বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে কুফর শব্দের অর্থ কি, কুফর কত প্রকার ও কি কি, কাফের কাকে বলে।
Table of Contents
Toggleকুফর শব্দের অর্থ কি
আরবী কুফর শব্দের শাব্দিক অর্থ অস্বীকার করা, গোপন করা, ঢেকে রাখা। পারিভাষিক অর্থে তাওহীদের কোন বিষয়কে অন্তরে অবিশ্বাস করা বা মুখে অস্বীকার করা বা কাজে অমান্য করা অর্থাৎ কোন বিষয়ে শিরককে অন্তরে বিশ্বাস করা বা মুখে স্বীকার করা বা কাজে বাস্তবায়ন করার নামই কুফর।
কুফর কত প্রকার
কুফুর প্রধানত দুই প্রকার। একটি হলো অন্তরের কুফর যা ঈমানের বিপরীত। অপরটি হলো প্রকাশ্য কুফর যা ইসলামের বিপরীত।
অন্তরের কুফর
অন্তরে যদি তাওহীদে পরিপূর্ণ বিশ্বাস থাকে এবং শিরকে পরিপূর্ণ অবিশ্বাস থাকে তবে তা ঈমান। আর যদি অন্তরে তাওহীদে পরিপূর্ণ বিশ্বাস না থাকে অর্থাৎ কোন শিরকে বিশ্বাস থাকে তবে তার নাম কুফর বা অন্তরের কুফর।
প্রকাশ্য কুফর
কথায় ও কাজে যদি তাওহীদের পরিপূর্ণ স্বীকৃতি ও বাস্তবায়ন থাকে এবং শিরকের পূর্ণ অস্বীকৃতি ও অবাস্তবায়ন থাকে তবে তা ইসলাম। আর যদি কথায় বা কাজে তাওহীদের পরিপূর্ণ স্বীকৃতি বা বাস্তবায়ন না থাকে অর্থাৎ কোন শিরকের স্বীকৃতি বা বাস্তবায়ন থাকে তবে তা কুফর বা প্রকাশ্য কুফর।
প্রকাশ্য কুফর দুই প্রকার। একটি হলো কথার কুফর আর অপরটি হলো কাজের কুফর।
কথার কুফর
কথায় যদি তাওহীদের পরিপূর্ণ স্বীকৃতি না থাকে অর্থাৎ কোন শিরকের স্বীকৃতি থাকে তবে তা কুফর বা কথার কুফর।
কাজের কুফর
কাজে যদি তাওহীদের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন না থাকে অর্থাৎ কোন শিরকের বাস্তবায়ন থাকে তবে তা কুফর বা কাজের কুফর।
কুফরের রূপ
কুফর দু্ই প্রকার হলেও এর রূপ তিনটি।
১. নিফাক
২. বাহ্যিক কুফর
৩. পরিপূর্ণ কুফর
নিফাক
যখন অন্তরে কুফরকে গোপন করে বাইরে ইসলাম পালন করা হয় তখন তাকে বলে নিফাক। সহজ ভাষায় যখন শুধু অন্তরের কুফর বিদ্যমান থাকে প্রকাশ্য কুফর বিদ্যমান থাকে না তখন তাকে বলে নিফাক।
বাহ্যিক কুফর
যখন শুধু প্রকাশ্য কুফর বিদ্যমান থাকে তখন তাকে বাহ্যিক কুফর বলে।
পরিপূর্ণ কুফর
যখন অন্তরের কুফর এবং প্রকাশ্য কুফর উভয়ই বিদ্যমান থাকে তখন তাকে পরিপূর্ণ কুফর বলে।
বাহ্যিক কুফর কত প্রকার ও কি কি
যেহেতু প্রকাশ্য কুফরই মূলত বাহ্যিক কুফর তাই প্রকাশ্য কুফরের মতো বাহ্যিক কুফর ও দুই প্রকার। যথাঃ
১. কথার কুফর
২. কাজের কুফর
কথার কুফর কি
কথায় যদি তাওহীদের পরিপূর্ণ স্বীকৃতি না থাকে অর্থাৎ কোন শিরকের স্বীকৃতি থাকে তবে তা কুফর বা কথার কুফর।
কাজের কুফর কি
কাজে যদি তাওহীদের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন না থাকে অর্থাৎ কোন শিরকের বাস্তবায়ন থাকে তবে তা কুফর বা কাজের কুফর।
বাহ্যিক কুফরের রূপ কয়টি ও কি কি
বাহ্যিক কুফর দুই প্রকার হলেও এর রূপ তিনটি। যথাঃ
১. শুধু কথার কুফর
২. শুধু কাজের কুফর
৩. পরিপূর্ণ বাহ্যিক কুফর
শুধু কথার কুফর
যখন শুধু কথায় কুফর বিদ্যমান থাকে অন্তরে বা কাজে কুফর বিদ্যমান থাকে না তখন তাকে শুধু কথার কুফর বলে।
শুধু কাজের কুফর
যখন শুধু কাজে কুফর বিদ্যমান থাকে অন্তরে বা কথায় কুফর বিদ্যমান থাকে না তখন তাকে শুধু কাজের কুফর বলে।
পরিপূর্ণ বাহ্যিক কুফর
যখন কথায় এবং কাজে উভয় ক্ষেত্রে কুফর বিদ্যমান থাকে তখন তাকে পরিপূর্ণ বাহ্যিক কুফর বলে।
কাফের কারা
যে ব্যক্তি তাওহীদের কোন বিষয়কে অন্তরে অবিশ্বাস করে বা মুখে অস্বীকার করে বা কাজে অবাস্তবায়ন করে অর্থাৎ কোন বিষয়ে শিরককে অন্তরে বিশ্বাস করে বা মুখে স্বীকার করে বা কাজে বাস্তবায়ন করে সেই কাফির। উল্লেখ্য যে, কোন ব্যক্তি কাজেকর্মে কোন বিষয় অমান্য করলে অর্থাৎ আল্লাহর কোন আদেশ বা ফরয বিধান পালন না করলে অথবা কোন নিষেধ বা হারাম কাজকে বর্জন না করলে কাফির হবে না যদি না তাতে শিরক হয়। তবে সালাত এর ব্যতিক্রম। যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত ত্যাগ করে তবে সে কাফির হয়ে যাবে।
সালাত ত্যাগ করা ছাড়া আল্লাহর অন্য কোন হুকুম অমান্য করলে ব্যক্তি ফাসিক হবে কাফির নয় যদি না তাতে শিরক হয়। শিরক করলে ব্যক্তি কাফির হয়ে যাবে এবং তাকে তওবা করতে হবে এবং নতুন করে কালিমা শাহাদাত পাঠ করতে হবে অর্থাৎ নতুন করে ইসলাম গ্রহণ করতে হবে।
কাফের কত প্রকার
কুফুরের রূপভেদে কাফির তিন প্রকার।
১. মুনাফিক
২. বাহ্যিক কাফির
৩. পরিপূর্ণ কাফির
মুনাফিক
যে অন্তরে কুফুরকে গোপন করে বাইরে ইসলাম পালন করে তাকে বলে মুনাফিক। সহজ ভাষায় যার মধ্যে শুধু অন্তরের কুফর বিদ্যমান থাকে প্রকাশ্য কুফর বিদ্যমান থাকে না তাকে বলে মুনাফিক।
বাহ্যিক কাফির
যার মধ্যে শুধু প্রকাশ্য কুফর বিদ্যমান থাকে তাকে বাহ্যিক কাফির বলে।
বাহ্যিক কাফের কত প্রকার
বাহ্যিক কুফরের রূপভেদে বাহ্যিক কাফের তিন প্রকার। যথাঃ
১. শুধু কথার কাফির
২. শুধু কাজের কাফির
৩. পরিপূর্ণ বাহ্যিক কাফের
শুধু কথার কাফের
যার মধ্যে শুধু কথার কুফর বিদ্যমান থাকে অন্তরের কুফর বা কাজের কুফর বিদ্যমান থাকে না তাকে শুধু কথার কাফের বলে।
শুধু কাজের কাফের
যার মধ্যে শুধু কাজের কুফর বিদ্যমান থাকে অন্তরের কুফর বা কথার কুফর বিদ্যমান থাকে না তাকে শুধু কাজের কাফের বলে।
পরিপূর্ণ বাহ্যিক কাফের
যার মধ্যে কথার কুফর এবং কাজের কুফর উভয়ই বিদ্যমান থাকে তাকে পরিপূর্ণ বাহ্যিক কাফির বলে।
পরিপূর্ণ কাফির
যার মধ্যে অন্তরের কুফর এবং প্রকাশ্য কুফর উভয়ই বিদ্যমান থাকে তাকে পরিপূর্ণ কাফির বলে।
পরিপূর্ণ কাফির কত প্রকার
পরিপূর্ণ কাফির দুই প্রকার। যথাঃ
১. স্পষ্ট কাফির
২. অস্পষ্ট কাফির
স্পষ্ট কাফের
যার কাফির হওয়াটা স্পষ্ট অর্থাৎ যে নিজেকে মুসলিম মনে করে না, নিজেকে মুসলিম দাবী করে না এবং মুসলিম হিসাবে পরিচিত নয়, অমুসলিম অর্থাৎ কাফির হিসাবে পরিচিত সেই স্পষ্ট কাফির।এক কথায় অমুসলিমরাই স্পষ্ট কাফির।
অস্পষ্ট কাফের
যার কাফির হওয়াটা অস্পষ্ট অর্থাৎ যে নিজেকে মুসলিম মনে করে, নিজেকে মুসলিম দাবী করে এবং মুসলিম হিসাবে পরিচিত, অমুসলিম বা কাফির হিসাবে পরিচিত নয় অথচ মূলত সে কাফির এমন ব্যক্তিই হচ্ছে অস্পষ্ট কাফির। এক কথায় মুসলিমদের মধ্যে যার ভেতরে কুফর বিদ্যমান সেই অস্পষ্ট কাফির।
জানা-বুঝার উপর ভিত্তি করে কাফির দুই প্রকার।
১. জ্ঞানসম্পন্ন কাফির
২. অজ্ঞ কাফির
জ্ঞানসম্পন্ন কাফির
যে ব্যক্তি জেনে-বুঝে কুফুর করল সে জ্ঞানসম্পন্ন কাফির।
অজ্ঞ কাফির
যে ব্যক্তি না জেনে-বুঝে অর্থাৎ অজ্ঞতাবশত কুফুর করল সে অজ্ঞ কাফির।