বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে দাজ্জালের আগমন সুনিশ্চিত।
দাজ্জালের আগমন
তামিম দারি (রা) এবং তার সঙ্গীদ্বয় যখন দাজ্জালের সাথে সাক্ষাৎ করেছিল তখন দাজ্জাল তিনটি বিষয়ে প্রশ্ন করেছিল। তার একটি হচ্ছে বাইছানের খেজুর বাগানে খেজুর ধরে কিনা তারা বলেছিল হ্যাঁ খেজুর ধরে। তখন দাজ্জাল বলেছিল অচিরেই সেখানে খেজুর ধরবে না। তার আরেকটি প্রশ্ন ছিল বুহায়রা তাবারিয়া বিলে পানি আছে কিনা এবং থাকলে সেখানকার লোকেরা সেই পানি দিয়ে চাষাবাদ করে কিনা। উত্তরে তারা বলেছিল, হ্যা সেখানে পানি আছে এবং তা দিয়ে লোকেরা চাষাবাদ করে। তখন দাজ্জাল বলেছিল অচিরেই সেখানে পানি থাকবে না। তারপর দাজ্জাল প্রশ্ন করেছিল যুগার ঝর্ণাতে পানি আছে কিনা। তারা উত্তরে বলেছিল হ্যা পানি আছে। তখন দাজ্জাল বলেছিল, অচিরেই সেখানেও পানি থাকবে না।
তারপর দাজ্জাল রাসুল (স) সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিল। এরপর সে বলেছিল যে, সে অচিরেই এই বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে এবং সে সারা পৃথিবীতে বিচরণ করবে শুধুমাত্র মক্কা ও মদীনা ছাড়া। তার এই কথাগুলো থেকে বুঝা যায় যে, ঐ তিনটে বিষয়ের অবস্থার পরিবর্তনের সাথে তার মুক্তি পাওয়ার একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এটা স্পষ্ট বুঝা যায় না যে, ঐ তিনটি বিষয়ের অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথেই সে মুক্তি পাবে কিনা তবে এতটুকু বুঝা যায় যে, ঐ তিনটি বিষয়ের অবস্থার পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত সে মুক্তি পাবে না।
আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি
ঐ তিনটি এলাকাই ইহুদিরা দখল করে নিয়েছে। এবং বাইছানে আজ কোন খেজুর বাগান অবশিষ্ট নেই। আর যে বিলের কথা বলা হয়েছে সেখানে পানি প্রবেশের রাস্তা ইহুদিরা বন্ধ করে দিয়েছে। পানি তারা মরুভূমিতে ঢেলে অপচয় করছে অথচ সেই বিলে পানি প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। তাই দিন দিন সেই বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। আর যুগার ঝর্ণাটাও ইহুদিদের দখলে, হয়তো অচিরেই সেখানেও পানি থাকবে না।
কিন্তু এখানে বুঝার বিষয় যে,
ইহুদিরা কেন এই বিষয়গুলো নিয়ে এতো ব্যস্ত, পৃথিবীর এতো জায়গা রেখে এই তিনটি জায়গা কেন দখল করল। আর এই তিনটি বিষয়ের অবস্থার পরিবর্তন করা নিয়ে তারা কেন এতো মরিয়া হয়ে উঠেছে। আসলে তারা হচ্ছে দাজ্জালের প্রধান অনুসারী। তারা দাজ্জালকে প্রভু হিসাবে মানে। এবং তারা অপেক্ষায় আছে দাজ্জালের আগমনের। তারা আশা করে দাজ্জালের নেতৃত্বে তারা সারা বিশ্বকে জয় করবে কিন্তু তাদের এই আশা কোনো দিনই পূরণ হবে না ইনশাআল্লাহ। কিন্তু দাজ্জাল আসবে, তাদেরকে নেতৃত্ব দিবে, সারা পৃথিবীতে ফিৎনা ফাসাদ সৃষ্টি করবে এ কথা সত্য।
হয়তো ইহুদিরা দাজ্জালের পরামর্শ মতোই এই কাজগুলো করছে। হাদিসে বর্ণিত আছে দাজ্জাল পূর্বদিকের কোন একটা দ্বীপে বন্দী আছে। আজকের এই অত্যাধুনিক টেকনোলজির যুগে ইহুদিদের জন্য সেই দ্বীপ খুজে বের করা দাজ্জালের সাথে সাক্ষাৎ করা খুব কঠিন কাজ নয়। এটা হতে পারে ইহুদিরা দাজ্জালের সাথে সাক্ষাৎ করে এবং তার পরামর্শ মতে কাজ করে। শুধু ঐ তিনটি বিষয়ের অবস্থার পরিবর্তন করা নয় তারা সারা পৃথিবীতে সমস্ত ক্ষেত্রে দাজ্জালের ষড়যন্ত্রের বিস্তার ঘটিয়েছে।
দাজ্জালের যেসমস্ত ক্ষমতাগুলো থাকবে যা হাদিসে বর্ণিত আছে, সেগুলো সে আত্মপ্রকাশ করার পরে অর্জন করবে বিষয়টা এমন মনে হয় না। কারন হাদিসে আছে সে আত্মপ্রকাশ করবে এবং সারা পৃথিবীতে বিচরণ করবে এবং তার এই এই ক্ষমতা থাকবে। এ থেকে বুঝা যায় সে ক্ষমতা অর্জন করে তারপর আত্মপ্রকাশ করবে। এবং সেই ক্ষমতাবলে মানুষকে বিভ্রান্ত করবে, তার গোলামে পরিণত করবে। ইহুদিরা সেই ক্ষমতা অর্জনের জন্য প্রাণপনে কাজ করে যাচ্ছে। আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, ঐ তিনটি বিষয়ের অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে চলেছে। অনেকটা ঘটে গেছে আর কিছুটা বাকি আছে। তাই মনে হচ্ছে যেন দাজ্জালের আগমন অতি নিকটেই।
হে মুসলিম জাতি!
সাবধান ও সতর্ক হয়ে যান। দাজ্জালের ফেতনা এক মহা ভয়াবহ ফেতনা; এই ফেতনা থেকে বাঁচা খুবই মুশকিল। রাসুল (স) বলেছেন, আমি তোমাদের মাঝে দাজ্জাল সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণনা করেছি; তারপরও আমার মনে হয় তোমরা দাজ্জালকে চিনতে পারবে না। অতএব ঈমানকে দৃঢ় করুন; দৃঢ় ঈমানের অধিকারীদেরকেই আল্লাহ সাহায্য করবেন দাজ্জালের মোকাবিলায়; আর যারা মুনাফিক বা দুর্বল ঈমানের অধিকারী অর্থাৎ যাদের অন্তরে সামান্য হলেও নিফাক আছে তারা সহজেই দাজ্জালের অনুসারী হয়ে যাবে; তার ফিতনায় বিভ্রান্ত হয়ে যাবে। তাই এখনই সময় ঈমানকে দৃঢ় করতে হবে; বিশেষ করে আল্লাহর একত্ববাদকে পরিপূর্ণভাবে মেনে চলতে হবে।
রাসুল (স) বলেছেন,
দাজ্জাল তখনই আত্মপ্রকাশ করবে যখন মসজিদের মিম্বার হতে দাজ্জালের আলোচনা বন্ধ হয়ে যাবে; আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, ইমামগন, খতিবগণ দাজ্জালের আলোচনা যেন বন্ধই করে দিয়েছেন; তারা যেন দাজ্জালের কথা ভুলেই গেছেন; তাই আমি তাদেরকে আহবান করতে চাই যে, তারা যেন প্রতিনিয়ত জুম্মার খুতবায় দাজ্জালের ফেতনা সম্পর্কে মানুষকে সাবধান ও সতর্ক করেন; শুধু আলেমদেরকে নয় সাধারণ মানুষকেও বলছি আপনারা দাজ্জালের ফিতনা সম্পর্কে মানুষকে জানাবেন যারা জানে না তাদেরকে; শুধু এই ব্যাপারে নয় দ্বীনের যেকোন ব্যাপারে আপনি যা জানেন তা অন্যকে জানাবেন; এটা আপনার ঈমানি দায়িত্ব। রাসুল (স) বলেছেন, আমার একটি কথা জানা থাকলেও তা বলে দাও; অতএব আপনি যা জানেন তা অন্যকে জানাবেন এটা আপনার দায়িত্ব।
আল্লাহ তুমি আমাদেরকে বিষয়গুলো বুঝার ও মেনে চলার তাওফীক দান করো এবং আমাদেরকে দাজ্জালের ফিতনা থেকে হেফাযত করো। আল্লাহুম্মা আমিন।