার বিধান অবতীর্ন হবার পূর্বে এবং তখন তিনি অপ্রাপ্ত বয়স্কা ছিলেন।
[২] আবূ বাকর (রাঃ) কর্তৃক স্বীয় কন্যা ‘আয়িশা (রাঃ)- এর চুমু খাওয়া ছিল স্নেহ ও সোহাগের; কেননা তিনি তখন ছোট্ট ছিলেন। (ফাতহুল বারী ৭ম খন্ড ৩২৬ পৃষ্ঠা)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯১৯
حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ حِمْيَرَ حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيْمُ بْنُ أَبِيْ عَبْلَةَ أَنَّ عُقْبَةَ بْنَ وَسَّاجٍ حَدَّثَهُ عَنْ أَنَسٍ خَادِمِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ قَدِمَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَلَيْسَ فِيْ أَصْحَابِهِ أَشْمَطُ غَيْرَ أَبِيْ بَكْرٍ فَغَلَفَهَا بِالْحِنَّاءِ وَالْكَتَمِ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর খাদিম আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় আগমন করলেন। এই সময় তাঁর সাহাবীদের মধ্যে সাদা কাল চুলওয়ালা আবূ বকর (রাঃ) ছাড়া অন্য কেউ ছিলেন না। তিনি তাঁর চুলে মেহদী ও কতম (এক প্রকার পাতা) একত্র করে কলপ লাগিয়েছিলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯২০
وَقَالَ دُحَيْمٌ حَدَّثَنَا الْوَلِيْدُ حَدَّثَنَا الأَوْزَاعِيُّ حَدَّثَنِيْ أَبُوْ عُبَيْدٍ عَنْ عُقْبَةَ بْنِ وَسَّاجٍ حَدَّثَنِيْ أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ قَالَ قَدِمَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْمَدِيْنَةَ فَكَانَ أَسَنَّ أَصْحَابِهِ أَبُوْ بَكْرٍ فَغَلَفَهَا بِالْحِنَّاءِ وَالْكَتَمِ حَتَّى قَنَأَ لَوْنُهَا
আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় এলেন, তখন তাঁর সাহাবীদের মধ্যে আবূ বকর (রাঃ) ছিলেন সবচেয়ে বয়স্ক। তিনি মেহেদী ও কতম একত্র করে কলপ লাগিয়েছিলেন। এতে তাঁর সাদা চুল টুকটুকে লাল রং ধারন করেছিল।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৩০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৩৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯২১
حَدَّثَنَا أَصْبَغُ حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ عَنْ يُونُسَ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ أَبَا بَكْرٍ تَزَوَّجَ امْرَأَةً مِنْ كَلْبٍ يُقَالُ لَهَا أُمُّ بَكْرٍ فَلَمَّا هَاجَرَ أَبُوْ بَكْرٍ طَلَّقَهَا فَتَزَوَّجَهَا ابْنُ عَمِّهَا هَذَا الشَّاعِرُ الَّذِيْ قَالَ هَذِهِ الْقَصِيْدَةَ رَثَى كُفَّارَ قُرَيْشٍ
وَمَاذَا بِالْقَلِيْبِ قَلِيْبِ بَــدْرٍ مِنْ الشِّيزَى تُزَيَّنُ بِالسَّنَــامِ
وَمَاذَا بِالْقَلِيْبِ قَلِيْبِ بَــدْرٍ مِنْ الْقَيْنَاتِ وَالشَّرْبِ الْكِـرَامِ
تُحَيِّيْنَا السَّلَامَةَ أُمُّ بَكْـــرٍ وَهَلْ لِيْ بَعْدَ قَوْمِيْ مِنْ سَلَامِ
يُحَدِّثُنَا الرَّسُوْلُ بِأَنْ سَنَحْيَـا وَكَيْفَ حَيَاةُ أَصْدَاءٍ وَهَــامِ
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) কালব গোত্রের উম্মে বক্র নাম্নী এক মহিলাকে বিয়ে করলেন। যখন আবূ বকর (রাঃ) হিজরত করেন, তখন তাকে তালাক দিয়ে যান। তারপর ঐ মহিলাকে তার চাচাত ভাই বিয়ে করে নিল। এই লোকটিই হল সেই কবি যে বদর যুদ্ধে নিহত কুরাইশ কাফিরদের শোকগাঁথা রচনা করেছিল।
বদর প্রান্তে কালীব নামক কূপে নিক্ষিপ্ত ওই সব কাফিরগন আজ কোথায় যাদের শিযা নামক কাঠের তৈরি খাদ্য-পাত্রে উটের কুঁজের গোশতে সুসজ্জিত থাকত।
বদরের কালীব কূপে নিক্ষিপ্ত ব্যক্তিগন আজ কোথায় যারা গায়িকা ও সম্মানিত মদ্যপানকারী নিয়ে নিমগ্ন ছিল।
উম্মু বকর শান্তির স্বাগত জানাচ্ছে। আর আমার কাওমের পর আমার জন্য শান্তি কোথায়?
রসূল আমাদের বলেছেন যে, শীঘ্রই আমাদের জীবিত করা হবে। কিন্তু চলে যাওয়া আত্মা ও মাথার খুলির জীবন ফিরবে আবার কিভাবে?”
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৩১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৩৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯২২
حَدَّثَنَا مُوْسَى بْنُ إِسْمَاعِيْلَ حَدَّثَنَا هَمَّامٌ عَنْ ثَابِتٍ عَنْ أَنَسٍ عَنْ أَبِيْ بَكْرٍ قَالَ كُنْتُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي الْغَارِ فَرَفَعْتُ رَأْسِيْ فَإِذَا أَنَا بِأَقْدَامِ الْقَوْمِ فَقُلْتُ يَا نَبِيَّ اللهِ لَوْ أَنَّ بَعْضَهُمْ طَأْطَأَ بَصَرَهُ رَآنَا قَالَ اسْكُتْ يَا أَبَا بَكْرٍ اثْنَانِ اللهُ ثَالِثُهُمَا
আবূ বক্র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে গুহায় ছিলাম। আমি আমার মাথা উঠিয়ে উপরের দিকে তাকালাম এবং লোকের পা দেখতে পেলাম। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ্র নবী! তাদের কেউ নীচের দিকে তাকালেই আমাদের দেখে ফেলবে। তিনি বললেন, হে আবূ বক্র! চুপ থাক। আমরা দু’জন আল্লাহ্ হলেন যাদের তৃতীয়।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৩২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৩৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯২৩
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا الْوَلِيْدُ بْنُ مُسْلِمٍ حَدَّثَنَا الأَوْزَاعِيُّ وَقَالَ مُحَمَّدُ بْنُ يُوْسُفَ حَدَّثَنَا الأَوْزَاعِيُّ حَدَّثَنَا الزُّهْرِيُّ قَالَ حَدَّثَنِيْ عَطَاءُ بْنُ يَزِيْدَ اللَّيْثِيُّ قَالَ حَدَّثَنِيْ أَبُوْ سَعِيْدٍ قَالَ جَاءَ أَعْرَابِيٌّ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَسَأَلَهُ عَنْ الْهِجْرَةِ فَقَالَ وَيْحَكَ إِنَّ الْهِجْرَةَ شَأْنُهَا شَدِيْدٌ فَهَلْ لَكَ مِنْ إِبِلٍ قَالَ نَعَمْ قَالَ فَتُعْطِيْ صَدَقَتَهَا قَالَ نَعَمْ قَالَ فَهَلْ تَمْنَحُ مِنْهَا قَالَ نَعَمْ قَالَ فَتَحْلُبُهَا يَوْمَ وُرُوْدِهَا قَالَ نَعَمْ قَالَ فَاعْمَلْ مِنْ وَرَاءِ الْبِحَارِ فَإِنَّ اللهَ لَنْ يَتِرَكَ مِنْ عَمَلِكَ شَيْئًا
আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একজন বেদুঈন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর কাছে এল এবং তাকে হিজরত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। তিনি বললেন, ওহে! হিজরত বড় কঠিন কাজ। এরপর বললেন, তোমার কি উট আছে? সে বলল, হাঁ। তিনি বললেন, তুমি কি উটের সাদকা আদায় কর? সে বলল, হাঁ। তিনি বললেন, তুমি কি উটনীর দুধ অন্যকে পান করতে দাও। সে বলল, হাঁ। তিনি বললেন, যেদিন পানি পান করানোর উদ্দেশ্যে উটগুলি ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয় সেদিন কি তুমি দুধ দোহন করে দান কর? সে বলল, হাঁ। তিনি বললেন, তবে তুমি সমুদ্রের অপর প্রান্ত থেকেই নেক ‘আমাল করতে থাক। নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমার ‘আমালের কিছুই ঘাটতি করবেন না। [১]
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৩৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৩৬)
[১] ইসলামের প্রতিকূল অবস্থায় থেকেও যথাসাধ্য আল্লাহ্র বিধান পালন করতে পারলে সে স্থান হতে হিজরত ওয়াজিব নয়। উক্ত হাদীসে এরও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, হিজরত সম্পর্কে প্রশ্নকারীর জিজ্ঞাসাটি ছিল মক্কা বিজয়ের পর; কেননা তা বিজয়ের পূর্বে হিজরত প্রতিটি মুসলিম ব্যক্তির উপর ওয়াজিব ছিল। (ফাতহুল বারী ৭ম খন্ড ৩৩০ পৃষ্ঠা)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৬৩/৪৬. অধ্যায়ঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবীবর্গের মদীনা উপস্থিতি
৩৯২৪
حَدَّثَنَا أَبُو الْوَلِيْدِ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ قَالَ أَنْبَأَنَا أَبُوْ إِسْحَاقَ سَمِعَ الْبَرَاءَ قَالَ أَوَّلُ مَنْ قَدِمَ عَلَيْنَا مُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ وَابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ ثُمَّ قَدِمَ عَلَيْنَا عَمَّارُ بْنُ يَاسِرٍ وَبِلَالٌ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ
বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সর্বাগ্রে আমাদের মধ্যে মদীনায় আগমন করেন মুস’আব ইব্নু উমায়ের ও ইব্নু উম্মু মাকতুম (রাঃ)। অতঃপর আমাদের কাছে আসেন আম্মার ইব্নু ইয়াসির ও বিলাল (রাঃ)।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৩৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৩৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯২৫
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ أَبِيْ إِسْحَاقَ قَالَ سَمِعْتُ الْبَرَاءَ بْنَ عَازِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ أَوَّلُ مَنْ قَدِمَ عَلَيْنَا مُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ وَابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ وَكَانَا يُقْرِئَانِ النَّاسَ فَقَدِمَ بِلَالٌ وَسَعْدٌ وَعَمَّارُ بْنُ يَاسِرٍ ثُمَّ قَدِمَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ فِيْ عِشْرِيْنَ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ قَدِمَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَمَا رَأَيْتُ أَهْلَ الْمَدِيْنَةِ فَرِحُوْا بِشَيْءٍ فَرَحَهُمْ بِرَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم حَتَّى جَعَلَ الْإِمَاءُ يَقُلْنَ قَدِمَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَمَا قَدِمَ حَتَّى قَرَأْتُ سَبِّحْ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى فِيْ سُوَرٍ مِنْ الْمُفَصَّلِ
বারা’ ইব্নু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সর্বাগ্রে আমাদের মধ্যে মদীনায় আসলেন মুস’আব ইব্নু উমায়ের এবং ইব্নু উম্মু মাকতুম। তারা লোকদের কুরআন পড়াতেন। তারপর আসলেন, বিলাল, সা’দ ও আম্মার ইব্নু ইয়াসির (রাঃ) এরপর ‘উমার ইব্নু খাত্তাব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর বিশজন সাহাবীসহ মদীনায় আসলেন। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগমন করলেন। তাঁর আগমনে মদীনাবাসী যতখানি আনন্দিত হয়েছিল ততখানি আনন্দিত হতে কখনো দেখিনি। এমনকি দাসীগনও বলছিল, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুভাগমন করেছেন। বারা (রাঃ) বলেন, তাঁর আগমনের পূর্বেই মুফাস্সালের [২] কয়েকটি সূরাহসহ আমি (আরবী) সূরাহ পর্যন্ত পড়ে ফেলেছিলাম।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৩৫, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৩৮)
[২] কুরআন মাজীদের শেষ অংশের সূরাহ সমূহকে মুফাস্সাল বলা হয়, কেননা তাতে প্রতিটি সূরাহ এর মধ্যে ছোট ছোট ধারায় বিভিন্ন বিষয়ের বর্ননা করা হয়েছে। আর মুফাস্সালের শুরু হচ্ছেঃ সূরাহ আল হুজরাত। অতঃপর মুফাস্সালকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছেঃ (১) তিওয়ালু মুফাস্সালঃ আল হুজরাত হতে আল বুরুজ পর্যন্ত। (২) ওয়াসাতু মুফাসসালঃ আল বুরুজ হতে আল্ বাইয়্যিনাহ পর্যন্ত। (৩) ক্বিসারু মুফাসসালঃ আল বাইয়্যিনাহ হতে আল ফুরকানের শেষ পর্যন্ত। (সূত্রঃ ইতহাফুল কিয়াম-তা’লীক-বুলিগুল মারাম ৮৫ পৃষ্ঠা)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯২৬
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ يُوْسُفَ أَخْبَرَنَا مَالِكٌ عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّهَا قَالَتْ لَمَّا قَدِمَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْمَدِيْنَةَ وُعِكَ أَبُوْ بَكْرٍ وَبِلَالٌ قَالَتْ فَدَخَلْتُ عَلَيْهِمَا فَقُلْتُ يَا أَبَتِ كَيْفَ تَجِدُكَ وَيَا بِلَالُ كَيْفَ تَجِدُكَ قَالَتْ فَكَانَ أَبُوْ بَكْرٍ إِذَا أَخَذَتْهُ الْحُمَّى يَقُوْلُ :
كُلُّ امْرِئٍ مُصَبَّحٌ فِيْ أَهْلِهِ وَالْمَوْتُ أَدْنَى مِنْ شِرَاكِ نَعْلِهِ
وَكَانَ بِلَالٌ إِذَا أَقْلَعَ عَنْهُ الْحُمَّى يَرْفَعُ عَقِيْرَتَهُ وَيَقُوْلُ :
أَلَا لَيْتَ شِعْرِيْ هَلْ أَبِيْتَنَّ لَيْلَـةً بِوَادٍ وَحَوْلِيْ إِذْخِرٌ وَجَـلِيْلُ
وَهَلْ أَرِدَنْ يَوْمًا مِيَاهَ مَــجَنَّةٍ وَهَلْ يَبْدُوَنْ لِيْ شَامَةٌ وَطَـفِيْلُ
قَالَتْ عَائِشَةُ فَجِئْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَأَخْبَرْتُهُ فَقَالَ اللَّهُمَّ حَبِّبْ إِلَيْنَا الْمَدِيْنَةَ كَحُبِّنَا مَكَّةَ أَوْ أَشَدَّ وَصَحِّحْهَا وَبَارِكْ لَنَا فِيْ صَاعِهَا وَمُدِّهَا وَانْقُلْ حُمَّاهَا فَاجْعَلْهَا بِالْجُحْفَةِ
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মদীনায় আসলেন, তখন আবূ বক্র ও বিলাল (রাঃ) ভীষন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়লেন। আমি তাদেরকে দেখতে গেলাম এবং বললাম, আব্বাজান, কেমন আছেন? হে বিলাল, আপনি কেমন আছেন? ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আবূ বকর (রাঃ) জ্বরে পড়লেই এ পংক্তিগুলি আবৃতি করতেন।
“প্রতিটি ব্যক্তিকে নিজ পরিবারে সুপ্রভাত বলা হয়
অথচ মৃত্যু তার জুতার ফিতার চাইতেও অতি নিকটে।”
আর বিলাল (রাঃ) – এর অবস্থা ছিল এই যখন তার জ্বর ছেড়ে যেত তখন কন্ঠস্বর উঁচু করে এ কবিতাটি আবৃতি করতেনঃ
“হায়, আমি যদি জানতাম আমি এ মক্কা উপত্যকায় আবার রাত্রি কাটাতে পারব কিনা
যেখানে ইয্খির ও জলীল ঘাস আমার চারপাশের বিরাজমান থাকত।
হায়, আর কি আমার ভাগ্যে জুটবে যে, আমি মাজান্নাহ নামক কূপের পানি পান করতে পারব! এবং শামাহ ও তাফিল পাহাড় কি আর আমার চোখে পড়বে!”
‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর নিকট গিয়ে এ সংবাদ জানালাম। তখন তিনি এ দু’আ করলেন, হে আল্লাহ্! মদীনাকে আমাদের প্রিয় করে দাও যেমন প্রিয় ছিল আমাদের মক্কা বরং তার থেকেও অধিক প্রিয় করে দাও। আমাদের জন্য মদীনাকে স্বাস্থ্যকর করে দাও। মদীনার সা ও মুদ এর মধ্যে বরকত দান কর। আর এখানকার জ্বরকে সরিয়ে জুহ্ফায় নিয়ে যাও।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৩৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৩৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯২৭
حَدَّثَنِيْ عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدٍ حَدَّثَنَا هِشَامٌ أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ عَنْ الزُّهْرِيِّ حَدَّثَنِيْ عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ أَنَّ عُبَيْدَ اللهِ بْنَ عَدِيِّ بْنِ الْخِيَارِ أَخْبَرَهُ دَخَلْتُ عَلَى عُثْمَانَ وَقَالَ بِشْرُ بْنُ شُعَيْبٍ حَدَّثَنِيْ أَبِيْ عَنْ الزُّهْرِيِّ حَدَّثَنِيْ عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ أَنَّ عُبَيْدَ اللهِ بْنَ عَدِيِّ بْنِ خِيَارٍ أَخْبَرَهُ قَالَ دَخَلْتُ عَلَى عُثْمَانَ فَتَشَهَّدَ ثُمَّ قَالَ أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّ اللهَ بَعَثَ مُحَمَّدًا بِالْحَقِّ وَكُنْتُ مِمَّنْ اسْتَجَابَ لِلهِ وَلِرَسُوْلِهِ وَآمَنَ بِمَا بُعِثَ بِهِ مُحَمَّدٌ ثُمَّ هَاجَرْتُ هِجْرَتَيْنِ وَنِلْتُ صِهْرَ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَبَايَعْتُهُ فَوَاللهِ مَا عَصَيْتُهُ وَلَا غَشَشْتُهُ حَتَّى تَوَفَّاهُ اللهُ
تَابَعَهُ إِسْحَاقُ الْكَلْبِيُّ حَدَّثَنِي الزُّهْرِيُّ مِثْلَهُ
উবাইদুল্লাহ ইব্নু ‘আদী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
উবাইদুল্লাহ ইব্নু ‘আদী (রহঃ) বলেন, আমি ‘উসমান (রাঃ)- এর ঘরে প্রবেশ করলাম। তিনি আমার বক্তব্য শুনার পর তাশাহ্হুদ পাঠের পর বললেন, আম্মা বা’দু। আল্লাহ্ তা’আলা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন। যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে যে সত্যসহ প্রেরণ করা হয়েছিল তৎপ্রতি ঈমান এনেছিলেন আমিও তাঁদের মধ্যে ছিলাম। উভয় হিজরতে [১] অংশ নিয়েছি। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর জামাতা হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছি। আমি তাঁর হাতে বায়’আত করেছি, আল্লাহর শপথ আমি কখনো তাঁর নাফরমানী করিনি তাঁর সাথে প্রতারণা করিনি। এই অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে। (৩৬৯৬)
ইসহাক কালবী শু’য়ায়বের অনুসরণ করে যুহরী সূত্রে এ রকমই বর্ণনা করেছেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৩৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৪০)
[১] উভয় হিজরত বলতে আবিসিনিয়া ও মদীনা দু’স্থানের হিজরত।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯২৮
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سُلَيْمَانَ حَدَّثَنِيْ ابْنُ وَهْبٍ حَدَّثَنَا مَالِكٌ وَأَخْبَرَنِيْ يُونُسُ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ قَالَ أَخْبَرَنِيْ عُبَيْدُ اللهِ بْنُ عَبْدِ اللهِ أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عَبَّاسٍ أَخْبَرَهُ أَنَّ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ عَوْفٍ رَجَعَ إِلَى أَهْلِهِ وَهُوَ بِمِنًى فِيْ آخِرِ حَجَّةٍ حَجَّهَا عُمَرُ فَوَجَدَنِيْ فَقَالَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ فَقُلْتُ يَا أَمِيْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ إِنَّ الْمَوْسِمَ يَجْمَعُ رَعَاعَ النَّاسِ وَغَوْغَاءَهُمْ وَإِنِّيْ أَرَى أَنْ تُمْهِلَ حَتَّى تَقْدَمَ الْمَدِيْنَةَ فَإِنَّهَا دَارُ الْهِجْرَةِ وَالسُّنَّةِ وَالسَّلَامَةِ وَتَخْلُصَ لِأَهْلِ الْفِقْهِ وَأَشْرَافِ النَّاسِ وَذَوِيْ رَأْيِهِمْ قَالَ عُمَرُ لَاقُومَنَّ فِيْ أَوَّلِ مَقَامٍ أَقُومُهُ بِالْمَدِيْنَةِ
ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, যে বছর ‘উমার (রাঃ) শেষ হাজ্জ আদায় করেন সে বছর ‘আবদুর রহমান ইব্নু ‘আউফ (রাঃ) মিনায় তাঁর পরিবারের কাছে ফিরে আসেন এবং সেখানে আমার সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। ‘আবদুর রহমান (রাঃ) বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন, হাজ্জ মওসুমে বুদ্ধিমান ও বুদ্ধিহীন সব রকমের মানুষ জড় হয়। তাই আমার বিবেচনায় আপনি ভাষণ দান করবেন না এবং মদীনা গিয়ে ভাষণ দান করুন। মদীনা হল দারুল হিজরত, (হিজরতের স্থান) রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সুন্নাতের পবিত্র ভূমি। সেখানে আপনি অনেক জ্ঞানী, গুণী ও বুদ্ধিদীপ্ত লোককে একত্রে পাবেন। ‘উমার (রাঃ) বললেন, মদীনায় গিয়েই প্রথমেই অবশ্যই আমার ভাষণ দিব।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৩৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৪১)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯২৯
حَدَّثَنَا مُوْسَى بْنُ إِسْمَاعِيْلَ حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيْمُ بْنُ سَعْدٍ أَخْبَرَنَا ابْنُ شِهَابٍ عَنْ خَارِجَةَ بْنِ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ أَنَّ أُمَّ الْعَلَاءِ امْرَأَةً مِنْ نِسَائِهِمْ بَايَعَتْ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَخْبَرَتْهُ أَنَّ عُثْمَانَ بْنَ مَظْعُونٍ طَارَ لَهُمْ فِي السُّكْنَى حِيْنَ اقْتَرَعَتْ الأَنْصَارُ عَلَى سُكْنَى الْمُهَاجِرِيْنَ قَالَتْ أُمُّ الْعَلَاءِ فَاشْتَكَى عُثْمَانُ عِنْدَنَا فَمَرَّضْتُهُ حَتَّى تُوُفِّيَ وَجَعَلْنَاهُ فِيْ أَثْوَابِهِ فَدَخَلَ عَلَيْنَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقُلْتُ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْكَ أَبَا السَّائِبِ شَهَادَتِيْ عَلَيْكَ لَقَدْ أَكْرَمَكَ اللهُ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَمَا يُدْرِيكِ أَنَّ اللهَ أَكْرَمَهُ قَالَتْ قُلْتُ لَا أَدْرِيْ بِأَبِيْ أَنْتَ وَأُمِّيْ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَمَنْ قَالَ أَمَّا هُوَ فَقَدْ جَاءَهُ وَاللهِ الْيَقِيْنُ وَاللهِ إِنِّيْ لَارْجُوْ لَهُ الْخَيْرَ وَمَا أَدْرِيْ وَاللهِ وَأَنَا رَسُوْلُ اللَّه مَا يُفْعَلُ بِيْ قَالَتْ فَوَاللهِ لَا أُزَكِّيْ أَحَدًا بَعْدَهُ قَالَتْ فَأَحْزَنَنِيْ ذَلِكَ فَنِمْتُ فَرِيْتُ لِعُثْمَانَ بْنِ مَظْعُونٍ عَيْنًا تَجْرِيْ فَجِئْتُ رَسُوْلَ اللهِ فَأَخْبَرْتُهُ فَقَالَ ذَلِكِ عَمَلُهُ
খারিজাহ ইব্নু যায়দ ইব্নু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
খারিজাহ ইব্নু যায়দ ইব্নু সাবিত (রাঃ) বলেন, উম্মুল ‘আলা’ (রাঃ) নাম্নী এক আনসারী মহিলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর হাতে বায়’আত করেন। তিনি বর্ণনা করেন, যখন মুহাজিরদের বাসস্থানের ব্যাপারে আনসারদের মধ্যে লটারী হয় তখন ‘উসমান ইব্নু মায’উনের বসবাস আমাদের অংশে পড়ল। উম্মুল ‘আলা (রাঃ) বলেন, এরপর তিনি আমাদের এখানে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমি তার সেবা শুশ্রূষা করলাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর মৃত্যু হয়ে গেল। আমরা কাফনের কাপড় পরিয়ে দিলাম। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের এখানে আসলেন। ঐ সময় আমি ‘উসমান (রাঃ)- কে লক্ষ্য করে বলছিলাম। হে আবূ সায়িব! তোমার উপর আল্লাহর রহমত হোক। তোমার সম্পর্কে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ নিশ্চয়ই তোমাকে সম্মানিত করেছেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেমন করে জানলে যে, আল্লাহ্ তাকে সম্মানিত করেছেন? আমি বললাম, আমার মাতা-পিতা আপনার উপর কুরবান হোক। হে আল্লাহ্র রসূল! আমি তো জানি না। তবে কাকে আল্লাহ্ সম্মানিত করবেন? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহ্র শপথ! ‘উসমানের মৃত্যু হয়ে গেছে। আল্লাহ্র কসম! আমি তার সম্পর্কে কল্যাণের আশা পোষণ করছি। আল্লাহ্র কসম, আমি আল্লাহ্র রসূল হওয়া সত্ত্বেও জানিনা আল্লাহ আমার সাথে কী ব্যবহার করবেন। উম্মুল ‘আলা’ (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্র শপথ, আমি এ কথা শুনার পর আর কাউকে পূত-পবিত্র বলব না। উম্মুল ‘আলা’ (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর এ কথা আমাকে চিন্তিত করল। এরপর আমি স্বপ্নে দেখতে পেলাম যে, ‘উসমান ইব্নু মায’উন (রাঃ) – এর জন্য একটি নহর জারি রয়েছে। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর নিকট গিয়ে আমার স্বপ্নটি বললে তিনি বললেন, এ হচ্ছে তার সৎ ‘আমাল’।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৩৯, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৪২)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯৩০
حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللهِ بْنُ سَعِيْدٍ حَدَّثَنَا أَبُوْ أُسَامَةَ عَنْ هِشَامٍ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ يَوْمُ بُعَاثٍ يَوْمًا قَدَّمَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ لِرَسُوْلِهِ صلى الله عليه وسلم فَقَدِمَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْمَدِيْنَةَ وَقَدْ افْتَرَقَ مَلَؤُهُمْ وَقُتِلَتْ سَرَاتُهُمْ فِيْ دُخُوْلِهِمْ فِي الْإِسْلَامِ
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বু’আস যুদ্ধ এমন একটি যুদ্ধ ছিল যা আল্লাহ্ তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর পক্ষে তাঁর হিজরতের পূর্বেই সংঘটিত করিয়েছিলেন, যা তাদের ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে সহায়ক হয়েছিল। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মদীনায় আসলেন তখন তাদের গোত্রগুলো ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে নানা দলে ভাগ হয়ে গিয়েছিল এবং তাদের অনেক নেতা নিহত হয়েছিল।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৪০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৪৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯৩১
حَدَّثَنِيْ مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ هِشَامٍ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ أَبَا بَكْرٍ دَخَلَ عَلَيْهَا وَالنَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عِنْدَهَا يَوْمَ فِطْرٍ أَوْ أَضْحًى وَعِنْدَهَا قَيْنَتَانِ تُغَنِّيَانِ بِمَا تَقَاذَفَتْ الأَنْصَارُ يَوْمَ بُعَاثٍ فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ مِزْمَارُ الشَّيْطَانِ مَرَّتَيْنِ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم دَعْهُمَا يَا أَبَا بَكْرٍ إِنَّ لِكُلِّ قَوْمٍ عِيْدًا وَإِنَّ عِيْدَنَا هَذَا الْيَوْمُ
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
যে, আবূ বকর (রাঃ) ঈদুল ফিত্র অথবা ঈদুল আযহার দিনে তাঁকে দেখতে এলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আয়িশা (রাঃ)- এর বাড়ীতে অবস্থান করছিলেন। এ সময় দু’জন অল্প বয়স্কা বালিকা এ কবিতাটি উচ্চঃস্বরে আবৃত্তি করছিল যা আনসারগণ বু’আস যুদ্ধে আবৃত্তি করেছিল। তখন আবূ বাকর (রাঃ) দু’বার বললেন, এ হল শয়তানের ঢাল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে আবূ বাকর, ওদেরকে ছাড়। প্রত্যেক সম্প্রদায়েরই ‘ঈদ আছে আর আজ হল আমাদের ‘ঈদের দিন।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৪১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৪৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯৩২
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَارِثِ ح و حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ مَنْصُوْرٍ أَخْبَرَنَا عَبْدُ الصَّمَدِ قَالَ سَمِعْتُ أَبِيْ يُحَدِّثُ حَدَّثَنَا أَبُو التَّيَّاحِ يَزِيْدُ بْنُ حُمَيْدٍ الضُّبَعِيُّ قَالَ حَدَّثَنِيْ أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ قَالَ لَمَّا قَدِمَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْمَدِيْنَةَ نَزَلَ فِيْ عُلْوِ الْمَدِيْنَةِ فِيْ حَيٍّ يُقَالُ لَهُمْ بَنُوْ عَمْرِو بْنِ عَوْفٍ قَالَ فَأَقَامَ فِيْهِمْ أَرْبَعَ عَشْرَةَ لَيْلَةً ثُمَّ أَرْسَلَ إِلَى مَلَا بَنِي النَّجَّارِ قَالَ فَجَاءُوْا مُتَقَلِّدِيْ سُيُوفِهِمْ قَالَ وَكَأَنِّيْ أَنْظُرُ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى رَاحِلَتِهِ وَأَبُوْ بَكْرٍ رِدْفَهُ وَمَلَا بَنِي النَّجَّارِ حَوْلَهُ حَتَّى أَلْقَى بِفِنَاءِ أَبِيْ أَيُّوْبَ قَالَ فَكَانَ يُصَلِّيْ حَيْثُ أَدْرَكَتْهُ الصَّلَاةُ وَيُصَلِّيْ فِيْ مَرَابِضِ الْغَنَمِ قَالَ ثُمَّ إِنَّهُ أَمَرَ بِبِنَاءِ الْمَسْجِدِ فَأَرْسَلَ إِلَى مَلَا بَنِي النَّجَّارِ فَجَاءُوْا فَقَالَ يَا بَنِي النَّجَّارِ ثَامِنُوْنِيْ حَائِطَكُمْ هَذَا فَقَالُوْا لَا وَاللهِ لَا نَطْلُبُ ثَمَنَهُ إِلَّا إِلَى اللهِ قَالَ فَكَانَ فِيْهِ مَا أَقُوْلُ لَكُمْ كَانَتْ فِيْهِ قُبُوْرُ الْمُشْرِكِيْنَ وَكَانَتْ فِيْهِ خِرَبٌ وَكَانَ فِيْهِ نَخْلٌ فَأَمَرَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِقُبُوْرِ الْمُشْرِكِيْنَ فَنُبِشَتْ وَبِالْخِرَبِ فَسُوِّيَتْ وَبِالنَّخْلِ فَقُطِعَ قَالَ فَصَفُّوْا النَّخْلَ قِبْلَةَ الْمَسْجِدِ قَالَ وَجَعَلُوْا عِضَادَتَيْهِ حِجَارَةً قَالَ قَالَ جَعَلُوْا يَنْقُلُوْنَ ذَاكَ الصَّخْرَ وَهُمْ يَرْتَجِزُوْنَ وَرَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَعَهُمْ يَقُوْلُوْنَ :
اللَّهُمَّ إِنَّهُ لَا خَيْرَ إِلَّا خَيْرُ الآخِرَهْ فَانْصُرْ الأَنْصَارَ وَالْمُهَاجِرَهْ
আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মদীনায় আসলেন তখন মদীনার উঁচু এলাকার ‘আমর ইব্নু ‘আউফ গোত্রে অবস্থান করলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, সেখানে তিনি চৌদ্দ দিন থাকলেন। এরপর তিনি বানু নাজ্জারের নেতৃস্থানীয় লোকদের কাছে খবর পাঠালেন। তারা সকলেই তরবারি ঝুলিয়ে হাযির হলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, সেই দৃশ্য এখনো যেন আমি দেখতে পাচ্ছি। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সওয়ারীর উপর এবং আবূ বাকর (রাঃ) তাঁর পিছনে উপবিষ্ট রয়েছেন, আর বনু নাজ্জারের নেতাগণ রয়েছেন তাদের পার্শ্বে। অবশেষে আবূ আইউব (রাঃ)- এর বাড়ির চত্বরে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মালপত্র নামালেন। রাবী বলেন, ঐ সময় রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেখানেই সলাতের সময় হত সেখানেই সলাত আদায় করে নিতেন। এবং তিনি কোন কোন সময় ছাগল-ভেড়ার খোঁয়াড়েও সলাত আদায় করতেন। রাবী বলেন, তারপর তিনি মসজিদ তৈরির নির্দেশ দিলেন। তিনি বনী নাজ্জারের নেতাদের ডাকলেন এবং তারা এলে তিনি বললেন, তোমাদের এ বাগানটি আমার নিকট বিক্রি কর। তারা বলল, আল্লাহ্র শপথ, আমরা বিক্রি করব না। আল্লাহ শপথ-এর বিনিময় আল্লাহ্র নিকটই চাই। রাবী বলেন, এখানে কি ছিল, আমি তোমাদের বলছি স্থানে তখন ছিল মুশরিকদের পুরাতন কবর, বাড়ী ঘরের কিছু ভগ্নাবশেষ কয়েকটি খেজুরের গাছ। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নির্দেশে মুশরিকদের কবরগুলি মিশিয়ে দেয়া হল। ভগ্ন চিহ্ন সমতল করা হল, খেজুর গাছগুলি কেটে ফেলা হল। রাবী বলেন, কাটা খেজুর গাছের কান্ডগুলি মসজিদের কেবলার দিকে এর খুঁটি হিসেবে এক লাইনে স্থাপন করা হল এবং খুঁটির ফাঁকা স্থানে রাখা হল পাথর। তখন সাহাবাগণ পাথর বয়ে আনছিলেন এবং ছন্দ যুক্ত কবিতা আবৃত্তি করছিলেনঃ আর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন তাদের সঙ্গে ছিলেন এবং বলছিলেন,
হে আল্লাহ্! আসল কল্যাণ কেবলমাত্র আখিরাতের কল্যাণ।
হে আল্লাহ্! তুমি মুহাজির ও আনসারদের সাহায্য কর।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৪২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৪৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৬৩/৪৭. অধ্যায়ঃ
হাজ্জ সমাধার পর মুহাজিরগণের মক্কায় অবস্থান।
৩৯৩৩
حَدَّثَنِيْ إِبْرَاهِيْمُ بْنُ حَمْزَةَ حَدَّثَنَا حَاتِمٌ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ حُمَيْدٍ الزُّهْرِيِّ قَالَ سَمِعْتُ عُمَرَ بْنَ عَبْدِ الْعَزِيْزِ يَسْأَلُ السَّائِبَ ابْنَ أُخْتِ الْنَّمِرِ مَا سَمِعْتَ فِيْ سُكْنَى مَكَّةَ قَالَ سَمِعْتُ الْعَلَاءَ بْنَ الْحَضْرَمِيِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ثَلَاثٌ لِلْمُهَاجِرِ بَعْدَ الصَّدَرِ
উমার ইব্নু আবদুল ‘আযীয (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
উমার ইব্নু আবদুল ‘আযীয (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি সাইব ইব্নু উখতিননাম্র (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি মক্কায় অবস্থান ব্যাপারে কী শুনেছেন? তিনি বললেন, আমি ‘আলা ইবনুল হাযরামী (রাঃ)- এর কাছে শুনেছি, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মুহাজিরদের জন্য তাওয়াফে সদর [১] আদায় করার পর তিন দিন মক্কায় থাকার অনুমতি আছে। [২]
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৪৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৪৬)
[১] হাজ্জ কার্যসমূহ সমাপন করে মিনা হতে প্রত্যাবর্তন করার পর কাবা ঘরের যে তাওয়াফ করা হয় তাকে বুঝানো হয়েছে।
[২] মক্কা বিজয়ের পূর্বে যারা হিজরত করেছিলেন তাদের জন্য পুনরায় মক্কায় অবস্থান করা হারাম ছিল। কিন্তু যারা হাজ্জ বা ‘উমরাহ এর উদ্দেশ্যে মক্কায় আসবে তারা তাদের হাজ্জ ‘উমরাহ এর কাজ সমাধা করে মাত্র তিন দিন প্রয়োজন হলে অবস্থান করতে পারবে-তাতে নিষেধ নেই।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৬৩/৪৮. অধ্যায়ঃ
তারিখ, কোথা হতে তারিখ
৩৯৩৪
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ مَسْلَمَةَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيْزِ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ مَا عَدُّوْا مِنْ مَبْعَثِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَلَا مِنْ وَفَاتِهِ مَا عَدُّوْا إِلَّا مِنْ مَقْدَمِهِ الْمَدِيْنَةَ
সাহল ইব্নু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
সাহল ইব্নু সা’দ (রাঃ) বর্ণনা করেন, লোকেরা বছর গণনা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নবুয়াত প্রাপ্তির দিন হতে করেনি এবং তাঁর মৃত্যুর দিন থেকেও করেনি বরং তাঁর মদীনায় হিজরত হতে বছর গণনা করা হয়েছে।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৪৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৪৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯৩৫
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ حَدَّثَنَا يَزِيْدُ بْنُ زُرَيْعٍ حَدَّثَنَا مَعْمَرٌ عَنْ الزُّهْرِيِّ عَنْ عُرْوَةَ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ فُرِضَتْ الصَّلَاةُ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ هَاجَرَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَفُرِضَتْ أَرْبَعًا وَتُرِكَتْ صَلَاةُ السَّفَرِ عَلَى الأُوْلَى تَابَعَهُ عَبْدُ الرَّزَّاقِ عَنْ مَعْمَرٍ
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, প্রথম অবস্থায় দু’ দু’ রাক’আত করে সলাত ফরয করা হয়েছিল। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন হিজরত করলেন, ঐ সময় সলাত চার রাক’আত করে দেয়া হয়। এবং সফর কালে আগের অবস্থা অর্থাৎ দু’ রাক’আত বহাল রাখা হয়। আব্দুর রাজ্জাক (রহঃ) মা’মার সূত্রে রিওয়ায়াত বর্ণনায় ইয়াযীদ ইব্নু যরায়-এর অনুসরণ করেছেন।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৪৫, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৪৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৬৩/৪৯. অধ্যায়ঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর উক্তি, হে আল্লাহ্! আমার সহাবাগণের হিজরতকে অটুট রাখুন এবং মক্কায় মৃত সাহাবীদের উদ্দেশ্যে শোক জ্ঞাপন।
৩৯৩৬
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ قَزَعَةَ حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيْمُ عَنْ الزُّهْرِيِّ عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدِ بْنِ مَالِكٍ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ عَادَنِي النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَامَ حَجَّةِ الْوَدَاعِ مِنْ مَرَضٍ أَشْفَيْتُ مِنْهُ عَلَى الْمَوْتِ فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ بَلَغَ بِيْ مِنْ الْوَجَعِ مَا تَرَى وَأَنَا ذُوْ مَالٍ وَلَا يَرِثُنِيْ إِلَّا ابْنَةٌ لِيْ وَاحِدَةٌ أَفَأَتَصَدَّقُ بِثُلُثَيْ مَالِيْ قَالَ لَا قَالَ فَأَتَصَدَّقُ بِشَطْرِهِ قَالَ الثُّلُثُ يَا سَعْدُ وَالثُّلُثُ كَثِيْرٌ إِنَّكَ أَنْ تَذَرَ ذُرِّيَّتَكَ أَغْنِيَاءَ خَيْرٌ مِنْ أَنْ تَذَرَهُمْ عَالَةً يَتَكَفَّفُوْنَ النَّاسَ وَلَسْتَ بِنَافِقٍ نَفَقَةً تَبْتَغِيْ بِهَا وَجْهَ اللهِ إِلَّا آجَرَكَ اللهُ بِهَا حَتَّى اللُّقْمَةَ تَجْعَلُهَا فِيْ فِيْ امْرَأَتِكَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ أُخَلَّفُ بَعْدَ أَصْحَابِيْ قَالَ إِنَّكَ لَنْ تُخَلَّفَ فَتَعْمَلَ عَمَلًا تَبْتَغِيْ بِهَا وَجْهَ اللهِ إِلَّا ازْدَدْتَ بِهِ دَرَجَةً وَرِفْعَةً وَلَعَلَّكَ تُخَلَّفُ حَتَّى يَنْتَفِعَ بِكَ أَقْوَامٌ وَيُضَرَّ بِكَ آخَرُوْنَ اللَّهُمَّ أَمْضِ لِأَصْحَابِيْ هِجْرَتَهُمْ وَلَا تَرُدَّهُمْ عَلَى أَعْقَابِهِمْ لَكِنْ الْبَائِسُ سَعْدُ بْنُ خَوْلَةَ يَرْثِيْ لَهُ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ تُوُفِّيَ بِمَكَّةَ وَقَالَ أَحْمَدُ بْنُ يُونُسَ وَمُوْسَى عَنْ إِبْرَاهِيْمَ أَنْ تَذَرَ وَرَثَتَكَ
সা’দ ইব্নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
বিদায় হাজ্জের বছর আমি ভয়ানক রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কাছাকাঠি হই তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখতে আসেন। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার রোগ কি পর্যায় পৌছেছে তা আপনি দেখতে পাচ্ছেন। আমি একজন সম্পদশালী। আমার ওয়ারিশ হচ্ছে একটি মাত্র কন্যা। আমি আমার সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ আল্লাহর রাস্তায় সাদকা করে দিব? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তবে কি অর্ধেক? তিনি বললেন, হে সা‘দ, এক তৃতীয়াংশ দান কর। এবং এক তৃতীয়াংশই অনেক বেশি। তুমি তোমার ছেলে-মেয়েদেরকে সম্পদশালী রেখে যাও তা-ই উত্তম, এর চেয়ে তুমি তাদেরকে নিঃস্ব রেখে গেলে যে তারা অন্যের নিকট ভিক্ষে করে। আহ্মাদ ইবনু ইউসুফ (রহ.)…..ইব্রাহীম (রহ.) হতে এ কথাগুলোও বর্ণনা করেছেন। তুমি তোমার ওয়ারিশদের সম্পদশালী রেখে যাবে আর তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যা কিছু ব্যয় করবে, আল্লাহ্ তার প্রতিদান তোমাকে দেবেন। তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যে লোকমাটি তুলে দিবে এর প্রতিদানও আল্লাহ্ তোমাকে দেবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি আমার সাথী সঙ্গীদের হতে পশ্চাতে থাকব? তিনি বললেন, তুমি কক্ষণো পিছে পড়ে থাকবে না আর এ অবস্থায় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে তুমি যে কোন নেক ‘আমাল করবে তাহলে তোমার সম্মান ও মর্যাদা আরো বৃদ্ধি হবে। সম্ভবতঃ তুমি বয়স বেশি পাবে এবং এর ফলে তোমার দ্বারা অনেক মানুষ উপকৃত এবং অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হে আল্লাহ্! আমার সাহাবীদের হিজরাতকে অটুট রাখুন। তাদেরকে পশ্চাৎমুখী করে ফিরিয়ে নিবেন না। কিন্তু অভাবগ্রস্ত সা‘দ ইবনু খাওলাহর মক্কা্য় মৃত্যুর কারণে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেন। আহমাদ ইবনু ইউনুস (রহ.) ও মূসা (রহ.) ইব্রাহীম সূত্রে বর্ণনা করেছেন, أَنْ تَذَرَ وَرَثَتَكَ তোমার ওয়ারিশদের রেখে যাওয়া….। (৫৬)
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৪৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৪৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৬৩/৫০. অধ্যায়ঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে তাঁর সাহাবীদের ভিতর ভ্রাতৃবন্ধন মজবুত করলেন।
‘আবদুর রাহমান ইব্নু ‘আউফ (রাঃ) বলেন, আমরা যখন মদীনা এলাম তখন আমার ও সা’দ ইব্নু রাবী’র মধ্যে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভ্রাতৃত্ব বন্ধন জুড়ে দেন এবং আবূ জুহাইফাহ (রাঃ) বলেন, সালমান ও আবূদ্ দারদা (রাঃ) – এর মধ্যে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভ্রাতৃত্ব বন্ধন জুড়ে দিয়েছিলেন।
৩৯৩৭
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يُوْسُفَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ حُمَيْدٍ عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَدِمَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ الْمَدِيْنَةَ فَآخَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بَيْنَهُ وَبَيْنَ سَعْدِ بْنِ الرَّبِيْعِ الأَنْصَارِيِّ فَعَرَضَ عَلَيْهِ أَنْ يُنَاصِفَهُ أَهْلَهُ وَمَالَهُ فَقَالَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بَارَكَ اللهُ لَكَ فِيْ أَهْلِكَ وَمَالِكَ دُلَّنِيْ عَلَى السُّوقِ فَرَبِحَ شَيْئًا مِنْ أَقِطٍ وَسَمْنٍ فَرَآهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بَعْدَ أَيَّامٍ وَعَلَيْهِ وَضَرٌ مِنْ صُفْرَةٍ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مَهْيَمْ يَا عَبْدَ الرَّحْمَنِ قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ تَزَوَّجْتُ امْرَأَةً مِنْ الأَنْصَارِ قَالَ فَمَا سُقْتَ فِيْهَا فَقَالَ وَزْنَ نَوَاةٍ مِنْ ذَهَبٍ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَوْلِمْ وَلَوْ بِشَاةٍ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবদুর রহমান ইব্নু ‘আউফ (রাঃ) যখন মদীনায় আসলেন, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ও সা’দ ইব্নু রাবী’ আনসারী (রাঃ) – এর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন জুড়ে দিলেন। সা’দ (রাঃ) তার সম্পদ ভাগ করে অর্ধেক সম্পদ এবং দু’জন স্ত্রীর যে কোন একজন নিয়ে যাওয়ার জন্য ‘আবদুর রহমানকে অনুরোধ করলেন। তিনি উত্তরে বললেন, আল্লাহ্ আপনার পরিবারবর্গ ও ধন-সম্পদে বরকত দান করুন। আমাকে এখানকার বাজারের রাস্তাটি দেখিয়ে দিন। তিনি মুনাফা হিসেবে কিছু ঘি ও পনির লাভ করলেন। কিছুদিন পরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর সঙ্গে তার দেখা হল। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন তার গায়ে ও কাপড়ে হলুদ রং-এর চিহ্ন দেখতে পেয়ে বললেন, হে আবদুর রাহমান, ব্যাপার কি! তিনি বললেন, আমি একজন আনসারী মহিলাকে বিয়ে করেছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তাকে কি পরিমাণ মোহর দিয়েছ? তিনি বললেন, তাকে খেজুর বিচির পরিমাণ সোনা দিয়েছি। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, একটি বকরি দিয়ে হলেও ওয়ালীমাহ করে নাও।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৪৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৫০)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৬৩/৫১. অধ্যায়ঃ
–
৩৯৩৮
بَاب حَدَّثَنِيْ حَامِدُ بْنُ عُمَرَ عَنْ بِشْرِ بْنِ الْمُفَضَّلِ حَدَّثَنَا حُمَيْدٌ حَدَّثَنَا أَنَسٌ أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ سَلَامٍ بَلَغَهُ مَقْدَمُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم الْمَدِيْنَةَ فَأَتَاهُ يَسْأَلُهُ عَنْ أَشْيَاءَ فَقَالَ إِنِّيْ سَائِلُكَ عَنْ ثَلَاثٍ لَا يَعْلَمُهُنَّ إِلَّا نَبِيٌّ مَا أَوَّلُ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ وَمَا أَوَّلُ طَعَامٍ يَأْكُلُهُ أَهْلُ الْجَنَّةِ وَمَا بَالُ الْوَلَدِ يَنْزِعُ إِلَى أَبِيْهِ أَوْ إِلَى أُمِّهِ قَالَ أَخْبَرَنِيْ بِهِ جِبْرِيْلُ آنِفًا قَالَ ابْنُ سَلَامٍ ذَاكَ عَدُوُّ الْيَهُوْدِ مِنْ الْمَلَائِكَةِ قَالَ أَمَّا أَوَّلُ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ فَنَارٌ تَحْشُرُهُمْ مِنْ الْمَشْرِقِ إِلَى الْمَغْرِبِ وَأَمَّا أَوَّلُ طَعَامٍ يَأْكُلُهُ أَهْلُ الْجَنَّةِ فَزِيَادَةُ كَبِدِ الْحُوْتِ وَأَمَّا الْوَلَدُ فَإِذَا سَبَقَ مَاءُ الرَّجُلِ مَاءَ الْمَرْأَةِ نَزَعَ الْوَلَدَ وَإِذَا سَبَقَ مَاءُ الْمَرْأَةِ مَاءَ الرَّجُلِ نَزَعَتْ الْوَلَدَ قَالَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّكَ رَسُوْلُ اللهِ قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ الْيَهُوْدَ قَوْمٌ بُهُتٌ فَاسْأَلْهُمْ عَنِّيْ قَبْلَ أَنْ يَعْلَمُوْا بِإِسْلَامِيْ فَجَاءَتْ الْيَهُوْدُ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَيُّ رَجُلٍ عَبْدُ اللهِ بْنُ سَلَامٍ فِيكُمْ قَالُوْا خَيْرُنَا وَابْنُ خَيْرِنَا وَأَفْضَلُنَا وَابْنُ أَفْضَلِنَا فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَسْلَمَ عَبْدُ اللهِ بْنُ سَلَامٍ قَالُوْا أَعَاذَهُ اللهُ مِنْ ذَلِكَ فَأَعَادَ عَلَيْهِمْ فَقَالُوْا مِثْلَ ذَلِكَ فَخَرَجَ إِلَيْهِمْ عَبْدُ اللهِ فَقَالَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهِ قَالُوْا شَرُّنَا وَابْنُ شَرِّنَا وَتَنَقَّصُوْهُ قَالَ هَذَا كُنْتُ أَخَافُ يَا رَسُوْلَ اللهِ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ)-এর নিকট নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মদিনায় আসার খবর পৌঁছলে তিনি এসে তাঁকে কয়েকটি প্রশ্ন করলেন। তিনি বললেন, আমি আপনাকে তিনটি প্রশ্ন করছি। এগুলোর ঠিক উত্তর নাবী ছাড়া অন্য কেউ জানে না।
(১) কিয়ামতের সর্বপ্রথম ‘আলামত কী?
(২) জান্নাতবাসীদের সর্বপ্রথম খাদ্য কী?
(৩) কী কারণে সন্তান আকৃতিতে কখনও পিতার মত কখনো বা মায়ের মত হয়? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ বিষয়গুলি সম্পর্কে এই মাত্র জিব্রাঈল (আঃ) আমাকে জানিয়ে গেলেন। আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) একথা শুনে বললেন, তিনিই ফেরেশ্তাদের মধ্যে ইয়াহূদীদের দুশমন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
(১) কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার সর্বপ্রথম আলামত লেলিহান অগ্নি যা মানুষকে পূর্বদিক হতে পশ্চিম দিকে ধাবিত করে নিয়ে যাবে এবং সবাইকে একত্র করবে।
(২) সর্বপ্রথম খাদ্য যা জান্নাতবাসী খাবে তা হল মাছের কলিজার বাড়তি অংশ।
(৩) যদি নারীর আগে পুরুষের বীর্যপাত ঘটে তবে সন্তান পিতার মত হয় আর যদি পুরুষের আগে নারীর বীর্যপাত ঘটে তবে সন্তান মায়ের মত হয়। ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ্ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রাসূল। হে আল্লাহর রাসূল, ইয়াহূদীগণ এমন একটি জাতি যারা অন্যের কুৎসা রটনায় খুব পটু। আমার ইসলাম গ্রহণ প্রকাশ হওয়ার পূর্বে আমার অবস্থা সম্পর্কে তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ডাকলেন, তারা হাযির হল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মাঝে ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম কেমন লোক? তারা বলল, তিনি আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি এবং সর্বোত্তম ব্যক্তির সন্তান। তিনি আমাদের সবচেয়ে মর্যাদাবা/পাশান এবং সবচেয়ে মর্যাদাবা/পাশান ব্যক্তির সন্তান। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আচ্ছা বলত, যদি ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু সালাম ইসলাম কবুল করে তাহলে কেমন হবে? তোমরা তখন কি করবে? তারা বলল, আল্লাহ্ তাকে একাজ হতে রক্ষা করুন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার এ কথাটি বললেন, তারাও আগের মত উত্তর দিল। তখন ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম বেরিয়ে আসলেন, এবং বললেন,
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهِ
তা শুনে ইয়াহূদীগণ বলতে লাগল, সে আমাদের মধ্যে খারাপ লোক এবং খারাপ লোকের সন্তান। অতঃপর তারা তাকে তুচ্ছ করার উদ্দেশে আরো অনেক কথাবার্তা বলল। ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এটাই আশংকা করেছিলাম। (৩৩২৯)
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৪৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৫১)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯৩৯
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ عَمْرٍو سَمِعَ أَبَا الْمِنْهَالِ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ مُطْعِمٍ قَالَ بَاعَ شَرِيكٌ لِيْ دَرَاهِمَ فِي السُّوقِ نَسِيئَةً فَقُلْتُ سُبْحَانَ اللهِ أَيَصْلُحُ هَذَا فَقَالَ سُبْحَانَ اللهِ وَاللهِ لَقَدْ بِعْتُهَا فِي السُّوقِ فَمَا عَابَهُ أَحَدٌ فَسَأَلْتُ الْبَرَاءَ بْنَ عَازِبٍ فَقَالَ قَدِمَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَنَحْنُ نَتَبَايَعُ هَذَا الْبَيْعَ فَقَالَ مَا كَانَ يَدًا بِيَدٍ فَلَيْسَ بِهِ بَأْسٌ وَمَا كَانَ نَسِيئَةً فَلَا يَصْلُحُ وَالْقَ زَيْدَ بْنَ أَرْقَمَ فَاسْأَلْهُ فَإِنَّهُ كَانَ أَعْظَمَنَا تِجَارَةً فَسَأَلْتُ زَيْدَ بْنَ أَرْقَمَ فَقَالَ مِثْلَهُ وَقَالَ سُفْيَانُ مَرَّةً فَقَالَ قَدِمَ عَلَيْنَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْمَدِيْنَةَ وَنَحْنُ نَتَبَايَعُ وَقَالَ نَسِيئَةً إِلَى الْمَوْسِمِ أَوْ الْحَجِّ
আবদুর রাহমান ইব্নু মুত্’ঈম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আবদুর রাহমান ইব্নু মুত্’ঈম (রাঃ) বলেন, আমার ব্যবসায়ের একজন অংশীদার কিছু দিরহাম বাজারে নিয়ে বাকীতে বিক্রি করে। আমি বললাম, সুবহানাল্লাহ! এমন কেনাবেচা কি জায়িয? তিনিও বললেন, সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ্র শপথ, আমি তা খোলা বাজারে বিক্রি করেছি তাতে কেউ ত আপত্তি করেন নি। এরপর আমি বারা’ ইব্নু ‘আযিব (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মদীনায় আসলেন তখন আমরা এরকম বাকীতে কেনাবেচা করতাম; তখন তিনি বললেন যদি নগদ হয় তবে তাতে কোন বাধা নেই। আর যদি ধারে হয় তবে জায়িয হবে না। তুমি যায়েদ ইব্নু আরকাম (রাঃ) – এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে জিজ্ঞেস করে নাও। কেননা তিনি আমাদের মধ্যে একজন বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। এরপর আমি যায়দ ইব্নু আরকামকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনিও এ রকমই বললেন। রাবী সুফইয়ান (রহঃ) হাদীসটি কখনও এভাবে বর্ণনা করেন “…” নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মদীনায় আমাদের কাছে আসেন, তখন আমরা হাজ্জের মৌসুম পর্যন্ত মিয়াদে বাকীতে কেনাবেচা করতাম।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৪৯, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৫২)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯৪০
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ عَمْرٍو سَمِعَ أَبَا الْمِنْهَالِ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ مُطْعِمٍ قَالَ بَاعَ شَرِيكٌ لِيْ دَرَاهِمَ فِي السُّوقِ نَسِيئَةً فَقُلْتُ سُبْحَانَ اللهِ أَيَصْلُحُ هَذَا فَقَالَ سُبْحَانَ اللهِ وَاللهِ لَقَدْ بِعْتُهَا فِي السُّوقِ فَمَا عَابَهُ أَحَدٌ فَسَأَلْتُ الْبَرَاءَ بْنَ عَازِبٍ فَقَالَ قَدِمَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَنَحْنُ نَتَبَايَعُ هَذَا الْبَيْعَ فَقَالَ مَا كَانَ يَدًا بِيَدٍ فَلَيْسَ بِهِ بَأْسٌ وَمَا كَانَ نَسِيئَةً فَلَا يَصْلُحُ وَالْقَ زَيْدَ بْنَ أَرْقَمَ فَاسْأَلْهُ فَإِنَّهُ كَانَ أَعْظَمَنَا تِجَارَةً فَسَأَلْتُ زَيْدَ بْنَ أَرْقَمَ فَقَالَ مِثْلَهُ وَقَالَ سُفْيَانُ مَرَّةً فَقَالَ قَدِمَ عَلَيْنَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْمَدِيْنَةَ وَنَحْنُ نَتَبَايَعُ وَقَالَ نَسِيئَةً إِلَى الْمَوْسِمِ أَوْ الْحَجِّ
আবদুর রাহমান ইব্নু মুত্’ঈম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আবদুর রাহমান ইব্নু মুত্’ঈম (রাঃ) বলেন, আমার ব্যবসায়ের একজন অংশীদার কিছু দিরহাম বাজারে নিয়ে বাকীতে বিক্রি করে। আমি বললাম, সুবহানাল্লাহ! এমন কেনাবেচা কি জায়িয? তিনিও বললেন, সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ্র শপথ, আমি তা খোলা বাজারে বিক্রি করেছি তাতে কেউ ত আপত্তি করেন নি। এরপর আমি বারা’ ইব্নু ‘আযিব (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মদীনায় আসলেন তখন আমরা এরকম বাকীতে কেনাবেচা করতাম; তখন তিনি বললেন যদি নগদ হয় তবে তাতে কোন বাধা নেই। আর যদি ধারে হয় তবে জায়িয হবে না। তুমি যায়েদ ইব্নু আরকাম (রাঃ) – এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে জিজ্ঞেস করে নাও। কেননা তিনি আমাদের মধ্যে একজন বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। এরপর আমি যায়দ ইব্নু আরকামকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনিও এ রকমই বললেন। রাবী সুফইয়ান (রহঃ) হাদীসটি কখনও এভাবে বর্ণনা করেন “…” নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মদীনায় আমাদের কাছে আসেন, তখন আমরা হাজ্জের মৌসুম পর্যন্ত মিয়াদে বাকীতে কেনাবেচা করতাম।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৪৯, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৫২)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৬৩/৫২. অধ্যায়ঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর মদীনায় আগমনে তাঁর নিকট ইয়াহুদীদের উপস্থিতি।
(আরবী) অর্থ ইয়াহূদী হয়ে গেছে। (আরবী) অর্থ আমরা তাওবা করেছি। (আরবী) অর্থ তাওবাকারী।
৩৯৪১
حَدَّثَنَا مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيْمَ حَدَّثَنَا قُرَّةُ عَنْ مُحَمَّدٍ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَوْ آمَنَ بِيْ عَشَرَةٌ مِنْ الْيَهُوْدِ لآمَنَ بِي الْيَهُوْدُ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যদি আমার উপর দশজন ইয়াহূদী ঈমান আনত তবে গোটা ইয়াহূদী সম্প্রদায়ই ঈমান আনত। [১]
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৫০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৫৩)
[১] উক্ত হাদীসে দু’প্রকার তাৎপর্য বর্ণনা করা হয়ে থাকে (১) উক্ত হাদীসটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে সময়ে বলেন, সে সময় পর্যন্ত যদি দশজন ইয়াহুদী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতি ঈমান আনত তবে সমগ্র ইয়াহুদী জাতী ঈমান আনত। (২) উক্ত হাদীসে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিশেষ দশজন ইয়াহুদী নেতার প্রতি ইঙ্গিত করেন যারা সকলে ঈমান আনলে তাদের প্রভাবে তাদের সম্প্রদায়ের সকলেই ঈমান আনত। কিন্তু বাস্তবে তাদের মধ্য হতে খুব অল্প সংখ্যক ঈমান এনেছিল। তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ ও উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি হচ্ছেনঃ ‘আবদুল্লাহ ইব্নু সালাম। (ফাতহুল বারী ৭ম খণ্ড ৩৫০ পৃষ্ঠা)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯৪২
حَدَّثَنِيْ أَحْمَدُ أَوْ مُحَمَّدُ بْنُ عُبَيْدِ اللهِ الْغُدَانِيُّ حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ أُسَامَةَ أَخْبَرَنَا أَبُوْ عُمَيْسٍ عَنْ قَيْسِ بْنِ مُسْلِمٍ عَنْ طَارِقِ بْنِ شِهَابٍ عَنْ أَبِيْ مُوْسَى قَالَ دَخَلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْمَدِيْنَةَ وَإِذَا أُنَاسٌ مِنْ الْيَهُوْدِ يُعَظِّمُوْنَ عَاشُوْرَاءَ وَيَصُومُوْنَهُ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم نَحْنُ أَحَقُّ بِصَوْمِهِ فَأَمَرَ بِصَوْمِهِ
আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মদীনায় আসলেন, তখন ইয়াহূদী সম্প্রদায়ের কিছু লোক আশুরার দিনকে খুব সম্মান করত এবং সেদিন তারা সাওম পালন করত। এতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ইয়াহূদীদের চেয়ে ঐ দিন সাওম পালন করার আমরা বেশি হকদার। তারপর তিনি সবাইকে সাওম পালন করার নির্দেশ দিলেন।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৫১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৫৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯৪৩
حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ أَيُّوْبَ حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ حَدَّثَنَا أَبُوْ بِشْرٍ عَنْ سَعِيْدِ بْنِ جُبَيْرٍ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ لَمَّا قَدِمَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْمَدِيْنَةَ وَجَدَ الْيَهُوْدَ يَصُومُوْنَ عَاشُوْرَاءَ فَسُئِلُوْا عَنْ ذَلِكَ فَقَالُوْا هَذَا الْيَوْمُ الَّذِيْ أَظْفَرَ اللهُ فِيْهِ مُوْسَى وَبَنِيْ إِسْرَائِيْلَ عَلَى فِرْعَوْنَ وَنَحْنُ نَصُومُهُ تَعْظِيْمًا لَهُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم نَحْنُ أَوْلَى بِمُوْسَى مِنْكُمْ ثُمَّ أَمَرَ بِصَوْمِهِ
ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মদীনায় আসেন তখন দেখতে পেলেন ইয়াহূদীরা ‘আশুরা দিবসে সাওম পালন করে। তাদেরকে সাওম পালনের কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা বলল, এদিনই আল্লাহ্ তা’আলা মূসা (আঃ) ও বনী ইসরাঈলকে ফিরাউনের উপর বিজয় দিয়েছিলেন। তাই আমরা ঐ দিনের সম্মানে সাওম পালন করি। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাদের চেয়ে আমরা মূসা (আঃ)- এর বেশি নিকটবর্তী। এরপর তিনি সাওম পালনের নির্দেশ দিলেন।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৫২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৫৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯৪৪
حَدَّثَنَا عَبْدَانُ حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ عَنْ يُونُسَ عَنْ الزُّهْرِيِّ قَالَ أَخْبَرَنِيْ عُبَيْدُ اللهِ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُتْبَةَ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَسْدِلُ شَعْرَهُ وَكَانَ الْمُشْرِكُوْنَ يَفْرُقُوْنَ رُءُوْسَهُمْ وَكَانَ أَهْلُ الْكِتَابِ يَسْدِلُوْنَ رُءُوْسَهُمْ وَكَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يُحِبُّ مُوَافَقَةَ أَهْلِ الْكِتَابِ فِيْمَا لَمْ يُؤْمَرْ فِيْهِ بِشَيْءٍ ثُمَّ فَرَقَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم رَأْسَهُ
আবদুল্লাহ ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চুলে সিঁথি না কেটে সোজা পিছনে দিতেন। আর মুশরিকরা তাদের চুলে সিঁথি কাটত। আহলে কিতাব সিঁথি কাটত না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্র নিকট হতে কোন নির্দেশ না আসা পর্যন্ত আহলে কিতাবের অনুকরণ পছন্দ করতেন। তারপর (ওয়াহী মোতাবেক) তাঁর মাথায় সিঁথি কাটলেন।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৫৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৫৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯৪৫
حَدَّثَنِيْ زِيَادُ بْنُ أَيُّوْبَ حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ أَخْبَرَنَا أَبُوْ بِشْرٍ عَنْ سَعِيْدِ بْنِ جُبَيْرٍ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ هُمْ أَهْلُ الْكِتَابِ جَزَّءُوْهُ أَجْزَاءً فَآمَنُوْا بِبَعْضِهِ وَكَفَرُوْا بِبَعْضِهِ يَعْنِيْ قَوْلَ اللهِ تَعَالَى اَلَّذِيْنَ جَعَلُوا الْقُرْاٰنَ عِضِيْنَ (الحجر : 91)
ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এরাই তো সেই আহলে কিতাব যারা ভাগাভাগি করে ফেলেছে, কোন কোন বিষয়ের উপর ঈমান এনেছে আর কোন কোন বিষয়কে অস্বীকার করেছে। রাবী আল্লাহর এ বাণী বুঝাতে চেয়েছেন – “যারা কুরআনকে খণ্ড খণ্ড করেছে” (সূরাহ আল-হিজরঃ ৯১)
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৫৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৫৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৬৩/৫৩. অধ্যায়ঃ
সালমান ফারসী (রাঃ) – এর ইসলাম গ্রহণ।
৩৯৪৬
حَدَّثَنِي الْحَسَنُ بْنُ عُمَرَ بْنِ شَقِيْقٍ حَدَّثَنَا مُعْتَمِرٌ قَالَ أَبِيْ وَحَدَّثَنَا أَبُوْ عُثْمَانَ عَنْ سَلْمَانَ الْفَارِسِيِّ أَنَّهُ تَدَاوَلَهُ بِضْعَةَ عَشَرَ مِنْ رَبٍّ إِلَى رَبٍّ
সালমান ফারসী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি দশ জনেরও অধিক মালিকের অধীনে হাত বদল হতে থাকেন।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৫৫, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৫৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯৪৭
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يُوْسُفَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ عَوْفٍ عَنْ أَبِيْ عُثْمَانَ قَالَ سَمِعْتُ سَلْمَانَ يَقُوْلُ أَنَا مِنْ رَامَ هُرْمُزَ
আবূ ‘উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আবূ ‘উসমান (রাঃ) বলেন, আমি সালমান (রাঃ) – কে বলতে শুনেছি; তিনি বলেন, আমি রাম হুরমুয এর বাসিন্দা।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৫৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৫৯)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৩৯৪৮
حَدَّثَنِي الْحَسَنُ بْنُ مُدْرِكٍ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ حَمَّادٍ أَخْبَرَنَا أَبُوْ عَوَانَةَ عَنْ عَاصِمٍ الأَحْوَلِ عَنْ أَبِيْ عُثْمَانَ عَنْ سَلْمَانَ قَالَ فَتْرَةٌ بَيْنَ عِيْسَى وَمُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِمَا وَسَلَّمَ سِتُّ مِائَةِ سَنَةٍ
সালমান ফারসী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
সালমান ফারসী (রাঃ) বলেন, ‘ঈসা এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর মধ্যে ছয় শত বছরের পার্থক্য ছিল।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৫৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৬০)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস